দেবস্মিতা দাস:  ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ছবি যে পেশাগত জীবনে এক বড় প্রভাব ফেলে দিতে পারে, এমন ভাবনা কোনওদিন মনেই আসেনি তাঁর। পেশায় অধ্যাপিকা তিনি। ছাত্রছাত্রীদের জীবনের পাঠ শিখিয়ে চলেন কিন্তু 'ব্যক্তিগত' পরিসরেও যে আঘাত হানতে পারে একটি ছবি, তা যেন কল্পনাতীত! এমনই একটি ঘটনায় শোরগোল পড়েছে শহরে। অভিযোগ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তা শহরের প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যেই একটি। এহেন শিক্ষাঙ্গনেই এমন ঘটনায় চাকরি খুইয়েছেন এক অধ্যাপিকা। সোশাল মিডিয়ায় তাঁর পোস্ট করা ছবিকে 'আপত্তিজনক', 'অশ্লীল'- এমনই সব বাক্যবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে এক পড়ুয়ার পরিবারের তরফে করা অভিযোগপত্রে।  ঘটনাটি ঘটেছে ২০২১-এর অক্টোবরে। ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের স্টোরিজে সুইমস্যুট পরিহিত ছবি দিয়েছিলেন। তাই নিয়ে’ নীতি পুলিসি’র শিকার সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অধ্যাপিকা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন, Kolkata's St Xavier’s University: তাঁর বিকিনি-ছবিতে মজে পড়ুয়া, অভিযোগের জেরে কলেজ ছাড়তে বাধ্য হলেন অধ্যাপিকা


জানা গিয়েছে, স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার বাবা অভিযোগের ভিত্তিতেই ইংরাজি বিভাগের ওই অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। অভিযোগ, অধ্যাপিকা বিকিনি পরে যে সব ছবি দিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে, সেই ছবিগুলি অভিযোগকারীর ছেলে দেখে চলেছিল। যা তাঁর মায়ের চোখে পড়ে যায়। এরপরেই  অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানান তাঁরা। সেই অভিযোগের চিঠিই সম্প্রতি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। পড়ুয়ার বাবা বিকে মুখোপাধ্যায় লেখেন, 'সম্প্রতি আমার ছেলেকে প্রফেসরের কিছু খোলামেলা ছবি দেখতে দেখে আমি অবাক হয়েছি। শরীরে যৌন আবেদন রয়েছে,  ইচ্ছাকৃতভাবে সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছন ওই প্রফেসর। অন্তর্বাস পরিহিত এক শিক্ষিকার সেই ছবি দেখা অভিভাবক হিসেবে আমার জন্য লজ্জাজনক। এই ধরনের অশ্লীল ছবি দেখা থেকে ছেলেকে বিরত রাখতে আমি যেমন সচেষ্ট তেমন প্রফেসর হিসেবে এই কাজ করাটাও অনুচিত।'


কিন্তু এই অভিযোগটি নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এসেছে শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপিকার ব্যক্তিগত পরিসরের ক্ষেত্রটিও। একবিংশ শতকে 'আধুনিক' সমাজে এই অভিযোগ আদৌ কতটা নীতিগ্রাহ্য তা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। এই  ঘটনার নিন্দা করেছেন সমাজের  প্রায় সর্বস্তরের মানুষ। এই  বিষয়ে সমাজকর্মী  রত্নাবলী রায় বলেন, 'এটা তো অত্যন্ত ধিক্কারজনক ঘটনা। এর বিপরীতে যা বলা হচ্ছে সেই যুক্তি কিন্তু আদতে সাইবার স্টকিং। আর এটা কিন্তু অনেকটাই Voyeurism।  তাই এই সকল তথ্য না জেনে কলেজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। একজন পুরুষের কস্টিউম পরা ছবি হলে তারা কি এটা করতে পারতেন? এটা কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধিতে আইনযোগ্য অপরাধের মধ্যেই। ভীষণ অন্যায়। শুধু তাই নয়, কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করা শিক্ষার্থী ফোনে কী দেখছেন সেটা যেমন ব্যক্তিগত পরিসরে প্রবেশাধিকারকে লঙ্ঘন করছে, তেমনভাবেই প্রতিটা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার, কায়েম করার সাংঘাতিক প্রবণতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এভাবে তো সন্তানকে আগলে রাখা যায় না।'


একইসঙ্গে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বয়ান ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, 'অত্যন্ত রিগ্রেসিভ একটি ইন্সটিটিউট। মেয়েদের গোলগলা টি শার্ট পরা বন্ধ করা, মেয়েদের ফুটবল টিমে না নেওয়া কারণ সেখানে তাদের শর্টস পরতে হবে তাই। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বন্ধ হয়, সেখানে তো এই ঘটনা নতুন কিছু দিগনির্দেশ করে না বরং এটাই আশা করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মহিলাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে দায়ভার নিতে হবেই। এটা অন্যায়। '


অন্যদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ির কথায়,  'কিছু বিষয় সকলকে মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন আলাদা করা দরকার৷ যে ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে সেখানে এটাই বলার  তিনি কীভাবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন যাপন করবে সেখানে কিছু বলার অধিকার কারওর নেই। না বলাটাই বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। কারণ ছাত্রছাত্রীরা তো অনেকটা পরিণত হয়েই আসেন। তাদেরও মানসিক স্বাধীনতা রয়েছে, বিচারবুদ্ধি রয়েছে কী করবেন কী করা উচিত নয় যাতে অন্যের ক্ষতি হতে পারে৷ পোশাক নয় আসলে সমস্যা হয় বিকৃত মানসিকতার। একজন অভিভাবক যেভাবে বসন নিয়ে কথা বলছেন এবং থানায় সেই অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে, আজকের যুগে দাঁড়িয়ে এটাতেই আমার আপত্তি রয়েছে। কেউ ব্যক্তিগত জীবনে কী পরে রয়েছেন সেটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তও আমাকে অবাক করেছে এবং এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দাজনক।'


এদিকে এই ঘটনা নিয়ে অধ্যাপিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'সেন্ট জেভিয়ার্সের কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছে তবে তা আমার পাঠানো আইনি নোটিসের জবাব। প্রথমে আমি পূর্ব যাদবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করি। সেখানে এফআইআর নেওয়া হয়নি। এরপর অনেকজায়গায় ঘুরেছি। শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় এফআইআর টেকনো সিটিতে করা হয়েছে। আমি যতদূর জানি সেটার তদন্ত চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজের ব্যক্তিগত ভাবনাকে চাপিয়ে দিয়েছে নৈতিকতার নামে। একজন মহিলা ব্যক্তিগত জীবনে কী পরবেন কী পরবেন না সেটা তো এভাবে ঠিক হতে পারে না৷' তবে জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের তরফে এই ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। 


আরও পড়ুন, SSC, Bratya Basu: কোন পথ সমাধান? এসএসসি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক শিক্ষামন্ত্রীর


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)