`কাটমানি` রোগের শুরু বাম আমলে, বলে আলিমুদ্দিনের চক্ষুশূল হলেন কান্তি
একের পর এক সিপিএম নেতার এহেন বিতর্কিত মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তিতে বাম শিবির।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের পর এবার কাটমানি ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রকাশ্যেই দাবি করলেন, “বাম আমলেই পঞ্চায়েত স্তরে বাসা বেঁধেছিল কাটমানি রোগ। আর এই দুর্নীতি রুখতে ব্যর্থ হয়েছিল দল।” একের পর এক সিপিএম নেতার এহেন বিতর্কিত মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তিতে বাম শিবির।
মুখ রক্ষায় ময়দানে নামেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী। ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করে পালটা বর্ষীয়ান নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কেই বাক্যবাণে বিদ্ধ করেন তিনি। বলেই ফেললেন, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় নাকি তাঁর দলের নিয়ম কানুন বুঝতেই পারেননি। বিরোধীদের তাই পাল্টা কটাক্ষ, চোখের মণি নাকি এখন চক্ষুশূল।
কাটমানি ইস্যুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বারবার সুর চড়াচ্ছে সিপিএম নেতৃত্ব। শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একটি আন্দোলনেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। অথচ, সেই দলেরই বর্ষীয়ান নেতার মুখে উল্টো সুর। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বোমা ফাটিয়ে বলেন, “তৃণমূল নয়, কাটমানির জন্ম বাম আমলেই। ” তাঁর আরও অভিযোগ, দলকে তিনি একথা একাধিকবার জানিয়েছিলেন, কিন্তু লাভ হয়নি। নেতাদের দূরদর্শিতার অভাব বারবার ধরা পড়েছে বলেও তির ছোড়েন তিনি।
২০০৮ সালের পর থেকে পঞ্চায়েত স্তরে বেশিরভাগ নেতাই এই দোষে দুষ্ট বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিন মাস আগেই আলিমুদ্দিনে চিঠি লিখে আর রাজ্যকমিটির আমন্ত্রিত সদস্য থাকতে চান না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। নিজের বই 'আত্মকহন আত্মদহন'-এও লিখেছেন বেশ কিছু কথা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তাঁর এহেন মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই সিপিএমকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
সিপিএমে 'বাগাবত কি বু' পেয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সমঝে মন্তব্য করতে নির্দেশ দেয় রাজ্য কমিটি। দিন কয়েক আগে রাজ্যকমিটির বৈঠকে দলীয় নেতাদের সংবাদমাধ্যমের সামনে সাবধানী হতে বলা হয়। সেই সাবধানবাণীর পর কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য প্ররোচনামূলক বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন।
বড়বাজারের দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুকুল রায়কে নোটিস কলকাতা পুলিসের
পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই তড়ঘড়ি ময়দানে নেমে পড়েন সুজন চক্রবর্তী। জি ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধিকে তিনি জানান, “দলের অভ্যন্তরে এসব নিয়ে কথা বলার সুয়োগ রয়েছে। তাই বাইরে বলার প্রয়োজন পড়ে না।” শুধু তাই নয়, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তাঁর খোঁচা, “যদি কেউ বাইরে কথা বলে থাকেন, তাহলে তিনি তাঁর দল ও দলের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝতেই পারেননি। শিক্ষা তো প্রতি মুহূর্তে আপডেটেড হয়, কেউ কোনও কারণে হয়তো পারলেন না।”
২০১১ সালে রায়দিঘি থেকে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের হারের পর তাঁর জনসেবক ভাবমূর্তি নিয়ে প্রচারে নেমেছিল সিপিএম। পরাজয়ের পরেও আপদে - বিপদে কী ভাবে তিনি সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন তা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরতেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। সেই কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাতেই এখন চরম অস্বস্তিতে দল। যা শুনে অনেকে বলছেন, 'চোখের মণিই এখন চক্ষুশূল'।