`আর কয়েকদিন এ অবস্থা চললেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন`, হুঁশিয়ারি দিলেন রাহুল
আগামী ২৩ ডিসেম্বর শান্তি মিছিলের ডাক দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির পক্ষ থেকে আবেদন, `আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োজনে প্রয়োগ করুন। তবে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করুন।`
নিজস্ব প্রতিবেদন : পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন রাহুল সিনহা। রাজ্যে তৃণমূল সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই বিদায় নিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এদিন রাহুল বলেন, "আমরা নির্বাচিত সরকারকে ফেলতে চাই না। কিন্তু এই অগ্নিগর্ভ অবস্থা যদি আর কয়েকদিন চলে, তবে রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া উপায় নেই। ২০২০ শুরুতেই বিদায় নিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।"
উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল থেকেই হিংসার ঘটনা ঘটছে। মুর্শিদাবাদের লালগোলা ও কৃষ্ণপুরে আজ ৪টি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ট্রেনচালক ও রেলকর্মী। হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা। এই অবস্থার প্রতিবাদে পাল্টা মিছিলের ডাক দিয়েছে বিজেপি। আগামী ২৩ ডিসেম্বর শান্তি মিছিলের ডাক দিয়েছে গেরুয়া শিবির। ২ জায়গা থেকে এই মিছিল বের হবে। একইসঙ্গে বিজেপির পক্ষ থেকে এক আবেদন বার্তায় বলা হয়েছে, "আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োজনে প্রয়োগ করুন। তবে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করুন।"
আইন হাতে তুলে না নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। আইন হাতে তুলে নিলে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সকালের পর ফের সন্ধ্যায় আরও একবার রাজ্যবাসীর উদ্দেশে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। আবেদন বার্তায় বলা হয়েছে, "সকল রাজ্যবাসীর কাছে আমি আবার অনুরোধ করছি যে কোনভাবেই কোন রকম হিংসাত্মক কাজকর্মে লিপ্ত হবেন না এবং রাজ্যজুড়ে সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখুন। মনে রাখবেন পুলিশ থানা, রেল স্টেশন, বিমানবন্দর, পোস্ট অফিস, সরকারি দপ্তর, পরিবহন ব্যবস্থা এ সকলই হল জনগনের সম্পত্তি। সরকারি এবং বেসরকারি, যে কোন ধরণের সম্পত্তির কোনরকম ক্ষতি হলে তা রাজ্য সরকার কোনমতেই বরদাস্ত করবে না এবং আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাজ্য সরকার একদিকে যেমন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে, পাশাপাশি রাজ্য সরকার সমস্ত রকম দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং শান্তি নষ্ট করার যাবতীয় প্রচেষ্টারও ঘোর বিরোধী। আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং এনআরসির বিরুদ্ধে যাবতীয় বিরোধিতা করতে চাই কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে। কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে রাজ্যজুড়ে অশান্তির আবহ ও দাঙ্গা তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমি সকলকে অনুরোধ করছি তাদের এই অসাধু উদ্দেশ্যে কর্ণপাত না করতে। সকল রাজ্যবাসীর কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ যে সবাই শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রাখুন।"
আরও পড়ুন, মা-মেয়ে দুজনের সঙ্গেই 'ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক' প্রেমিক সৌরভের, গড়িয়াহাট খুনের তদন্তে নয়া মোড়
এদিকে, তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতাতেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতি বলে কটাক্ষ করেছে রাজ্য বিজেপি। এদিন রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে একটি টুইট করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, "পশ্চিমবঙ্গ জ্বলছে আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাশ্মীর নিয়ে চিন্তিত। পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় যে তাণ্ডব চলছে তাকে ছাড়া, তাঁর আর সব বিষয় নিয়ে টুইট করার সময় রয়েছে। নিরোও এটা দেখে অনুপ্রাণিত হবেন!" প্রসঙ্গত, এদিন সন্ধ্যায় জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লার গৃহবন্দি দশার মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনই জনসুরক্ষা আইনের আওতায় ফারুখ আবদুল্লার গৃহবন্দি দশার মেয়াদ ৩ মাস বাড়ানো হয়। সেই প্রসঙ্গেই টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, "এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে এঘটনা ঘটছে। এটা অসাংবিধানিক।"