পিয়ালি মিত্র: ডিজিটাল অ্যারেস্ট! সাইবার প্রতারণার নয় আতঙ্কের নাম। তথ্য বলছে যে প্রতারণার জাল এতটাই ছড়িয়েছে যে ইতিমধ্যেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভারতীয়রা ডিজিটাল অ্যারেস্ট জালিয়াতির মাধ্যমে ১২০.৩০কোটি টাকার প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। পরিস্থিতি এমন পৌঁছেছে যে গত রবিবার 'মন কী বাত' অনুষ্ঠানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেন। "ডিজিটাল অ্যারেস্টে" প্রতারকদের খপ্পর থেকে বাদ নেই কলকাতাও। কলকাতা পুলিশের সাইবার থানাতেও নিয়মিত জমা পড়েছে অভিযোগ।যা নিয়ে সতর্ক করেছেন কলকাতা পুলিশের কর্তাদের থেকে সাইবার বিশেষজ্ঞরা 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ডিজিটাল অ্যারেস্ট। শব্দবন্ধে অ্যারেস্ট কথা থাকলেও বাস্তবে বা আইনগত ভাবে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এই ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে মানুষের থেকে টাকা হাতাচ্ছে সাইবার ঠগরা। কী ভাবে হয় এই প্রতারণা? কারা রয়েছে এর পিছনে?


* প্রতারকরা প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিকে অডি বা ভিডিও কল করে। 


* প্রতারকেরা কখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সরকারি সংস্থা সিবিআই, নারকোটিক্স শাখা, আরবিআই, ট্রাই, শুল্ক এবং আয়কর আধিকারিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফোন করেন।


* কথোপকথনের শুরুতেই টার্গেটকে কখনো বলা হয় তার আধার কার্ড বা ফোন ব্যবহার করে কোনও অবৈধ কাজ হয়েছে, বা কোনো নারকোটিকের কনসাইনমেন্টের সঙ্গে তার যোগ পাওয়া গিয়েছে, আবার কখনো বলা হয় মানিলন্ডারিং মামলার কথা


* এরকম নানা বিষয়ে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হোয়াটসঅ্যাপ বা ভিওআইপি ফোন করে প্রথমে তাঁকে কোনো ফাঁকা ঘরে বা হোটেলে যেতে বলা হয়। ভিডিও কলের মাধ্যমে কার্যত পনবন্দী করে রাখা হয় টার্গেটকে । সে সময় অন্য কোনো কল করতে দেওয়া হয় না। পরিবারের কারও সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয়না 


* প্রথমে ইউনিফর্মে পড়ে থাকা এক ভুয়ো অফিসার কথা বলেন। তারপর বলা হয় মামলার সঙ্গে যুক্ত অফিসারের যুক্ত অফিসারের সঙ্গে কানেক্ট করা হচ্ছে


* ⁠প্রতারকরা পুলিস বা যখন যে সংস্থার নাম করে ফোন করে তখন সেই ইউনিফর্ম পরে থাকে এবং সেই সংস্থার আদলে সাজানো হয় ভুয়ো অফিসের ব্যাকগ্রাউন্ড


* ব্লুপ্রিন্ট অনু্যায়ী প্রতারণার কাজটি আরও নিখুঁত করার জন্য পাঠানো হয় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট মেমো’। সেটিও ভুয়ো।


* এরপরই শুরু হয় আসল কারসাজি। টাকা হাতানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বব্যক্তির কোথায় কত ইনভেস্টমেন্ট বা ডিপোজিট আছে তার দেখাতে বলা হয়। এবং সেই সব টাকা ট্রান্সফার করতে বলা হয়। প্রতারকরা বলে, ভিরিফাই করার জন্য সেই টাকা এখন সিজ করা হচ্ছে। কোন যোগসূত্র না পাওয়া গেলে ফেরৎ দেওয়া হবে 


* অথবা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ভুয়ো আধিকারিকেরা মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে মোটা টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। যতক্ষণ দাবি আদায় হচ্ছে অর্থাৎ ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতানো না হচ্ছে ততক্ষণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে বলে ফোনকলের মাধ্যমে ঘরে বা নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়।


*এভাবেই সাধারণ মানুষদের থেকে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হাতিয়ে নেয় প্রতারকেরা। এই ফাঁদে পা দিয়ে ইতিমধ্যে প্রচুর মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।


পিছনে কারা?
একাধিক সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমারের মতো দেশে বসে এই প্রতারণা চক্র চালাচ্ছে। তবে তাদের সিম কার্ড জোগাড় করে দেওয়া, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নাম্বার জোগাড় থেকে প্রতারণা থেকে হাতানো টাকা বিদেশে বসে থাকা চক্রের পান্ডাদের কাছে পাঠানোর কাজ করে এদেশে থাকা চক্রের সদস্যরা। একসময় কলকাতা পুলিসের কাছে মাথাব্যথার কারণ ছিল জামতারা গ্যাং বা ভরতপুরের মতো গ্যাং। কিন্তু এখন কলকাতা পুলিসের কাছে চিন্তার কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে নয়া এই সাইবার অপরাধ। প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০টা করে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। প্রতারণা জালে পড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন অনেকে।


ইতিমধ্যেই দিল্লি, মুম্বই, জয়পুরের মতো জায়গায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিসের সাইবার থানা ও ব্যাঙ্ক ফ্রড শাখা। যদিও তারা সকলেই চক্রের সাহায্যকারী। গত ৬ মাসে কলকাতা পুলিসের ডিজিটাল অ্যারেস্ট সংক্রান্ত অভিযোগ হয়েছে প্রায় ৩০০টি। মে মাসে ৪৯, জুনে ৫২, জুলাইয়ে ৩৭, অগাস্টে ৩৯, সেপ্টেম্বরে ৬০ ও অক্টোবরে ৫৪টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এখনও কোনও আইনে ডিজিটাল অ্যারেস্টোর কোনও অস্বিত্ব নেই। ফলে এই ধরনের ফোন-কল এলে কীভাবে সতর্ক থাকতে হবে, তা নিয়ে সাবধান করেছেন পুলিস ও সাইবার বিশেষজ্ঞরা। 


আরও পড়ুন, R G Kar: ওটা কোনও রক্তের দাগ-ই নয়! আরজি কর গ্লাভস কাণ্ডে নাটকীয় মোড়...



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)