ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশের মদতেই `সাদা` হচ্ছে `কালো টাকা`
নিমেষে সাদা হচ্ছে কালো টাকা। এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত। চক্ষু চড়কগাছ ED অফিসারদের। কী করে কাজ করছে গোটা নেটওয়ার্ক? আয়কর বিভাগের রাডারে ছিল একাধিক ব্যাঙ্কের লেনদেন। সন্দেহজনক এমনই বেশকিছু লেনদেনের তথ্য ইডিকে দেয় আয়কর বিভাগ। আর তা নিয়ে তদন্ত শুরু করতেই চক্ষু চড়কগাছ ইডি অফিসারদের।
ওয়েব ডেস্ক : নিমেষে সাদা হচ্ছে কালো টাকা। এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত। চক্ষু চড়কগাছ ED অফিসারদের। কী করে কাজ করছে গোটা নেটওয়ার্ক? আয়কর বিভাগের রাডারে ছিল একাধিক ব্যাঙ্কের লেনদেন। সন্দেহজনক এমনই বেশকিছু লেনদেনের তথ্য ইডিকে দেয় আয়কর বিভাগ। আর তা নিয়ে তদন্ত শুরু করতেই চক্ষু চড়কগাছ ইডি অফিসারদের।
হাওয়ালা কারবারিরা ব্যাঙ্কের চ্যানেল ব্যবহার করে কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা করছেন। বেশকিছুদিন ধরেই অভিযোগটা উঠছিল। তদন্ত শুরু হতে বোঝা গেল ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশের সরাসরি মদতেই চলছে কালো টাকাকে সাদা করার কারবার। কালো টাকাকে সাদা করার হাতিয়ার মূলত তিনটে- অব্যবহৃত অ্যাকাউন্ট, জনধন অ্যাকাউন্ট, ভুয়ো কোম্পানি অ্যাকাউন্ট। কীভাবে কাজ করে গোটা নেটওয়ার্ক?
হাতিয়ার ১, অব্যবহৃত অ্যাকাউন্ট
কালো টাকার কারবারীদের প্রথম টার্গেট অব্যবহৃত অ্যাকাউন্ট। দীর্ঘদিন লেনদেন হয়নি এমন অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করছেন ব্যাঙ্কের উচ্চ পদস্থ কর্মীরা। কর্মীদের মাধ্যমেই মোটা অঙ্কের কালো টাকা এসব অ্যাকাউন্টে জমা করছেন কালো টাকার কারবারীরা। জমা পড়ার পরই দ্রুত সেই টাকা ছোট ছোট অংশে ভাগ হয়ে ঢুকে যাচ্ছে অন্য অ্যাকাউন্টে। গোটা প্রক্রিয়াই চলছে অনলাইন অ্যাকাউন্ট টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের মাধ্যমে। পরের ধাপে সেই টাকা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে অন্য বেনামি অ্যাকাউন্টে। বেনামি অ্যাকাউন্টে টাকা পড়া মাত্রই তা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
হাতিয়ার ২, জনধন অ্যাকাউন্ট
জনধনের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার কারবার চলছে। জনধন অ্যাকাউন্টের তথ্য চলে যাচ্ছে কালো টাকার কারবারিদের হাতে। কার নামে অ্যাকাউন্ট, কত টাকা জমা করা যাবে সেসব তথ্য পাচার করছেন ব্যাঙ্কের এক শ্রেণির কর্মী। সেই তথ্য অনুযায়ী বিশাল অঙ্কের কালো টাকা ঢুকছে জনধন অ্যাকাউন্টগুলিতে। পরে সেই টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
হাতিয়ার ৩, ভুয়ো কোম্পানি অ্যাকাউন্ট
কলকাতায় ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সেল কোম্পানির অস্তিত্ব সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করছিল আয়কর ও ED। কালো টাকাকে সাদা করতে এসব কোম্পানির অ্যাকাউন্টকে ব্যবহার করছে কারবারীরা। ব্যবসায়িক অস্তিত্বহীন এমন একেকটি কোম্পানির কমপক্ষে ২৫-২৫টি অ্যাকাউন্ট সক্রিয়। সহযোগী কোম্পানি মিলিয়ে মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কয়েকশো। নোট বাতিলের পর থেকে এমন বেশকিছু অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে।
ব্যাঙ্কের যোগসাজশ সামনে আসতেই মঙ্গলবার ছটি জায়গায় হানা দেয় ED। অ্যাক্সিসে হানা ED-র। নোট বাতিলের পর ১২ নভেম্বর অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের বড় বাজার শাখায় একলপ্তে ৩ কোটি টাকা জমা পড়ে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ভাগ হয়ে চলে যায় ১৮টি অ্যাকাউন্টে। RBI-এর নির্দেশ, নোট বাতিলের পর কোনও অ্যাকাউন্টে ৪লক্ষ টাকার বেশি জমা পড়লে, RBI কে জানাতে হবে। কিন্তু, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক এমন কোনও রিপোর্ট RBIকে জমা দেয়নি। একই রকম বেনিয়মের হদিশ মিলেছে নদিয়ার একটি NGO-র অ্যাকাউন্টেও। ভুয়ো লেনদেনের সূত্র ধরেই বুধবার কানাড়া ব্যাঙ্কেও হানা দেয় ED। নজরে এসেছে একাধিক সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট। বহু লেনদেনের ক্ষেত্রেই তথ্য গোপন করেছে ব্যাঙ্ক।
আরও পড়ুন, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে রাশ টানতেই রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক