দুই ভাইয়ের ছকে গিরীশ পার্কের সোনার দোকানে `লুঠ`! তদন্তে নেমে হতবাক পুলিস
দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। এক ভাই লুঠ করে, অন্য ভাই লুঠের সোনা লুকোতে সাহায্য় করে।
অয়ন ঘোষাল ও পিয়ালি মিত্র: গিরীশপার্কে সোনার দোকানে লুঠের তদন্তে নেমে হতবাক পুলিস। যারা আক্রান্ত, তারাই মূল চক্রী! অভিযোগকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পর্দাফাঁস। দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। এক ভাই লুঠ করে, অন্য ভাই লুঠের সোনা লুকোতে সাহায্য় করে। উল্টোডাঙা রেল আবাসনের কাছে একটি ক্লাব লাগোয়া পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে সমস্ত সোনা।
যে আক্রান্ত, সেই আসল চক্রী, সবটাই নাটক, গিরীশ পার্ক লুঠের তদন্তে নেমে স্তম্ভিত পুলিস। জানা গিয়েছে, নীতিশ ও তার ভাই নীতীনের যৌথ কারসাজিতেই লুঠ। এমনকী মূল চক্রীও নীতিশ। সোমবার রাতে গিরীশ পার্ক থানায় মাথায় আঘাত নিয়ে পৌঁছায় নীতিশ। জানায়, ট্যাক্সি করে দুই দুষ্কৃতী এসে সিংহীবাগানের অফিস থেকে সোনা লুঠ করে নিয়ে গেছে। লুঠ হওয়া সোনার পরিমাণ প্রচুর। ৮১১৬ গ্রাম সোনার ৭ টি বাট এবং ৭৪৩ গ্রাম সোনার ১ টি বাট।
নীতিশ বাধা দিলে তাকে আঘাত করা হয়েছে বলেও সে দাবি করে। অভিযোগকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় থেকেই একাধিক অসঙ্গতি ধরা পরে পুলিসের চোখে। পরে লাগাতার জেরায় ভেঙে পরে নীতিশ। স্বীকার করে, লুঠের গল্প সবটাই ভুয়ো। আসলে সোনা লুঠ করেছে সে নিজেই। সেই লুঠ হওয়া সোনা লুকোতে সাহায্য করেছে তার ভাই নীতিন। রাতেই তল্লাশি চালায় পুলিস। উল্টোডাঙা রেল আবাসনের কাছে একটি ক্লাব লাগোয়া পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হয় সমস্ত সোনা এবং নীতিশ ও নীতিনকে গ্রেফতার করেছে গিরীশ পার্ক থানা।
সূত্রের খবর, সোনার দোকানের মালিক থাকেন ওড়িশায়। এখানে তাঁর সোনার ব্যবসা দেখভাল করেন নীতিশ। মূলত বাংলাদেশ সোনা আমদানি করা সোনা গলিয়ে ওড়িশাতে মালিকের কাছে পাঠানোর কাজ ছিল নীতিশের। বছর দেড়েক ধরে কাজ করছেন। রবিবার রাতে আসে দেড় কেজি সোনা। সেটাকে হাতানোর পরিকল্পনা করেন নীতিশ, সঙ্গত দেয় ভাই। সে রাতেই ভাইয়ের কাছে পুরো সোনা দিয়ে দেন নীতিশ। এরপর শুরু করে সোনা লুঠের ভুয়ো ‘প্লট’।
ভাইকে বলেন, একজনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর অফিসে আসতে। নীতিশ ভাইকে বলে দেন সিসিটিভির সামনেই ট্যাক্সি দাঁড় করাতে। সাজানো ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী, এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে দাদার অফিসের আসেন ভাই। কিছুক্ষণ পরে একটি ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে ট্যাক্সি করে বেরিয়ে যান তারা। এরপর নিজেই নিজের মাথা ফাটিয়ে পুলিসের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। বলেন, দুই ব্যক্তি এসে তাঁর মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে সোনা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে।
এরপরই তদন্ত নামে পুলিস। সিসিটিভতে দেখা যায়, সত্যিই দুই ব্যক্তি তার অফিসে ঢুকছে মাস্ক পড়ে। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু গোটা প্লটকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে যে সিসিটিভির সামনে ভাইকে ট্যাক্সি দাঁড় করাতে বলেছিল নীতিশ সেই সিসিটিভি ফুটেজই তদন্তকারীদের হাতে মোক্ষম একটি ক্লু তুলে দেয়।
তদন্তকারীরা দেখেন, ওই দুই ব্যক্তি বেরিয়ে যাওয়ার পর একবার বেরিয়ে যাচ্ছেন নীতিশ। তখন তাঁর মাথায় বা মুখে কোথাও ব্যান্ডেজ নেই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় মাথা ও মুখে ব্যান্ডেজ করে ফিরে আসছেন নীতিশ। তাছাড়া যে দু’জন সোনা লুঠ করে নিয়ে গেলে চিৎকর ছুটে এসে লোককে জানানোর কাজও করেননি তিনি। সন্দেহ বাড়তেই চেপে ধরা হয়। লাগাদার জেরায় ভেঙে পড়ে আসল গল্প স্বীকার করেন অভিযুক্ত। ফলে নিজের মাথা ফাটিয়ে হল না শেষ রক্ষা। আপাতত ভাইকে নিয়ে শ্রীঘরে নীতিশ।
আরও পড়ুন, TMC: 'ওঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিন', রাজ্যপালের কাছে বলবেন শুভেন্দুরই এই প্রাক্তন সতীর্থ!