সৌরভ পাল 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সিনেমার ইতিবৃত্তের দিকে ফিরে তাকালাম। একটা স্তব্ধ থেমে থাকা অবস্থানে ছবি কীভাবে চলতে শুরু করল? টুকরো টুকরো ছবি একসঙ্গে হাত ধরে চলতে শুরু করল কবে? কলকারাখানার গেট থেকে বেড়িয়ে আসছে শ্রমিক। পিল পিল করা কালো মাথা, প্রথম ধরা পড়ল ক্যামেরায়, তারপর সাদা কালো রূপে আত্মপ্রকাশ করল দুনিয়ার চোখে। সেটাই ছিল শুরু। লুমিয়র ব্রাদার্স। 


অগাস্ট লুমিয়র আর লুই লুমিয়ার প্রথম দেখালেন সিনেমা আসলে কী! একটা ঘটনার বহমান অবস্থান। তথ্যচিত্রের পথ দিয়েই সিনেমা পেয়েছে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ভবিষ্যৎ। সময় এগিয়েছে, ভাষার বদল করেছে সিনেমা। কাল্পনিক আর অকাল্পনিকতার মেলবন্ধনে সিনেমা এখন মহাজাগতিক। ভারতের সিনেমার বয়সও তো প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে উঠেছে। যত বয়স বেড়েছে সিনেমাও তত রোমাঞ্চ পেয়েছে। ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা বড় বড় ভাবনায় বড় পর্দায় এসেছে। পুরষ্কারের বহর বেড়েছে। বিবর্তনের রাস্তায় নেমে অনেকে পথ হারিয়েছেন আবার অনেকে নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন। এক নদী থেকেই সৃষ্টি হয়েছে শাখা নদীর, ভাবনার সৃষ্টি। বড় ভাবনাও রিল বন্দি হয়েছে ছোট সময়ে। ছোট ছবি। 


ভাবনার নদী আবার ফিরে যাচ্ছে সেই ক্ষুদ্র বিন্দুতে। লক্ষ্য একটাই সিন্ধু লাভ। অত টাকা কোথায় বড় সিনেমা করার? ওত মানুষ কোথায় পাওয়া যাবে? এসব প্রশ্নে যাঁরা আবদ্ধ থাকেননি, তাঁরাই আবার অতীত অধ্যায়ের দিকে মুখ ফিরিয়েছেন ভাবনার বিসর্জন নয়, বড় ভাবনাকেই ছোট আকারে মেলে ধরার মেলা। ছোট ছবির মেলা। নন্দন থ্রি-র ছোট্ট স্ক্রিনে, 'দ্য ডার্ক রে', 'শকুন্তলা আজকে', 'হা-বা-ব'-এই তিন সিনেমা নিয়েই স্বল্প সময়ের বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। অশোক বিশ্বনাথন, সমীর ব্রহ্মচারীর মত বিশিষ্ট মানুষ সাক্ষী রইলেন এই মেলার। সঙ্গে অডিও সিডি'র রিলিজ। আর এই গোটা কর্মকাণ্ডের আয়োজক ছিলেন শম্পা বটব্যাল এবং শাশ্বতী বসু রায়। নিবেদিত প্রাণ অবশ্যই 'কৃষ্টি ক্রিয়েশন'। 


গৌরচন্দ্রিকায় উপসংহার টেনে এবার একেবারে হৃদয়ে প্রবেশ করা যাক। যাদের নিয়ে মেলা, হোক তাদের কথাই। সিনেমা। ছোট্ট ছবিগুলো কত বড় ভাবনা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল তা না বললে মেলার রসবোধ আর আকর্ষণটাই হারিয়ে যায়। 


'দ্য ডার্ক রে'
একটা ফুটফুটে ফুলের অকালে ঝরে যাওয়ার গল্প। এক অন্ধ মেয়ের 'বেশ্যা'য় পরিণত হওয়ার গল্প। পৃথিবীতে আসার প্রথম মুহূর্ত থেকেই পৃথিবী আর মায়ের গর্ভ ওর কাছে এক। কালো। গভীর অন্ধকার। তবে মায়ের গর্ভের নিরপত্তার বাঁধন অল্প অল্প করে ছিড়ে যাওয়া। বয়স বাড়তেই ওর শরীরে নজর পড়েছে 'সমাজের'। শেষ পর্যন্ত বিছানায় অনিচ্ছার কাছে হেরে যাওয়া। ও একটা উদাহরণ মাত্র। গোটা দেশ জুড়ে বিক্রি হওয়া, ভ্রূণের মধ্যেই মৃত্যুর প্রাপ্তি হওয়া অনেক ছোট্ট কুড়িদের গল্পই এই 'দ্য ডার্ক রে'।     


'শকুন্তলা আজকে' 
পৌরাণিক শকুন্তলার গল্পের অবলম্বনে আজকের শকুন্তলার বর্ণনায়ন। সেই আংটি। আংটি হারিয়ে যাওয়া, প্রেমিকের বঞ্চনা আর শেষে 'হ্যাপি এন্ডিং'। সাদামাটা গল্পের চরম পরিণতি। জীবনে ধৈর্যের পরীক্ষা। গর্ভে যাঁর সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্চা চলছে সেই চিনতে পারে না প্রেমিকাকে, নিজের সন্তানের গর্ভধারিনিকে। মৃত্যুর পথ নাকি অপেক্ষা? অপেক্ষার জয়। বর্তমান থেকে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধের শিক্ষায় 'শকুন্তলা আজকে' অবশ্যই একটা ভিন্ন রকমের অধ্যায়। 


'হা-বা-ব'
কথায় আছে, যাঁর শেষ ভালো তাঁর সব ভালো। হলও তাই। সিনেমার নাম 'হা-বা-ব'। কেমন একটা অদ্ভুত নাম! আসলে এই অদ্ভুত নামেই রয়েছে আসল রসবোধ। 'হাত' থেকে 'হা' 'বাড়ালেই' থেকে 'বা' আর 'বন্ধু' থেকে 'ব'- এই তিনের ছোট্ট সংস্করণ হল 'হা-বা-ব'। 'হাত বাড়ালেই বন্ধু', বর্তমানের 'বন্ধুহারা' যুগে এই গল্প সমকামের বন্ধুত্ব নিয়ে। হ্যাঁ। সমকামী বন্ধুত্ব। আর বন্ধুত্বের মধ্যেই প্রেম। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের পরিচালনা। আরে, না না, বাংলার 'প্রাক্তন' মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলছি না। বাংলা ব্যান্ড 'ক্যাকটাস'-এর ভোকালিস্ট সিধু। গানে, স্ক্রিপ্টে একেবারে ২০ মিনিটের টান টান উত্তেজনা। দুই পুরুষ আর দুই নারীর একে অপরের প্রতি প্রেম, বন্ধুত্বের বটবৃক্ষ গড়েছেন পরিচালক সিধু।