নিজস্ব প্রতিবেদন: ২০১১-র সংগ্রামপুর বিষ মদকাণ্ডে সাজা ঘোষণা করল আলিপুর আদালত। দোষীসাব্যস্ত নূর ইসলাম ওরফে খোঁড়া বাদশাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনালেন বিচারপতি। ১০ বছর পর এই মামলার রায়দানের সময় কোর্ট রুম ছিল নাটকীয়তায় ভরা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সোমবার ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর পৌনে দুটো। আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতের লকআপ থেকে কড়া পুলিশি ঘেরাটোপে কোর্ট রুমে নিয়ে আসা হয় খোঁড়া বাদশাকে। তার পরেন হলুদ শার্ট, লুঙ্গি। সংগ্রামপুর বিষ মদকাণ্ডে শনিবার খোঁড়া বাদশার স্ত্রী-সহ ৭ জনকে প্রমাণে অভাবে খালাস করে দেন ৬ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারপতি পুষ্পল শথপতি। তবে দোষী সাব্যস্ত করেন খোঁড়া বাদশা। সোমবার সকালেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, দুপুর ২টো নাগাদ রায় ঘোষণা করবেন। সেই মতো রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে নিয়ে আসা হয় দোষীসাব্যস্ত খোঁড়া বাদশাকে। কোর্ট রুমে আইনজীবী থেকে সংবাদিকদের ভিড়। আইনজীবীদের উদ্দেশ্য তার মন্তব্য, ‘বিষমদ খেয়ে কেউ মারা যায়নি। অসুস্থদের ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে হলুদ সেলাইন দিয়ে ভুল ট্রিটমেন্ট করা হয়।' তাঁর আরও দাবি, 'বিষমদে মারা গেলে, যারা কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি ছিল তাঁরাও তো মারা যেত!' 


আরও পড়ুন:'Dilip-Kunal-কে নয়, ওঁদের মন্তব্যকে অমার্জিত বলেছি', বললেন Babul Supriyo


দুপুর আড়াইটে নাগাদ এজলাসে আসেন বিচারক। প্রথমে খোঁড়া বাদশার কাছে তাঁর কিছু বলার আছে কিনা জানতে চান তিনি। কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় ‘বাদশা’কে। দশবছরের বেশি সময় জেলবন্দি। প্রতিবন্ধী জীবন। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী ও চার সন্তান। তাদের কথা বিবেচনা করে যতটা সম্ভব কম সাজার দেওয়ার আর্জি জানান অভিযুক্ত। তাঁর উদ্দেশ্য বিচরক শথপতির প্রশ্ন, 'এতগুলো নিরহ লোকের যে প্রাণ গেল। এত লোক বিকলঙ্গ হয়ে গেল তা নিয়ে আপনার কী বক্তব্য?' খোঁড়া বাদশার জবাব, ‘আমি এই ব্যবসা করতাম না। অন্যজন করতো।’ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বার বার কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে এটি বিরলের মধ্যে বিরল ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সাজার আর্জি জানান বিশেষ সরকারি আইনজীবী তমাল মুখাপাধ্যায়, সান্তনু দত্তরা। কোনও রকম আবেগের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বিচারপতিকে রায় দানের আর্জি জানান খোঁড়া বাদশার আইনজীবী। 


আরও পড়ুন: কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, রাজ্যসভায় যাচ্ছেন Mamata-র Jawhar


দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর রায় ঘোষণা করতে বিচারপতি দশ মিনিট সময় চেয়ে নেন বিচারপতি। মিনিট দশেক পর ফিরে এসে নুর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনান বিচারপতি। একইসঙ্গে অন্যান্য ধারাতেও তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  ২০১১-র ডিসেম্বরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুর, মন্দিরবাজার ও মগরাহাট এলাকায় বিষমদে মৃত্যু হয় ১৭২ জনের। অসুস্থ হয়ে পড়েন শতাধিক মানুষ। তার মধ্য অনেকে বিকলঙ্গ হয়ে পড়েন। সব মিলিয়ে তিনটি মামলা রুজু হয়। দুটির তদন্তভার নেয় সিআইডি। ২০১৮-তে উস্তি থানার মামলাটিতেও খোঁড়া বাদশা-সহ চারজনের আমৃত্যু কারাবাস হয়। মন্দিরবাজারের মামলায় যদিও সকলেই বেকসুর খালাস পেয়ে যান। সোমবার রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন খোঁড়া বাদশা এবং তার পরিবারের লোকজন। কিন্তু এতজন নিরহ লোকের মৃত্যুর ঘটানার সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় স্বস্তি পান এই মামলার তদন্তকারী অফিসার এবং সরকারি আইজীবীরা।