অয়ন ঘোষাল: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার ফলে এবার ২০২০ সালের ক্ষতিপূরণের সুযোগ থাকল না বাজি বিক্রেতাদের কাছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে কালীপুজো, দীপাবলি বা ছট এই সব ক্ষেত্রেই জনগন মাত্র দুই ঘণ্টা আতসবাজি ব্যাবহার করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র গ্রিন বাজিই ব্যাবহার করতে পারবেন তারা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রাজ্যে আতসবাজি নির্মাণ ও বিক্রির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ১১ লক্ষ পরিবার। কুটির শিল্পের হিসেবে দেখলে প্রতি পরিবারে যদি গড়ে ৪ জন করে সদস্য থাকে তাহলে এই শিল্পে পেট চলে প্রায় ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষের। কাঁচামাল কেনার টাকা, মূলধনের অভাব, সময়মতো ব্যাঙ্ক বা ক্ষুদ্র ঋণ না পাওয়া এবং লকডাউন সহ আনুষঙ্গিক কারনে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ২০২০ সালে কার্যত বেকার ছিলেন। আশা ছিল গতবারের ক্ষতি এবার পূরণ হবে। 



গ্রিন বাজিতে বোরিয়াম নাইট্রেট নামের কেমিক্যাল থাকতে পারবে না। সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম নাইট্রেট থাকবে একটি নির্দিষ্ট বেঁধে দেওয়া মাত্রায়। সেই মাত্রা কত তার ট্রেনিং নিতে হবে বাজি প্রস্তুতকারিদের। মহারাস্ট্রের নাগপুরে National Environment Engineering Research institute (NIRI)-তে বিশেষজ্ঞরা বাজি নির্মাতাদের এই প্রশিক্ষণ দেবেন। ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ শিবিরের পর বাজি নির্মাতাদের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। সেই সার্টিফিকেট না থাকলে গোটা দেশে অন্য কেউ কোনোভাবেই আর আতসবাজি তৈরি করতে পারবেন না। কারণ গ্রিন বাজি ছাড়া অন্য সব রকমের বাজি নিষিদ্ধ গোটা দেশেই। 


এরপরেই শুরু হয়েছে সমস্যা। বোরিয়াম নাইট্রেট একটি সুলভ ও সহজলভ্য কেমিক্যাল। এর দামও কম। মাত্র ৮০ টাকায় পাওয়া যায় ১ কেজি । এই ১ কেজি দিয়ে কমপক্ষে ১০ কেজি বাজি তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু এর পরিবর্তে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করতে বলা হয়েছে , তা ভারতে একটি মাত্র বহুজাতিক সার ও রাসায়নিক কম্পানি উৎপাদন করে এবং এর দামও প্রায় পাঁচ গুন বেশি । 


আরও পড়ুন: Fire Crackers: কালীপুজো-দীপাবলিতে কীভাবে বাজি ফাটানো যাবে? নিয়ম জানাল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ 


এছারাও সোডিয়াম ও পটাশিয়াম কত পরিমাণে মিশ্রণ করতে হবে তা NIRI-র ট্রেনিং ছাড়া বোঝা সম্ভব না। করোনাকালে সময়মতো ট্রেড ও ফায়ার লাইসেন্স এবং এক্সপ্লোসিভ মেটেরিয়াল লাইসেন্স নবীকরণ না করতে পারায় পশ্চিমবঙ্গের আতসবাজি নির্মাতাদের ৭০ শতাংশ এই বছর NIRI-র ট্রেনিং নিতে পারেননি। এই তিনটি লাইসেন্স আপ টু ডেট বা থাকলে NIRI ট্রেনিং দেয়না। 



শুধু মহেশতলা পৌরসভার নুঙ্গি বাজি বাজারেই বাজি নির্মাণের লাইসেন্স আছে ২৫ জনের। সেই বাজি বিপণনের লাইসেন্স আছে ২০০ জনের। তাদের থেকে পাইকারি দরে বাজি কিনে তা খুচরো দরে বেচার লাইসেন্স আছে ২৫০০ জনের। এ ছাড়া অজস্র এমন মানুষ আছেন, যারা সারা বছর নিজেদের  দোকানে অন্য সামগ্রী বেচেন। কালীপুজোর আগে আতসবাজি বেচেন। এদের সবাই বেকায়দায় পড়েছেন কোর্টের নিরদেশের ফলে। কারণ নুঙ্গি থেকে ২৫ জন নির্মাতার একজনও আপ টু ডেট কাগজপত্রের অভাবে এবার NIRI-র ট্রেনিং নিতে পারেন নি। 


এই নির্দেশের ফলে গোটা রাজ্যে এবার বাজি কুটিরশিল্পের নিজস্ব উৎপাদন নগণ্য। ভরসা তামিলনাড়ুর শিবকাশী থেকে আসা গ্রিন বাজি। যার উৎপাদন ব্যায় ও পরিবহণ খরচ আকাশ ছোঁয়া। এর ফলেই এখন ফাঁকা নুঙ্গির বাজার।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)