নিজস্ব প্রতিবেদন:  দমদমে সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর মালবিকা সেনের নাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিস। এই ঘটনায় মৃত আট বছরের বালক আথান আব্রামের মা তথা মালবিকা সেনের মেয়ে পৌলমী সেনের ভূমিকা নিয়ে ধন্দে পুলিস। তদন্তে উঠে আসছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পৌলমী সেন এখন পেটে ক্ষত নিয়ে  একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।  প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছিল, ছেলে আথানকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর হাতের শিরা কেটে বাড়ির ছাদ থেকে নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পৌলমী। কিন্তু পৌলমীর পেটে একটি ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। হাতের শিরা কাটা। অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে মালবিকা সেনের হাতেও।


জানা গিয়েছে, পৌলমী এইচআইভি পজেটিভ। পৌলমীর এর আগে দুবার বিয়ে হয়েছিল। দুটো বিয়েই তাঁর টেকেনি।  তাঁর একাধিক প্রেমিকও ছিল। সেক্ষেত্রে ছেলেকে শ্বাসরোধ করে খুন ও মাকে খুন করার চেষ্টার পিছনে কি কোনও সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস।


আরও পড়ুন: রহস্যজনকভাবে মৃত্যু দমদমের প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলরের নাতির, ছাদ থেকে ঝাঁপ মেয়ের


অন্যদিকে, উঠে আসছে অর্থাভাবের একটি বিষয়ও। গত দেড় বছর ধরে  দমদম এমসি গার্ডেন রোডের বাড়িতে  মা ও ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতে পৌলমী। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, পৌলমী কিংবা তাঁর মা কেউই  এলাকার কারোর সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। একজন রিকশা চালকের নিত্য যাতায়াত ছিল তাঁদের বাড়িতে। তিন হাজার টাকা মাসিক বেতনের বিনিময়ে বাজার ও আথানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন তিনি। প্রথম কয়েক মাস টাকা ঠিকঠাক পেলেও, শেষ দুমাস ধরে তিনিও টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এদিকে, এলাকার এক চিকিত্সকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন পৌলমী। তাও ফেরত দেননি।


কিন্তু বিষয়টি যে কেবলই আর্থিক সঙ্কটের কারণেই, তা মেনে নিতে পারছেন না তদন্তকারীরা। কারণ বাজারে খুব বেশিও দেনা ছিল না পৌলমীর। সেক্ষেত্রে  তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টিই ভাবাচ্ছে পুলিসকে। বারাসতের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে পৌলমীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস। তাঁর প্রথম পক্ষের স্বামীর সম্পর্কে জানতে চাইছেন।  বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি অন্য কারোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন কিনা, তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিস।


রবিবার সন্ধ্যার ঘটনাক্রম দেখে, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, প্রথমে ছেলেকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন পৌলমী। তা দেখে ফেলায় মা মালবিকা সেনের ওপরও হামলা চালান। পরে নিজের হাতের শিরা ও পেটে আঘাত করে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু তদন্ত যত এগোয়, ততই বাড়তে থাকে ধন্দ। পৌলমীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ গাঢ় হতে থাকে তদন্তকারীদের মনে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, পৌলমীর শরীরে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তা কেউ ছাদ থেকে পড়ে গেলে হয় না। তবে কি ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ বিষয়টি গোটাটাই নাটক? রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছে  দমদম থানার পুলিস।


প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় দমদমের এসসি গার্ডেন রোডে ঘটে যায় ভয়ঙ্কর ঘটনা। এক মহিলার আর্তনাদ শুনতে পেয়ে প্রতিবেশীরা দেখেন, প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলরের মেয়ে পৌলমী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন। ঘরে গিয়ে দেখেন, বিছানার চাদর জড়ানো অবস্থায় পড়ে ছিল তার ছেলে, পাশেই ছিলেন রক্তাক্ত মালবিকা সেন।