kalipuja 2023: বাজিতে ফাঁকিবাজি! এরকম বিষ-বাজি বাজারে ঢুকল কীভাবে, বিক্রিই-বা হচ্ছে কীভাবে?
kalipuja 2023: গ্রিন বাজির প্রথম শর্ত, বেরিয়াম নাইট্রেটের বদলে তাতে ব্যবহার করা হবে পটাশিয়াম নাইট্রেট। তা প্রায় ৪০ শতাংশ কম ক্ষতিকারক। অথচ বাক্সের গায়ে বাজির উপাদান হিসেবে জ্বলজ্বল করছে বেরিয়াম নাইট্রেট। এরকম বাজি এই বাজারে ঢুকল কীভাবে? বিক্রিই-বা হচ্ছে কীভাবে? উঠছে প্রশ্ন।
অয়ন ঘোষাল: প্রায় দেড় বছর ধরে বিস্তর গবেষণা, চর্চা, কড়া আইন, বিধিনিষেধ ও বজ্র আঁটুনির পর কালীপুজোর ঠিক আগের দিন ধরা পড়ল ফসকা গেরো। পুলিস, দমকল এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদিত যেসব বাজি কলকাতার বাজি বাজারে 'কিউ আর কোড'-সহ গ্রিন বাজি নামে অনেক চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে, তার মধ্যে বেশ কিছু বাজি আদতে গ্রিন বাজিই নয়। শহরের বাজি বাজার থেকে ব়্যান্ডম স্যাম্পলিং করে সংগ্রহ করা কিছু বাজির কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করে এই দাবি করলেন পরিবেশ কর্মী ও গবেষকরা। তাঁরা এই সংগৃহীত বাজির অনেকগুলিতে একাধিক ফাঁকি ধরে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: kalipuja 2023: রক্তভেজা মাটিতে অধিষ্ঠিতা ৬০০ বছরের কালী! কেন তাঁর মূর্তি নেই, বেদি নেই?
১) জাল কিউ আর কোড। কিছু বাজির বাক্সে স্টিকার মারা কিউ আর কোড স্ক্যান করলে তা ইনভ্যালিড দেখাচ্ছে।
২) বেরিয়াম নাইট্রেট। গ্রিন বাজির প্রথম শর্ত বেরিয়াম নাইট্রেটের বদলে তাতে ব্যবহার করা হবে পটাশিয়াম নাইট্রেট। তা প্রায় ৪০ শতাংশ কম ক্ষতিকারক। অথচ বাক্সের গায়ে বাজির উপাদান হিসেবে জ্বলজ্বল করছে বেরিয়াম নাইট্রেট। এরকম বাজি এই বাজারে ঢুকল কীভাবে? বিক্রিই-বা হচ্ছে কীভাবে? প্রশ্ন উঠছে।
৩) এ রাজ্যে নিরি সি এস আই আর প্রশিক্ষণ নিয়ে বাজি তৈরি করেছেন এরকম নির্মাতার সংখ্যা হাতেগোনা। সেই তুলনায় প্রচুর এরকম বাজির সন্ধান মিলেছে, যেগুলিতে তামিল ভাষায় লেখা, যাতে শিবকাশি বোঝানো যায়। অথচ তার ঠিক নীচেই লেখা আছে, বাজিটি তৈরি হয়েছে মহেশতলায়।
৪) সব থেকে বিপজ্জনক। নিরি সি এস আই আর কিউ আর কোড দিয়ে স্ক্যান করলে খুলছে না, অথচ গুগল স্ক্যানার ওপেন হয়ে জাল সার্টিফিকেট শো করছে, এরকম বেশ কিছু বাজি এই বাজি বাজারে এসেছে।
সমস্যা আছে। অস্বীকার করেনি শহরের বাজি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। কলকাতা বাজি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না জানান, এর প্রথম ও প্রধান কারণ, গ্রিন বাজি নিয়ে তথ্য ও সচেতনতার অভাব। কোনটি গ্রিন, কোনটি নয়-- তা খোলা চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। তামিলনাড়ুর শিবকাশির বিভিন্ন বাজি কারখানা থেকে নিরি এবং সিএসআই আর মান্যতাপ্রাপ্ত লাইসেন্স যাচাই করে বাজি পাইকারি দরে কিনে কলকাতার বাজি বাজারে খুচরো দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে কোনটি জাল, কোনটি আসল-- তা জানার বা বোঝার কোনও উপায় থাকছে না। সবে গত বছর থেকে সাধারণ বাজির বদলে গ্রিন বাজির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে গোটা বিষয়টি যতটা সম্ভব ঠিক ভাবে করার চেষ্টা হয়েছে। কালীপুজো মিটে গেলে ফের পুলিস, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে। এই বছরের ফাঁক-ফোকর যাতে আগামী বছরে আর না থাকে, সে বিষয়টি সুনিশ্চিত করার চেষ্টা হবে।
আরও পড়ুন: kalipuja 2023: দামোদরের গভীর থেকে উদ্ধার কঙ্কালেশ্বরী! চৈতন্যদেবের সঙ্গে কী যোগ এই কালীর?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কাজল কৃষ্ণ বণিক জানান, গ্রিন বাজি আসলে সোনার পাথর বাটি। বেরিয়াম হোক বা পটাশিয়াম-- বারুদ যেখানে আছে, সেখানে দূষণ বাড়বেই। এর ফল সুদূপ্রসারী। অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয়, জাল কিউ আর কোড-সহ নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করে যে বাজিগুলি বিক্রি হচ্ছে, সেগুলি জনস্বাস্থ্যের নিরিখে নেতিবাচক। যাদের দিনের বড় সময় বাড়ির বাইরে থাকতে হয়, তাদের মধ্যে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাও আছে, এদের ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিসঅর্ডার হতে পারে। এরা স্থায়ী ভাবে কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা হারাতে পারে। যা শুধু এদের নয়, গোটা দেশের পক্ষে নেতিবাচক। কারণ আজকের শিশুরা, আজকের তরুণ প্রজন্ম আগামী দেশের দিশারি।