২৪ ঘণ্টা ডট কমের সঙ্গে একান্ত আলাপে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কথা বললেন নিজের রাজনীতির স্টাইল নিয়ে। জানালেন তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির 'সম্পর্ক' কেমন। খোলসা করলেন আগামী ভোটে কী হবে বিজেপির স্ট্র্যাটেজি।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রসঙ্গ- আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট 


উপনির্বাচনে বামের বদলে রামকে সেকেন্ড করেছে বাংলার মানুষ। এই রেজাল্ট কি ধরে রাখতে পারবেন?
শুধু পঞ্চায়েত ভোট নয়, সার্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এটা হবে। হঠাৎ করে যে সেকেন্ডে এলাম, সেটা তো নয়। লোকসভা ভোটের পর থেকেই এটা হচ্ছে। লোকসভা তো অন্য পরিপ্রেক্ষিত, সেখানে দেশ বাঁচানোর প্রশ্ন ছিল। মানুষ মোদীকে এনেছে। তারপর বিধানসভা ভোট। আমরা লড়লাম, তিনটি আসন জিতলাম। সারা বাংলায় ভোট পেয়েছি। আমাদের ভোট জাম্প করে করে বাড়ছে। কোচবিহারে ভোট বেড়েছে। কাঁথিতে আমাদের ভোট ৮ থেকে ৩১ (শতাংশের বিচারে) হয়েছে। এভাবেই বাড়বে।


কীভাবে এমন 'ক্যারিশ্মা' দেখাচ্ছেন? বাম রাজ্যকে রাম রাজ্য করার ফর্মুলা কী? 
তৃণমূল তো জিতেই আছে। কে একে হারাতে পারে... লোকে সিপিএম-কে দেখেছে। কংগ্রেস তো কোনও রকমে টিকে আছে। আর সারা ভারতে তিন বছরের বিজেপি সরকার যা করেছে এটাই বা কম কী! মোদী ম্যাজিক। আমাদের সভাপতি সারা ভারত ঘুরছেন। পশ্চিমবঙ্গে নেতা কর্মীরা লড়াই-আন্দোলনে আছে, কষ্ট করছে। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের মনে বিজেপি নিয়ে একটা ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিজেপির ওপর মানুষের বিশ্বাস বেড়েছে। এতদিন বাংলায় বিজেপি ছিল, কিন্তু জিততে পারেনি, কিছু করতে পারেনি। গত দুবছর কিন্তু ছবিটা পাল্টেছে। 


কিন্তু বিরোধীরা তো বলছে, কেন্দ্রে সরকার আছে বলেই রাজ্যে 'উড়ছে' বিজেপি। কেন্দ্রে বিজেপি না থাকলেই রাজ্যেও হাওয়া হয়ে যায়... 


'পশ্চিমবঙ্গে মোদীকে দিয়ে হবে না'


না। প্রথমে কেন্দ্রে তো এনডিএ সরকার ছিল। কত ভোট পেয়েছে বিজেপি? আসনও বাড়েনি। কেন্দ্র সরকার দিয়ে হবে না। মোদীজি'র মত কিছু মানুষ একটা হাওয়া তুলতে পারে, এটা ঠিক, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এটা হবে না। বিহার, ইউপিতে হতে পারে। ইউপিতে ৭৩টি সিট পেতে পারে, বাংলায় ২টো পেতেই আমাদের কোমড় ভেঙে যেতে পারে। আমাদের রাজ্যের সংগঠনের জোরেই বিজেপি বাড়ছে। সম্প্রতি একটা সার্ভে এসছে, যদি এখনই ভোট হয় তাহলে ৩৩% ভোট পাবে বিজেপি। 


৩৩% ভোট দিয়ে তো রাজ্যে সরকার গড়তে পারবে না বিজেপি। 
পঞ্চায়েত, পার্লামেন্ট তারপর বিধানসভা। যে গতিতে বাড়ছে সংগঠন তাতে জিতবে বিজেপিই...  



বিজেপি'র স্টুডেন্ট উইং তো এই রাজ্যে জিরো... 


'সিপিএম আমাদের ভোট দিচ্ছে'


বিজেপির কোনও ছাত্র সংগঠন নেই। যেটা আছে সেটা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। যেখানে যেখানে ভোট হয়েছে ওরা চেষ্টা করেছে। ওদের তো দাঁড়াতেই দেয়নি তৃণমূল। ওরা সব জায়গায় রিগিং করে জিতছে। কলেজে ভোট না দিলে কী হয়েছে, তারা তো ভোটারও... পঞ্চায়েতে ভোট দেবে, লোকসভায় ভোট দেবে, বিধানসভায় ভোট দেবে। পরিস্থিতি দেখেই তারা ভোট দেবে। পরিস্থিতি তৈরি করতে হয়। সিপিএম এখন হাওয়া তৈরি করতে পারবে? আমাদের হাওয়াতেই উড়ে যাচ্ছে। সিপিএম-এর কমিটেড ভোটাররা ছাড়া বাকি ভোটাররা আমাদেরই ভোট দিচ্ছে। 



প্রসঙ্গ- বামের জমি দখল 


রাস্তায় আন্দোলনে বিজেপির থেকে তো অনেক এগিয়ে বাম... (বামেদের 'নবান্ন চলো' বনাম বিজেপির 'লালবাজার অভিযান') নবান্ন অভিযানে বামদের একজন শহীদও হল...


'এক ডজন মরলেও সিপিএম-এর দিকে লোকে আর তাকাবে না'


শহীদ দিয়ে কে এগিয়ে কে পিছিয়ে তা বিচার করা যায় না। কে মাথা ফাটালো, কার মাথা ফাটলো, এগুলো দিয়ে কিছু হয় না। পশ্চিমবাংলায় এতদিন মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। ভারতবর্ষে ইন্দিরা গান্ধীর মার্ডার, রাজীব গান্ধীর মার্ডারের পর কংগ্রেস জিতেছে। বিজেপি কাউকে মার্ডার করে জেতেনি। আমরা আদর্শবাদী রাজনীতি করি। সাধারণ মানুষ আমাদের কাজ দেখে আমাদের ভোট দেয়। মৃত্যুর রাজনীতি আমরা করিনা। যেটা কমিউনিস্টরা শুরু করেছিল, টিএমসি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটা। ওরা আবেগের ভোট করে। আমরা সংগঠনের দ্বারা আবেগ তৈরি করি। দেশ তো একটা আবেগ। সেজন্যই তো দেশের জন্য প্রাণ দিচ্ছে। রক্ত নিয়ে রাজনীতি করছে বলেই তো সিপিএম মুছে যাচ্ছে। যতই মরুক, এক ডজন মরলেও সিপিএম-এর দিকে লোকে আর তাকাবে না।   



প্রসঙ্গ- বর্তমান রাজনীতি  


আগামী দিনে রাজ্য বিজেপির মুখ কে হবে? আপনি? কী ইস্যুতে লড়বে বিজেপি? 
ইস্যু তো অনেক। রোজই একটা করে ইস্যু তৈরি হচ্ছে। টিএমসি সবেতে ব্যর্থ। শাসন নেই, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে গোটা দল। ইউপিএ সরকারের মত শুরু হয়েছে। অর্ধেক নেতা হয় জেলে নয় বেলে... যার লোকসভার নেতা সাড়ে চার মাস জেল খাটে দুর্নীতির দায়ে, রাজ্যের মন্ত্রী দেড় বছর জেল খাটে দুর্নীতির দায়ে, সে পার্টির কাছে কি আছে? রাজ্যে অল্টারনেটিভ নেই। বিজেপি সেই অল্টারনেটিভ দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিরাট সাইজের নেতা বানিয়ে দিলাম, সেটা বিজেপি করবে না। (মোদীজি'র মত নেতা এক আধবার পাওয়া যায়, গড গিফট)। বিজেপি গণপ্রচেষ্টায় বিশ্বাস করে। এতদিন আমাদের কোনও ফোকাস ছিল না। মদন মিত্রের মত নেতারা কোথায় ছিল? দশ বছর আগে কে নাম জানত? কে ছিল এই মুকুল রায়? 


দিলীপ ঘোষের নামও তো কেউ জানত না... 
আমি বরাবরই আড়ালে ছিলাম। অর্গানাইজারের কাজ করেছি। আসি না আমরা সামনে। এটাই আমাদের সিস্টেম। আমাদের এমন একাধিক সংগঠন আছে, যারা গোটা দেশে এক নম্বর। কিষাণ মান্ডি, বিদ্যার্থী পরিষদ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এদের নেতাদের কতজন চেনেন? যখন প্রয়োজন হবে তখন ঠিক চিনে নেব। বিড়াল বনে গেলে বনবিড়াল হয়ে যাবে। এর থেকেও বড় কথা, বাংলার মিডিয়া কেবল রাজনীতি কেন্দ্রিক। রাজনীতিক ক্ষেত্রে থাকলে, সে লোকটা চোর হলেও তার প্রচার হবে, ভালো হলে ভালো প্রচার হবে। রাজনীতির বাইরে এখানে কিছু নেই। মিডিয়ায় কোনও পজিটিভ খবর আসে না, এটা আমাদের দূর্ভাগ্য। 


তার মানে ভারতের মিডিয়া কেন্দ্র সরকারের যে এত 'গুণ' গাইছে সেগুলো মিথ্যা? 
না, না, না না। আমি সেটা বলছি না। রাজনীতি ছাড়া প্রচার নেই, সেটা বলছি। রাজনীতি ছাড়া নিউজের ভ্যালু থাকে না। সমাজে এত ভালো কাজ হচ্ছে, কটা মানুষের ওপর ফোকাস হচ্ছে? খালি পলিটিক্যাল গিমিক। রাজনৈতিক দল গুলোও জানে গিমিক ছাড়া পাবলিসিটি নেই। 


বিজেপি গিমিক করে? 
... এটাই তো রাস্তা। জিততে হলে এই রাস্তা দিয়েই আসতে হবে। মাইন্ডসেট। মাইন্ডসেট। এমনটা না হলে তোমাকে মেনেই নেবে না। 


আপনি নিজেই বলছেন বিকাশ দিয়েই জিতবে বিজেপি, আবার সেই আপনিই বলেছেন গিমিক করে জিততে হবে...এটাই রাস্তা!
যতক্ষণ না ক্ষমতায় আসছি, আমার উন্নতি করে কী হবে? ক্ষমতায় যেতে হলে বাঁশতলা দিয়েই যেতে হবে।


'গঠনমূলক বিরোধীতা' বলে কিছুই মানছেন না তাহলে...? বিজেপি কনস্ট্রাকটিভ না হয়ে ডেস্ট্রাকটিভ হবে? 
কোথায় ডেস্ট্রাকটিভ হলাম? তাহলে তো কয়েকটা পুলিসকে মেরে দিতাম। মারিনি আমরা। আমরা মার খেয়েছি। চলে এসছি। আমাদের সেন্ট্রাল লিডার গ্রেফতার হয়েছে। আমি যদি বলতাম, আমার পিছনে ২০ হাজার লোক পুলিশগুলোকে মারিয়ে দিয়ে চলে যেত। 


আপনি তো পুলিসকে মারার হুমকিও দিয়েছেন... অস্বীকার করবেন? 


'টিএমসি অফিস ভেঙেছি'


হ্যাঁ। বলেছি তো। আমরা টিএমসি অফিস ভেঙেছি। মাথাও ফাটিয়েছি কটার। কোচবিহারে মাটিতে ফেলে পিটিয়েওছি কয়েকটাকে। 


 


আপনি 'প্রতিহিংসার রাজনীতি' করছেন? 


'রাজনীতি করতে এসেছি, আমাকে হিরো হতে হবে'



যে যেই ভাষাটা বোঝে, তার সঙ্গে সেই ভাষায় কথা বলছি। আমি পালিয়ে গেলে পাবলিক আমাকে কাপুরুষ বলবে। আমি রাজনীতি করতে এসেছি, আমাকে হিরো হতে হবে। নাহলে আমার পিছনে লোক আসবে কেন? বলবে কথারই দাম নাই। যা বলি তার সবই ঠিক থাকে নাকি? বলতে হয়। বলার জন্যই তো কর্মীরা অ্যাক্টিভ হয়ে কাজ করে। কিছু স্টান্টস থাকে, কারণ স্টান্টসটাই লোকে দেখে। আমরা সারা ভারতবর্ষে এক একজনকে পিটিয়ে লম্বা করে দিতে পারি। এখন সারা দেশে ১৭টা রাজ্য আমাদের। কিন্তু আমরা 'দাদাগিরি' করি না। এত রাজ্যে তো ভোট হল, বলতে পারবে কোথাও একটা রিগিংয়ের অভিযোগ এসছে। কোথাও রিপোলিং হয়েছে? এটা এখানে হয়, আর তাই আমাদেরও সেই রাস্তা দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। না মারলে লোকে আমাকে কাপুরুষ বলবে। 



প্রসঙ্গ- তৃণমূল কংগ্রেস 
 
মণিপুরে বিজেপিকে সমর্থন করেছে তৃণমূলের জয়ী বিধায়ক। বামেরা বলেছ এটা নাকি 'মোদীভাই আর দিদিভাই'-এর সেটিং। আপনি কী বলবেন? রাজ্যে কুস্তি আর মণিপুরে দোস্তি-সত্যিই কি তাই? 


তৃণমূল করেনি... তাহলে তো বলতে হয় এখানে আমাদের লোকগুলোকে ভাঙিয়ে নিয়ে গেছে ওরা। পার্টি সমর্থন করেনি। এমএলএ করেছে। একজন তো, দলবদলের আইনে পড়বে না, টুক করে চলে এল। সমর্থন করেনি, বিজেপিতে মিশে গেছে। 


রাজ্যে তৃণমূলীদের দলে নেবেন? 
চাইলে এখনই রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রীকে দলে নিতে পারি। চেয়ার চলে যাবে বলে আসবে না।  


একটা নাম বলুন... অনেক দিন ধরেই তো বলছেন, ফ্ল্যাশ করছেন না কেন? 
অনেকে জেনে গেছে। সময় আসলে সব বলব। 


ছাঁকনি ছাড়াই তৃণমূলকে নেবেন?
ছেঁকেই নিচ্ছি। সমাজের ১০% মানুষ রাজনীতি করে। সেই লোকই তো এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে। নাহলে আমার সংখ্যা বাড়বে কী করে? লোকটার ইমেজ ঠিক আছে নাকি, দুর্নীতি করেছে কিনা, সে সমাজবিরোধী কিনা এটা দেখেই দলে নেওয়া হবে। অন্য দল থেকে অনেকেই আমাদের দলে এসেছে। সুরেশ প্রভু তো শিবসেনা থেকে এসছেন, এখন সফল রেলমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। ঝাণ্ডা পাল্টালেই লোক পাল্টে যায় না। 


কিন্তু, এই তৃণমূলই তো বলছে বিজেপি সিবিআই 'জুজু' দেখিয়ে রাজ্যে হাওয়া তুলছে। সংগঠন নেই তাই সিবিআই-কে ব্যবহার করছে বিজেপি, কী বলবেন আপনি?
সিবিআই অ্যাক্টিভ হলে দিদি বলে বিজেপি চালাচ্ছে। ইন-অ্যাক্টিভ হলে বলা 'দাদা-দিদি' এক হয়ে গেছে। বিরোধিরা এটা বলবেই। মমতা ব্যানার্জি যখন বিরোধী ছিলেন তখন কুকুর-ছাগল মরলেও সিবিআই চাইতেন। তখন সিবিআই ঠিক ছিল। আর আজ যখন ওনার বিরুদ্ধে সিবিআই তখন বলছেন সিবিআই প্রতিহিংসা পরায়ণ। বি লক্ষ্মণ যখন একটা স্টিংয়ে অভিযুক্ত ছিলেন তখন 'চোরের সরকার' বলে এনডিএ ছেড়ে চলে এসেছিলেন। এখন তার পার্টির লোকেরা লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ক্যামেরার সামনে ধরা পড়েছে। তখন বলেছিলেন ক্যামেরা ভুল বলে না, মাণূষ বলে। এখন বলছেন উল্টো কথা। কোনটা ঠিক? 


...চলবে