অয়ন ঘোষাল: অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম। সেখানকার জমিদারি রাতারাতি খোয়াতে হয় সম্ভ্রান্ত বড়ুয়া পরিবারকে। দেশভাগের পরে একরাশ যন্ত্রণা বুকে নিয়ে সামান্য কিছু নগদ পুঁজি সম্বল করে ট্রেনে চেপে চলে আসতে হয় শিয়ালদহ। মাথা গোঁজার ঠাঁই হল লেবুতলা পার্ক, অধুনা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার-লাগোয়া সার্পেন্টাইন লেনের এক বাড়িতে। যতীন্দ্রনাথ বড়ুয়া (জে এন বড়ুয়া)-র কথা হচ্ছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: West Bengal Weather Update: কাঁপতে শুরু করেছে কলকাতা, কুয়াশামাখা পথের ধারেই তৈরি আগুন...


এদেশে পা দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই যতীন্দ্রনাথ বড়ুয়া তথা জে এন বড়ুয়া বুঝতে পারলেন, ওপার বাংলা থেকে আনা পুঁজি দিয়ে বেশিদিন টানা যাবে না। একটা কিছু করা দরকার। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ১৯৪৭ সালে, বড়দিনের ঠিক এক মাস আগে যতীন্দ্রনাথ কেকের দোকান দিলেন। যেমন-তেমন কেক নয়, ছানার কেক।


প্লাম কেক খেয়ে-খেয়ে একঘেয়ে হয়ে যাওয়া অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটি তখন টেরিটি বাজার, বউ বাজারের একচেটিয়া বাসিন্দা। বউ বাজারের অ্যাংলোপাড়ার গায়েই দোকান খুলে যতীন্দ্রনাথ তাঁদের মুখে তুলে দিলেন তাঁর উদ্ভাবন-- ছানার কেক। রসনার একঘেয়েমি কাটানোর সেই শুরু। জন্ম নিল বড়ুয়ার 'ছানার কেক' তথা 'ছানা পোড়া'।


নদীয়ার ফুলিয়া থেকে আনা টাটকা ছানার সঙ্গে কাজু, ওয়াইন মিশিয়ে যে এরকম অবিশ্বাস্য সুস্বাদু কেক তৈরি করা যায়, তা চেখে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারেননি কেউই। সেই থেকে নিপাট বাঙালি এক প্রতিষ্ঠানের কেক-যাত্রার শুরু। প্রথমে জে এন বড়ুয়া, তারপর তাঁর বড় ছেলে মন্টু বড়ুয়া। মন্টুর প্রয়াণের পর ব্যবসার হাল ধরেন রতন বড়ুয়া। জে এন বেকারি হয়ে উঠল সাহেবি কেকের বাঙালি প্রতিপক্ষ। বাজারে তখন রাজত্ব করছে নাহুমস, ইম্পেরিয়াল, সালডানহা। কিন্তু চোখে চোখ রেখে লড়ল বড়ুয়ার কেক শপ। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে একে একে বড়ুয়াদের বেকারি থেকে বেরোতে শুরু করল-- রেড ওয়াইন কেক, রাম কেক, ওয়ালনাট কেক, ফ্রুট কেক, প্লাম মিক্স কেক, চমচম কেক। সব মিলিয়ে প্রায় ২২ রকম কেকের বৈচিত্র্যে কলকাতার কেক-রসনা স্বাদের অনন্য জগতে ঢুকে পড়তে পারল।


কী বলছে খোদ জে এন বড়ুয়া? জে এন বড়ুয়া বেকারির কর্ণধার রতন বড়ুয়া জানান, ব্যাপক প্রতিযোগিতার বাজারেও প্রতি বড়দিনে এবং তার আগে-পরে দৈনিক ৮০০ কেজি কেক তৈরি হয় তাঁদের কারখানায়। দেশি-বিদেশি বহুজাতিক ব্র্যান্ডের ভিড়েও বাংলার নিজস্ব কেক রয়েছে স্ব-মহিমাতেই।


আরও পড়ুন: Purbasthali: নেই কেন সেই পাখি নেই! চুপির চর থেকে চুপি চুপি মুখ ফেরাচ্ছে পাখিরা, পর্যটকেরাও...


তবে, আর কতদিন? 'কে লইবে মোর কার্য'? বিষাদের সুর রতন বড়ুয়ার গলায়। বিবাহসূত্রে এই পরিবারের একমাত্র কন্যা বিদেশে। কলকাতায় থেকে গিয়েছেন প্রবীণ দম্পতি। তাঁরাই এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের পর কে নেবে বাংলার এই কেক ফ্যান্টাসির দায়িত্ব?


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)