Madan Mitra: হয়তো ওঁর চোখের বিষ হয়ে গিয়েছি; গত ৫ বছরে ৫ মিনিটও সময় দেননি মমতা, অভিমানী মদন
Madan Mitra:বাইক দুর্ঘটনায় শুভদীপ পাল নামে এক যুবক জখম হন। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালের ল্যাব টেকনিশিয়ান। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে যান খোদ মদন মিত্র। এসএসকেএম-এর ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে নাকি তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি
শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়: এসএসকেএম হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার করেছেন মদন মিত্র। এমনটাই অভিযোগ উঠছে। এনিয়ে থানায় অভিযোগ জানানো হবে বলে জানিয়েছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। এরকম এক পরিস্থিতিতে গ্রেফতার হতে পারেন এই আশঙ্কায় জামা কাপড় নিয়েই বাইরে বেরিয়েছেন বলে জানালেন কামারহাটির বিধায়ক। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে একরাশ অভিমান ঝরে পড়ল মদন মিত্রের গলায়।
আরও বলুন-মুখ্যমন্ত্রীকে করজোড়ে বলি, আপনার চাকরবাকরের চোখরাঙানি সহ্য করতে পারব না: বিস্ফোরক মদন
শনিবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ে মদন মিত্র বলেন, স্ত্রী এসে খবর দিলেন তোমার বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সঙ্গে দুটো জামা কাপড় নিয়ে যাও। দু-চারটে পাঞ্জাবি নিয়ে নিয়েছি। অ্যারেস্ট হতে পারি। তুলে নিতে পারে। কুণাল সাড়ে চারশোটা কেস খেয়েছিল। ও আমাদের এখন মুখপাত্র। মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মদন মিত্র বলেন, এমনটা হতেই পারে যে উনি এখন আমাকে সহ্য করতে পারছেন না। হতেই পারে। আমি ওঁর চোখের বিষ হয়ে গিয়েছি। হতেই পারে। উনি আমাকে পছন্দ করবেন এর কী গ্য়ারান্টি রয়েছে? ২৩০টা বিধায়ক রয়েছে। কত হরিদাসপাল ঘুরে বেড়াচ্ছে চারপাশে। তৃণমূল কংগ্রেসে আমার কী অবদান রয়েছে? বলেছেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন? কিন্তু মানুষের জন্য, এই মুহূর্ত যদি কোনও মুমূর্ষু রোগী আসে তাহলে একজন বিধায়ক হিসেবে আমি এক্ষুনি এসএসকেএম-এ যাব। তাতে যদি ডান্ডা খেতে হয়, গুলি খেতে হয় তাতে আমি রাজি। কিন্তু মানুষের জন্য আমি রাস্তা ছাড়ব না। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিখিয়েয়েছেন।
বাস্তবিকভাবে মদন মিত্রের গলায় ২ রকম সুর। একদিকে তিনি বলছেন, পিজির সুপার মোটেই গতকাল রাতে ফোন ধরেননি। মুমুর্ষু রোগীর চিকিত্সার জন্য কোনও ব্যবস্থা করেননি। স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথার ভিত্তিতেই তিনি পিজিতে রোগী নিয়ে গিয়েছিলেন। গতকাল রাতে তিনি কোনও গুন্ডাগিরি করেননি। কেউ যদি তা প্রমাণ করতে পারে তাহলে তিনি তাঁর বিধায়ক পদ ছেড়ে দেবেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার কথা বলা হচ্ছে। গতকাল রাতে যে রোগীকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিও একজন স্বাস্থ্যকর্মী। সবমিলিয় চড়া সুর মদনের গলায়।
অন্যদিকে, অভিমানের সুরও ঝরে পড়েছে মদন মিত্রের গলায়। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যদি কোনও নির্দেশ থাকে তাহলে তিনি অবশ্যই তা মেনে নেবেন। কিন্তু তাঁর অধীনস্থ কারও কথা তিনি শুনবেন না। তাতে জেলে যদি যেতে হয় যাবেন। জেলে নিয়ে গেল পার্থর সঙ্গে দেখা হবে। অনেকে আমাকে বলছেন, আপনি তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি মুখ ফুটে বলবেন গত ৫ বছরে তিনি ৫ মিনিট আমার সঙ্গ কথা বলেছেন কিনা? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকার জন্য জেলে থেকেছি। ফিরহাদ হাকিম তাঁকে ফোন করেছিলেন। তাঁকে তিনি বলেছেন গতকাল রাতে কী কী ঘটনা ঘটেছে। ববি আমাকে বলে গুন্ডামি করেছি। প্রমাণ করতে পারলে ইস্তফা দিয়ে দেব। আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আমার পরিবারের উপরে যে আক্রমণ না হয়। আমার পরিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই ভোটার।
এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা থানায় মদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চলেছেন। এই জায়গাতেই অভিমানী মদন মিত্র। তিন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যা বলবেন তা তিনি মাথা পেতে নেবেন। এমনকি নাকখত্ দিতে বললেও তিনি নাকখত্ দিয়ে এসএসকেএম পর্যন্ত যাবেন। কিন্তু তাঁর অধীনস্থ ব্যক্তি চড়া গলায় তাঁর বিরুদ্ধে বলবেন তা তিনি মেনে নেবেন না। এই মদন মিত্রের হাত ধরেই তৃণমূল পিজি চিনেছে। সেই জায়গা মমতার পরিবর্তে তাঁকে কেন এসএসকেএমের সুপার কড়া কথা বলবেন?
বাইক দুর্ঘটনায় শুভদীপ পাল নামে এক যুবক জখম হন। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালের ল্যাব টেকনিশিয়ান। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে যান খোদ মদন মিত্র। এসএসকেএম-এর ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে নাকি তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। গত ১৮ মে রাতে বাইপাসে বাইক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা হয় পরে বেসরকারি হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসা ব্যায়বহুল। তাই পরিবারের লোক মদন মিত্রের দ্বারস্থ হন।
তার পরেই তাঁকে এসএসকেএমে ট্রান্সফার করার চেষ্টা করে তাঁর পরিবার। কিন্তু সেখানে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও রোগীর ভর্তি তো দূরের কথা, প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। এর পরেই সেখানে বিস্ফোরক মদন মিত্র। তিনি বলে দেন--'বাম আমলে অনায়াসে ভর্তি করতে পারতাম ১ মিনিটে। দালালচক্র সক্রিয়। ৫০-২০ হাজার টাকা দিলে চিকিৎসা হয়। সে নো টু পিজি। এটা আর জনগণের হাসপাতাল নয়। আমাদের এরকম অবস্থা তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা।'