Manmohan Singh: নীরব বিপ্লব ঠিক কেমন, এক জীবনে করে দেখিয়েছেন মনমোহন!
Manmohan Singh forthright Finance Minister: ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ হিসেবেই এদেশের রাজনীতিতে মনমোহনের আর্বিভাব হলেও তিনি প্রমাণ করেন আদতেই তিনি অ্য়াক্সিডেন্ট নন। ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করার স্থপতি যিনি, রেকর্ড সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার কারিগর...
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বছর শেষে বিষাদ। চলে গেলেন সম্ভবত ভারতের শেষ ভদ্র, শিক্ষিত, নম্র রাজনীতিবিদ। যাঁর হাত ধরে অর্থনৈতিক ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়েছিল ভারত। তিনি মনমোহন সিং, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব বাজারে ভারতের জায়গা করেছিলেন, কেবল মুক্ত অর্থনীতি নয়, প্রকৃতই মুক্তমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আশ্চর্যের বিষয়, এমন এক প্রধানমন্ত্রী যিনি অপরপক্ষকে শুনতেন, এমনকী সমালোচনাও শুনতেন।
আরও পড়ুন, Manmohan Singh: ভারতের অর্থনীতি বদলের কারিগর, 'মোহন'যুগের অবসান
‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ হিসেবেই এদেশের রাজনীতিতে মনমোহনের আর্বিভাব হলেও তিনি প্রমাণ করেন আদতেই তিনি অ্য়াক্সিডেন্ট নন। ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করার স্থপতি যিনি, রেকর্ড সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার কারিগর এবং জাতিকে বিশ্বব্যাপী উচ্চাসনে বসানোর মঞ্চ তো তৈরি তাঁরই হাত ধরে। অথচ মৌনিবাবা তকমা পাওয়া এই রাজনীতিককে একসময় বলতে হয়, 'আমার প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে আমার কোনও লজ্জা নেই।'
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে স্বাক্ষর করার সময় তিনি বলেন "ইতিহাস আমার জন্য দয়ালু হবে"। রাজনীতিতে কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড নেই এবং কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে তাঁর মধ্যবিত্ত লালনে বেড়ে ওঠা, ইতিহাসে মনমোহনের জায়গা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই: এমন একজন ব্যক্তি যিনি ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন চার দশকের এই সমাজতান্ত্রিক যুগের শৃঙ্খলের মধ্যে থেকেও এবং তারপরে ভারতের ইতিহাসে সেই পর্যায়ে পাইলট হয়ে দেশীয় অর্থনীতিকে তার দ্রুততম প্রবৃদ্ধি দিয়েছিল, যখন ভারতে ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে।
এই বছরের এপ্রিলে, ৩৩ বছর ধরে রাজ্যসভার সাংসদ থাকার পরে, ৯১ বছর বয়সী মনমোহন সিং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। সকলের বিশ্বাসের ব্যতিরেকে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী, এই পণ্ডিত, মৃদুভাষী, চৌখস নেতাকে তার নীরবতার জন্য ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে "মৌনি বাবা" আখ্যা দিয়েছেন। তাও কাকে? এমন একজনকে যিনিই প্রথম অ-নেহেরু প্রধানমন্ত্রী যার ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব করার নজির রয়েছে। সেই পূর্বসূরী সম্পর্কে অবশ্য শেষে সৌজন্যের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি বৃদ্ধিতে পশ্চিমী দুনিয়ায় চক্ষুশূল হয় ভারত। ইউরোপ, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ কোনঠাসা করতে থাকে ভারতকে। একইসঙ্গে দেশের ভেতরেও বিরোধিতার সম্মুখীন হন তিনি। ইউপিএ থেকে সমর্থন তুলে নেয় সিপিএম। আস্থাভোটে কোনওরকমে টেকে সরকার। এই খারাপ সময়েও হতকিম এই নেতাই অটল বিহারীর অর্ধসমাপ্ত কাজের ব্য়াটন নিজের হাতে নিয়েছিলেন।
প্রথমে আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। তবে পথ সুগম ছিল না কারণ আমেরিকা-পাকিস্তান তখন জিগ্রি দোস্ত, আর ভারতের শুভাকাঙ্খি রাশিয়া, মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তবু পরমানু চুক্তি করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলেন যাতে ভারতকে তত্কালীন প্রথম বিশ্ব থেকে কোনঠাসা হতে না হয়। একদিকে রাশিয়ার বিরাগভাজন হওয়ার সম্ভাবনা, অন্য়দিকে চূড়ান্ত বাম বিরোধিতায় প্রশ্নের মুখে পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ। 'চুপ করে থেকেই' আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করলেন মনমোহন, আলোচনা করলেন।
অবশেষে সব বাঁধা পেরিয়ে পরমাণু চুক্তি করতে সক্ষম হল তাঁর সরকার। এক ধাক্কায় ভূরাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ভারতের বাজার খোলে আমেরিকার জন্য। সেই সময় এক ঝটকায় আমদানি শুল্ক ৩০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করে দেন সিং। কম দামে ঢোকে বিদেশি পণ্য। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে এমন সব আর্থিক নীতি তৈরি করে, যাতে ভারতের বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হয় বিদেশি কোম্পানগুলি।
তবে সরকারের অন্দরের দুর্নীতির জন্য 'ইয়েসম্যান'কে সংগঠিত লুটের অপবাদও নিতে হয়েছে। আজ তাঁর মৃত্যুতে মুছে গিয়েছে রাজনৈতিক ভেদাভেদ। সকলে এককথায় স্বীকার করছেন তিনিই ভারতে এককথায় আর্থিক বিপ্লব এনেছিলেন। আমেরিকা এবং ভারতকে কাছাকাছি এনেছিল পরমাণু চুক্তি। আজ মনোমোহনের প্রয়াণের পর সে কথা বলছে আমেরিকাও। সনিয়া-রাহুলের 'কাঠপুতুল' বলে কটাক্ষে বিদ্ধ মনমোহনের নীরব বিপ্লবের সাক্ষী এক ভঙ্গুর দেশের অর্থনৈতিকভাবে এভারেস্ট অভিযান।
আরও পড়ুন, Political Donations: বিজেপির পকেটে ২৬০০ কোটি চাঁদা! কংগ্রেসের প্রাপ্ত অঙ্কে চোখ কপালে উঠবে...
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)