ভিড়, বিকল্প জোটের বার্তা সবই থাকল ব্রিগেডে, নেই শুধু জনতার `নেতা`
মনেপ্রাণে ব্রিগেডে যেতেই চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, চিকিৎসকদের অনুমতি মেলেনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আসছেন না, গতকালই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তবুও বামেদের ব্রিগেড হচ্ছে অথচ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নেই (Buddhadeb Bhattacharya)! এটা মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে বাম-জনতার। তবে না থেকেও প্রবলভাবে আছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
সুকান্ত ভট্টাচার্য 'বিক্ষোভ' কবিতার শেষ দুটি লাইনে লিখেছিলেন,'ইতিহাস! নেই অমরত্বের লোভ, আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ।' ব্রিগেডে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও (Buddhadeb Bhattacharya) রেখে গিয়েছেন তেমনই এক দলিল। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দৃঢ়কণ্ঠে এই ব্রিগেডেই তিনি বলেছিলেন, 'এ লড়াই লড়তে হবে। এ লড়াই জিততে হবে।' ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতেও ব্রিগেডে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya)। কাঁচ তোলা গাড়ির মধ্যে অক্সিজেনের নল লাগিয়েই দেখেছিলেন ব্রিগেডের জন-উচ্ছ্বাস। নামেননি। তবু ব্রিগেডে তো ছিলেন। কিন্তু, এবার তা-ও হল না।
সকাল থেকে লাল ঝান্ডার মিছিল দিকে দিকে। সব ব্রিগেডমুখী। দলে দলে পথে বামেদের কর্মী-সমর্থকেরা। উঠছে স্লোগান।তবু ক্যামেরা যেন বারবারই ঘুরে গিয়েছে এই বাড়িটির দিকে। ৫৯ এ পাম অ্যাভিনিউ। চারদিক শূন্য। নিস্তব্ধ। সামনে দাঁড়িয়ে এই সাদা অ্যাম্বাসাডর। একটি দরজা হাট করে খোলা। যেন কারও ওঠার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। যে কোনও মুহূর্তে যেন তিনি বেরিয়ে আসবেন!কিন্তু নাহ! এবার হল না। যেতে পারলেন না ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। মানা করেছেন চিকিৎসকরা।
মনেপ্রাণে ব্রিগেডে যেতেই চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। লিখিতবার্তায় সেই যন্ত্রণার কথা বলেওছিলেন। গতকাল বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন,'ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বিভিন্নভাবে খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। শুনে বুঝতে পারছি বহু মানুষ সমাবেশে আসবেন এবং অনেকে এসে গেছেন। বড় সমাবেশ হবে। এরকম একটা বড় সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন আর আমি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মেনে চলেছি। ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দি যা কোনওদিন কল্পনাও করতে পারিনি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।'
আরও পড়ুন- নেটচর্চা থেকে জনতার গর্জন- বাম ব্রিগেডের মধ্যমণি 'ভাইজান'ই
নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কাছে এখনও আইডল তিনিই। জন-নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাম রাজনীতির লোক হয়েও রাজ্যে শিল্পায়ন নিয়ে ভেবেছিলেন। বাংলার যুবকদের কর্মসংস্থানের দিশা দেখাতে চেয়েছিলেন। ব্রিগেডে আসা তরুণ-তরুণীরা কেউ বলছেন, 'বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হৃদয়ে রয়েছেন।' কেউ বলছেন, 'ওঁর স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।' কেউ বলছেন,'উনি থাকলে বাংলা থেকে টাটা ন্যানোর বিদায় হতো না।' শিল্পায়ন নিয়ে যখন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলছেন, তখন যেন স্মৃতিতে চলে আসছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই উক্তি,'বাংলার ছেলেমেয়েদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।'
ছাত্র রাজনীতি থেকে বিধায়ক। এরপর জ্যোতি বসু জমানায় ধীরে ধীরে রাজ্য রাজনীতির প্রথম সারিতে উঠে আসা। মন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী। লম্বা পথ। তাঁর দৃপ্ত কন্ঠ বরাবর আগুন ঝরিয়েছে। তাঁর ভাষণে প্রাণ পেয়েছে লাল ঝান্ডার লড়াই। ব্রিগেডে বরাবর তিনি থেকেছেন মূল বক্তার ভূমিকায়। সেই ব্রিগেড এবার বুদ্ধহীন। মিছিল হল। সভা হল। সবই হল। কিন্তু তবু কোথাও যেন রয়েই গেল ফাঁক!
আরও পড়ুন- বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হলে BJP-র সঙ্গে সমঝোতা করবেন Mamata: Yechury