নিজস্ব প্রতিবেদন:  তিনি স্কিত্জোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরেই বদ্ধ ঘরে একা বসে থেকেছেন এবং খেয়ে গিয়েছেন লোহার পেরেক। মাটির সঙ্গে পেরেক মিশিয়ে খাওয়াই ছিল তাঁর নেশা। দিনের পর দিন এমন অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা চালিয়ে গেলেও টেরটিও পাননি তাঁর পরিবারের কেউ। এমনকি ক্ষতও তৈরি হয়নি গলাতে। কিন্তু পেটে অসহ্য ব্যাথা হওয়াতেই সামনে এল গোটা কাণ্ডটা। রোগীর এমন 'খাদ্যাভ্যাস' দেখে চক্ষু চড়কগাছ চিকিত্সকদেরও। অতঃপর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা এবং আজ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ব্যক্তির পেট থেকে বের করা হল ৬৩৯টি পেরেক।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING




 


গোবরডাঙার বাসিন্দা প্রদীপ ঢালি বেশ কয়েক মাস ধরে তলপেটের ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। পরিবারের লোক প্রথমে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। অনেক চিকিত্সার পরও ধরা পড়েনি পেটেব্যাথার আসল কারণ। এদিকে দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে প্রদীপের। তলপেটে অসহ্য ব্যাথার সঙ্গে বমিও শুরু করেন তিনি। পরে তাঁকে সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর চিকিত্সার দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিত্সক সিদ্ধার্থ বিশ্বাস। রোগ ধরতে তিনিও প্রথমে বেশ কিছুটা চাপে পড়েছিলেন। তবে পেটের বিভিন্ন পরীক্ষার ফল দেখে হতভম্ভ হয়ে যান তিনিও। দেখা যায়, প্রদীপ ঢালির পাকস্থলীতে জমা হয়েছে বহু পেরেক। এরপরই তিন সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন হয় প্রদীপের চিকিত্সায়। ধার্য হয় অপারেশনের দিনও।


কিন্তু কীভাবে এই জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়?



চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, এই অস্ত্রোপচারে সামান্য ভুলেই মারাত্মক ক্ষতি হতে পারত রোগীর। তাঁর শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারত মুহূর্তে। সোমবার সকালে তিন চিকিত্সকদের দল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের চেষ্টায় সেই অসাধ্য সাধন করেন। প্রথমে প্রদীপের তলপেটে ১৫ সেমি কাটা হয়, পরে পাকস্থলীতে ১০ সেমি কাটা হয়। এরপর চুম্বকের সাহায্যে একে একে বের করে আনা হয় পেরেকগুলিকে। এইভাবে ১ কিলো ৬০ গ্রাম ওজনের মোট ৬৩৯টি পেরেক বার করা হয়। তীক্ষ্ণ মুখের পেরেকগুলি প্রত্যেকটি দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি লম্বা। বর্তমানে প্রদীপের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে কীভাবে এই তীক্ষ্ণ পেরেকগুলি দিনের পর দিন প্রদীপ খেয়েছেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না চিকিত্সকরাও।