ওয়েব ডেস্ক: স্রেফ ভাঁওতাবাজির জোরে কোঠারি হাসপাতালের শিখর ছুঁয়েছিল অজয় তিওয়ারি । পসার জমিয়েছিল শহর জুড়ে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ডাক্তারির প্রাথমিক ডিগ্রিই নেই। অথচ অজয় তিওয়ারি কোঠারি হাসপাতালে যোগ দেয় হাউস স্টাফ হিসেবে। সালটা ১৯৯৬। গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিস্ট KN জালানের অধীনে কোঠারি হাসপাতালে হাউস স্টাফ হিসেবে যোগ দেয় অজয় তিওয়ারি। কাজ করতে করতে আর এক গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিস্ট সব্যসাচী পট্টনায়েকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় অজয় তিওয়ারির। সব্যসাচী পট্টনায়েকের অধীনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অজয় তিওয়ারিই দেখাশোনা করত বলে সূত্রের খবর।


K.N জালান মারা যাওয়ার পরে অজয় তিওয়ারি হয়ে ওঠে কোঠারি হাসপাতালের কনস্যালট্যান্ট গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্ট। কয়েকবছর আগে সব্যসাচী পট্টনায়েক কোঠারি ছাড়ার পর গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজি বিভাগের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে অজয় তিওয়ারি । এন্ডোস্কপি, কোলোনোস্কপি, ERCP, MRCP-ও করত অজয় তিওয়ারি, অস্ত্রোপচারও করত। জটিল কেস হাতে এলেই অজয় তিওয়ারি সব্যসাচী পট্টনায়েকের পরামর্শ নিত বলে সূত্রের খবর ।


অজয় তিওয়ারির কীর্তি ফাঁসের পর সব্যসাচী পট্টনায়েকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি। সব্যসাচী পট্টনায়েক জানিয়েছেন, তিনি অজয় তিওয়ারিকে একজন ডাক্তার হিসেবেই চিনতেন। এবং একজন ডাক্তার অন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই পারেন। প্রশ্ন উঠছে কোঠারি হাসপাতালের ভূমিকা নিয়েও। একুশ বছর ধরে এক ভুয়ো চিকিত্‍সক তাদের সঙ্গে যুক্ত রইল। অথছ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একবারও তথ্য যাচাই করার কথা মনে হল না? সূত্রের খবর,


কোঠারি হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মীকে নিয়মিত টাকা দিয়ে হাতে রেখেছিল অজয় তিওয়ারি। কোঠারিতে আসা সিংহভাগ গ্যাস্ট্রো পেশেন্টকেই তাঁর অধীনেই ভর্তি করাতেন ওই কর্মীরা। হাসপাতালে কর্তাব্যক্তিদের অনেকের সঙ্গেও অজয় তিওয়ারির নিয়মিত ওঠাবসা ছিল বলে সূত্রের খবর।


বদমেজাজি ও খারাপ ব্যবহারের জন্য দুর্নাম থাকলেও কোঠারিতে অজয় তিওয়ারিকে কোনওদিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি । কয়েকমাস আগে দিল্লিতে ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজির সেমিনারে বক্তব্যও রাখেন অজয় তিওয়ারি । অজয় তিওয়ারির গ্রেফতারির খবর সম্প্রচার হতেই বিবৃতি দিয়েছে কোঠারি হাসপাতাল। তাদের দাবি, কোঠারি হাসপাতালে সব সময়ের ডাক্তার ছিলেন না অজয় তিওয়ারি। ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাঁকে নিয়োগ করা হয়। অজয় তিওয়ারি দাবি করেন, তাঁর কাছে অসম মেডিক্যাল কাউন্সিলের MBBS ডিগ্রি রয়েছে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্দেশ মতো সব ডাক্তারকে এরাজ্যের রেজিস্ট্রেশন করাতে বলা হয়। তার পর থেকেই অজয় তিওয়ারি হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দেন।


কোঠারি ছাড়াও কলকাতা শহরের একাধিক নার্সিংহোম ও ক্লিনিকে রোগী দেখত অজয় তিওয়ারি। সেগুলি হল,  একবালপুরের বেলোনা নার্সিংহোম, গার্ডেনরিচের প্রতিভা ক্লিনিক, গার্ডেনরিচের গ্র্যান্ড পলিক্লিনিক, খিদিরপুরের গণেশ মেডিক্যাল, কলেজ স্ট্রিটের ফেয়ার ওয়ে, এন্টালির হরাইজন এবং দমদমের ILS হাসপাতাল। বেলোনা নার্সিংহোমের কর্ণধার ড. কাসেম ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কলকাতা শাখার সহ সভাপতি। তিনি জানান, বেলোনা নার্সিংহোমের সঙ্গে অজয় তিওয়ারি সরাসরি যুক্ত নয়। অন্য ডাক্তারের রেফারেন্সে রোগী দেখতে আসত সে। কয়েকদিন আগে তার সম্পর্কে তথ্য চায় রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। ড. কাসেম তখন নিজের সন্দেহের কথা মেডিক্যাল কাউন্সিলকে জানায়। কীসের জোরে একুশ বছর ধরে ভাঁওতাবাজি চালিয়ে গেল অজয় তিওয়ারি? আপাতত তারই খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা।