নিজস্ব প্রতিবেদন : কাঁকুরগাছির ৩২ নাম্বার রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের ফ্ল্যাট থেকে অমিতের ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ব্যাগ উদ্ধার করল ফুলবাগান থানার পুলিস। ব্যাগের ভিতর ল্যাপটপের পাশাপাশি মিলেছে একটি অব্যবহৃত ম্যাগাজিনও। যা দেখে পুলিস মনে করছে, শাশুড়ির পর অমিতের সম্ভাব্য টার্গেট ছিল শ্বশুর। তবে তিনি ও বাড়ির রান্নার এক পরিচারিকা কোনওরকমে পালাতে সক্ষম হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। অমিতের ল্যাপটপ ঘেঁটে পুলিস জানতে পেরেছে, ২ মাসের লক ডাউনে নিজের ল্যাপটপে অমিত একটানা আগ্নেয়াস্ত্র এবং বুলেট নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করে। কীভাবে পিস্তলে বুলেট ভরতে হয়? কীভাবে হ্যামার প্রেস করতে হয়? কীভাবে ট্রিগার করতে হয়? গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে এসব নিয়েই পড়াশোনা করেছে অমিত। তারপর নিজের কিছু ক্লায়েন্টের থেকে নাম্বার জোগাড় করেই অমিত আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করেছে বলে মনে করছে পুলিস।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস জানিয়েছে, শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেই শাশুড়ি ললিতাদেবীকে পানীয় জল আনতে পাঠায় অমিত। শাশুড়ি জল নিয়ে বাইরের বসার ঘরে আসা মাত্র অমিত গুলি চালায়। তবে প্রথম গুলিটা পিস্তলে লক হয়ে যায়। আনলক করে দ্বিতীয় গুলিটি চালায় অমিত। কিন্তু সেটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে দরজায় লাগে। এরপরই একেবারে এগিয়ে এসে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তৃতীয় গুলিটি করে অমিত। সেটি কপালে লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শাশুড়ির। এরইমাঝে কোনওমতে পালিয়ে যান শ্বশুর ও রান্নার পরিচারিকা। পুলিসের অনুমান, সবাইকে খুন করে নিজেকে গুলি করার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল অমিত। আর সেই কারণেই পর্যাপ্ত গুলি নিয়ে আসে সে।


কিন্তু কেন এভাবে সবাইকে খুনের ছক কষে অমিত? সম্পর্কের টানাপোড়েন নাকি অন্য কিছু? তদন্তে নেমে পুলিসের হাতে উঠে এসেছে মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা। সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে অমিতের কাছে যেন 'পদে পদে বাধা' হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শিল্পী। আর তাই সেই 'বাধা' সরিয়ে দিতেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কাঁকুরগাছি কাণ্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এমনটাই জানাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসাররা। জানা গিয়েছে, অমিত-শিল্পী দুজনেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ছিলেন। বিয়ের আগে ১৭ বছর যুগলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরপর ১৪ বছর আগে বিয়ে। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় দম্পতির একটি পুত্রসন্তান হয়। আর তারপরই শুরু হয় অশান্তি। 


মা হওয়ার পর শিল্পী সমস্তরকম কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য পুরোদস্তুর গৃহবধূ হয়ে যান। তখন থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে অমিতের আচরণ। অভিযোগ, স্ত্রী শিল্পীর সঙ্গে সন্তানের আয়ার মতো ব্যবহার করতে শুরু করেন অমিত। হাতখরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন। শেষ জুতো কিনে দিয়েছিলেন ৪ বছর আগে। শেষবার শাড়ি কিনে দেন ২০১৬র দিওয়ালিতে। এমনকি একবার মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখার পর ৮০ টাকা দিয়ে কফি খওয়ার 'অপরাধে' প্রকাশ্য রাস্তায় সবার সামনে শিল্পীকে অপমান করেন অমিত। তবু সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংসার ভাঙতে চাননি শিল্পী। পরিস্থিতি চরমে ওঠে ২০১৮ সালে। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ২টি চাকরির সুযোগ পান অমিত। বাধা দেন শিল্পী। দেশ ছাড়তে বারণ করেন অমিতকে। এই বাধায় সায় দেন শিল্পীর মা, বাবা ও ভাই। 


শিল্পীর ভাই বিনীত ঢনঢনিয়া জানিয়েছেন, তিনি কর্মসূত্রে গুরুগ্রামে থাকেন। সেদিন তাঁকে কলকাতায় আসার জন্য বার বার ফোন করেন অমিত। মিনিট ১৫-র জন্য রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের ফ্ল্যাটে আসার জন্য জোর করা হয় তাঁকে। বিনীত ঢনঢনিয়ার দাবি, শিল্পীকে শেষ করার পর অমিতের পরবর্তী টার্গেট ছিলেন মা, বাবা ও তিনি। কারণ অমিতের সুইসাইড নোটে যাঁর যাঁর নাম লেখা ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন হিট লিস্টে। আর সুইসাইড নোটে তাঁদের প্রত্যেকের নাম রয়েছে। শিল্পীর গোটা পরিবারকে একদিনে একসঙ্গে শেষ করাই ছিল অমিতের লক্ষ্য। 


আরও পড়ুন, স্ত্রীকে খুনের ছক থেকে শাশুড়ি-শ্বশুরের প্রতি আক্রোশ! ৫০ পাতার সুইসাইড নোটে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য