সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নাট্যরসে সাধারণত কমেডি ও ট্র্যাজেডির সহাবস্থানই দর্শককে আলোড়িত করে বেশি। নাট্যব্যক্তিত্ব অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনেও এই দুই ভাবের নিবিড় প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। এ হেন অসিতবাবু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এ শহর হারাল তার অন্যতম কৃতী এক নাট্যব্যক্তিত্বকে।


অসিতবাবুর নামের সঙ্গে ট্র্যাজেডির যোগাযোগটাই যেন একটু বেশি। যেমন এই শহরের অন্যতম নাট্যদল নান্দীকারের প্রসঙ্গই ধরা যাক। যাঁদের হাত ধরে নান্দীকার কলকাতার নাট্যমানচিত্রে ঠাঁই করে নিয়েছিল, তাঁদেরই একজন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ, নান্দীকার বলতেই নাট্যপ্রেমী মানুষের মনে যে ভাবে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের নাম ভেসে ওঠে, ঠিক সেইভাবে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটা কখনও মনে পড়ে না। বাংলা নাট্যপরিসরে এটা একটা ট্র্যাজেডি বইকি!



অথচ শুরুটায় ছিল ভরপুর কমেডি। উত্তর কলকাতার মণীন্দ্রচন্দ্র  কলেজে পড়তে-পড়তেই অসিতবাবু নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। তিনিই  অজিতেশকে একটি নাটকের দল গড়ার ভাবনাটা জোগান। অজিতেশের মতো মানুষও প্রথমটাই একটু দ্বিধায় পড়েন। পরে একদিন অসিতবাবুর মামাবাড়ি, বি কে পাল অ্যাভিনিউর বাড়িতে বিষয়টা নিয়ে নাট্যবন্ধুদের একটা মিটিং বসে। এবং নীরবে এক নক্ষত্রের জন্ম হয়ে যায়। যার নাম নান্দীকার। রুদ্রপ্রসাদ একেবারে শুরু থেকেই ছিলেন না। তিনি কিছুটা পরে আসেন।


এ তো গেল প্রদীপ জ্বালানো। কিন্তু সলতে পাকানো? তা-ও ছিল। অসিতবাবুর নাট্যজীবন শুরু হয় প্রবাদপ্রতিম শম্ভু মিত্রের তত্ত্বাবধানে। সেই শিক্ষাই সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন। নান্দীকারের প্রথম দশবছরে যে ক'টি ভাল ভাল শো ছিল, সবগুলির সঙ্গেই নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু ছেদ এল। পেশায় শিক্ষক অসিতবাবু সত্তরের দশকের শুরুতেই শিলিগুড়িতে বদলি হলেন। সেখানে গিয়েও অবশ্য স্থানীয় নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।



কমেডির আরও পরিসর আছে। বুদ্ধিবাদী নাটকের পাশে যে যাত্রাকে বরাবর একটু খাটো নজরেই দেখা হয়, পরের দিকে অসিতবাবু সেই যাত্রা নিয়েও প্রচুর চর্চা করলেন। যাত্রায় পালা লিখলেন, অভিনয় করলেন। যাত্রা তাঁর সামনে অভিনয় প্রকরণের নতুন একটা জানলা যেন খুলে দিল। তিনি অবশ্য সেখানেই আটকে থাকেননি। সিনেমাতেও অভিনয় করে গিয়েছেন সমানতালে। মৃণাল সেনের সঙ্গে বেশ কিছু কাজ করেছেন। অভিনয়সূত্রেই যোগাযোগ তৈরি হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। 


অভিনয়ের সবক"টি মাধ্যমেই তিনি নিজের মতো করে অবদান রেখে গিয়েছেন। সংলাপ বলেছেন, নিজের মুখের ওপর আলো পড়তেও দিয়েছেন, কিন্তু কখনই লাইমলাইটে দাঁড়িয়ে থাকেননি। সরে গিয়েছেন।


আসলে কমেডিকে হারিয়ে দিয়ে তাঁর জীবনে শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজেডিরই তো জয়! শেষ পর্যন্ত তিনি ওই এক পাশে সরে থাকা কর্ণের মতো। যাঁর জন্য কোনও বিজয়শঙ্খ নেই, অথচ যিনি আগাগোড়া এক অপরিহার্য চরিত্র। যিনি নীরবে নিজের ভূমিকাটা অভিনয় করেই মঞ্চের পিছনের অন্ধকারের ভেতরে দ্রুত নেমে যান। দর্শকদের হাততালির তোয়াক্কা না করেই।