নিজস্ব প্রতিবেদন: ভুয়ো নিয়ে নানা কাহিনি। তার বেশ কিছু মজারও। আমাদের অতি চেনা গোপাল ভাঁড় রাজার হয়ে নবাবের কাছে নানা রকম ছলনার আশ্রয় নিতেন। কিন্তু তার মধ্যে অনাবিল হাস্যরস ছাড়াও থাকত অসূয়াশূন্য এক মনোভঙ্গি, প্রকারান্তরে যা তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজাকে নানা ভাবে রক্ষা করত। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই নব্য-ভুয়ো দেবাঞ্জন ঘটনাচক্রে হয়তো গোপাল ভাঁড়কেও টেক্কা দেন আর কী! কিন্তু তাঁর ছলনার কোনও দর্শন এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই। কেন এমন করতেন তিনি? কেন করতেন তাঁর বাবাও? কোন ক্ষমতা-প্রতিপত্তির প্রতি তাঁদের চোরাটান? 


কে এই দেবাঞ্জন? 


মাদুরদহ। হোসেনপুর। ২১৮। দেবাঞ্জন দেবের বাড়ি। ২০০৭ সালে জমি কিনে ফ্ল্যাট কেনেন দেবাঞ্জনের বাবা মনোরঞ্জন দেব। প্রতিবেশীদের দাবি, ২০০৭ সালে যখন এই দেব পরিবার মাদুরদহে আসে তখন মনোরঞ্জন দাবি করেছিলেন, তাঁর ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ইংরেজিতে ভাল অনুচ্ছেদ লিখে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছে। 



২০০৭ থেকে ২০১৭। দশ বছর। এই এক দশকে ছেলেকে ঘিরে বয়ান বদলায় মনোরঞ্জনবাবুর। ২০১৭ সালে দেব পরিবার পড়শিদের জানাল, দেবাঞ্জন আইএএস হয়ে গেছে! দেশজুড়ে ১৬টি মেগাসিটি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। দেবাঞ্জনের অধীনেই মেগাসিটি প্রকল্পের কাজ হবে। কেন্দ্র পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন দেবাঞ্জন বলেও তাঁর পরিবারের তরফে প্রতিবেশীদের কাছে দাবি করা হয়। 


না, এখানেই শেষ নয়। 'অমিত প্রতিভাধর' দেবাঞ্জনের গুণপনা এখানেই শেষ নয়। প্রতিবেশীদের দাবি, দেবাঞ্জনের বাবা তাঁদের কাছে দাবি করতেন, তাঁর ছেলে বাংলাদেশ থেকে সিনেমা করার ভাল অফার পেয়েছেন। ভাল স্ক্রিপ্ট লেখা এবং ছোটদের জন্য উত্‍কৃষ্ট সিনেমা পরিচালনা করায় তাঁকে কান থেকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে! এমনকি তাঁকে নাকি অস্কারের জন্যও মনোনীত করা হয়েছিল একবার! আরও আছে। দেবাঞ্জনের বাবা দাবি করেন, তাঁর ছেলে ছোটদের একটি বিখ্যাত ইংরেজি সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছিল। যেজন্য বিশ্বের অনেক বিখ্যাত সিনেমা পরিচালকই তাঁর ছেলেকে চেনেন।


ঘটনা হল, প্রতিবেশীরা কি বোকা? তাঁদের মধ্যে কি এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন জাগত না? 


আরও পড়ুন: উপনির্বাচন যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিত, প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব: Mamata


জাগত বৈকি। দেবাঞ্জনের আইএএস-ত্ব নিয়ে পড়শিদের মধ্যে সন্দেহ ছিলই। কারণ যে ছেলে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন তিনি কীভাবে এক বছরের মধ্যে আইএএস হয়ে গেলেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন তৈরি করেছিল। পড়শিরা যখনই এ ব্যাপারে কিছু জানতে চাইতেন তখনই মনোরঞ্জন কথার অছিলায় সে সব ঘুরিয়ে দিতেন বলেই দাবি তাঁদের।


আর তাঁরা চোখের সামনে দেখতে পেতেন কী? 


আইএসএসের পাড়া বলে কথা! হোসেনপুর এলাকায় বিদ্যুত্‍ চলে গেলেও দ্রুত চলে আসত সংযোগ। দেবাঞ্জেনের বাড়ির সামনে আঁটা আইআইএস বোর্ড। নীলবাতি লাগানো গাড়িও দাঁড়িয়ে থাকত সবসময় (আগে লালবাতি নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলাচল করলেও গত দু'বছর নীল বাতিতেই চলাচল)। বাড়িতে দামি ব্রিডের কুকুর। শুধু তাই নয়, রাস্তার উপর আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকত দেবাঞ্জনের সরকারি স্টিকার লাগানো গাড়ি। পড়শিরা অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হতেন। প্রভাব-প্রতিপত্তির নানা পরত।


তবে এখন পড়শিরা বলছেন, এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন দেবাঞ্জনকে নিয়ে চূড়ান্ত মিথ্যেই বলে বেড়াতেন দেবাঞ্জনের বাবা। মিথ্যাচরণ করতেন স্বয়ং দেবাঞ্জনও।


কীরকম মিথ্যে? 


যেমন, দেবাঞ্জন এলাকার একটি ক্লাবকে জানিয়েছিলেন তিনি তাদের দু'লক্ষ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করে দেবেন। যেহেতু  শীর্ষস্তরের কর্তাদের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি রয়েছে, তাই প্রভাব খাটিয়ে তিনি তাদের জন্য বেশি টাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। দু'বছর আগে এই টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেননি তিনি।


এখন দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। 


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 


আরও পড়ুন: একশো দিনের কাজে ফের সাফল্য রাজ্যের, ৪০ দিনে কর্মদিবস বাড়ল প্রায় দশ গুণ