Madan Mitra: মুখ্যমন্ত্রীকে করজোড়ে বলি, আপনার চাকরবাকরের চোখরাঙানি সহ্য করতে পারব না: বিস্ফোরক মদন
Madan Mitra:বাইক দুর্ঘটনায় শুভদীপ পাল নামে এক যুবক জখম হন। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালের ল্যাব টেকনিশিয়ান। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে যান খোদ মদন মিত্র। এসএসকেএম-এর ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে নাকি তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। গত ১৮ মে রাতে বাইপাসে বাইক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি
শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়: এসএসকেএম হাসপাতালের কড়া মনোভাবের পরও অনড় মদন মিত্র। শুক্রবার এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে রোগী ভর্তি করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মদন। এমনকি দালালরাজের অভিযোগেও তোলন। এনিয়ে মদনের বিরুদ্ধে দুর্বব্যবহারের অভিযোগ তুলে থানায় অভিযোগ করার কথা বলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারপরও নিজের অবস্থান থেকে সরছেন না কামারহাটির বিধায়ক। তিনি বলেন, গ্রেফতার হতেই পারি। ব্যাগে জামাকাপড় নিয়ে বেরিয়েছি। কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন মদন। তাঁর দাবি, কুণালের বিরুদ্ধে সাড়ে চারশো অভিযোগ রয়েছে। তিনি দলের মুখপাত্র।
আরও পড়ুন-অভিষেককে সিবিআই-এর তলব প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললেন কুণাল ঘোষ
শনিবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এসএসকেএমের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মদন মিত্র বলেন, সামনে একটা ক্লাব আছে। ওখানেই সব বলব। সঙ্গে থাকা ব্যাগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মদনবাবু বলেন, বের হওয়ার সময় স্ত্রী এসে খবর দিলেন, তোমার বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সঙ্গে দুটো জামা কাপড় নিয়ে যাও। দু-চারটে পাঞ্জাবি নিয়ে নিয়েছি। অ্যারেস্ট হতে পারি। তুলে নিতে পারি। কুণাল সাড়ে চারশোটা কেস খেয়েছিল। ও আমাদের এখন মুখপাত্র।
কামারহাটির বিধায়ক এদিন বলেন, গতকাল এমন কোনও কথা বলিনি যার থেকে সরে আসার কোনও কারণ রয়েছে। প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারির সঙ্গে আমার চ্যাটটা রয়েছে। মেডিক্যাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও চ্যাট হয়েছে। প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি আমকে লিখেছেন, পিজিকে বলা হয়েছে। অর্থাত্ কথা না বলে আমি পিটিতে রোগীকে পাঠাইনি। রাত বারোটায় আমি প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিকে বলি, আপনি বলেছেন পিজিতে বলা হয়েছে। রোগী সাড়ে সাতটার সমেয় পিজিতে ঢুকেছে।
মদন মিত্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে আমি করজোড়ে বলে, আমি আপনার চাকর। কিন্তু আপনার চাকরবাকরের চোখরাঙানি আমি সহ্য করতে পারব না। কুকুর ভৌ ভৌ করবে আর মদন মিত্র শুনে নেবে! ডাক্তার বসে আছে যেন গব্বরের মতো। কাল ইডির এক ফোন এলে টেবিলের তলায় কোথায় লুকবে বোঝা যাবে না। আশা করেছিলাম সরকার আমার কথা শুনবে। কারণ আমি শুধু বিধায়ক নয়, এই পিজি হাসপাতাল আমি তৃণমূল কংগ্রেসকে চিনিয়েছি। কংগ্রেসের অনেক নেতাকে এই হাসপাতাল চিনিয়েছি। যার হাতে স্টেথো থাকার কথা তিনি গব্বরের স্টাইলে কথা বললেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, আপনি বলেছেন স্বাস্থ্য কর্মীদের উপরে কোনও হামলা বরদাস্ত করা হবে না। আপনি কি জানেন, এই সুভদীপ পাল ন্যাশনাল মেডিক্যলের একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান? সে সবার আগে একজন স্বাস্থ্যকর্মী। পরশু অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে মাথার উপর দিয়ে গাড়ি চলে গিয়েছে। বুকের পাঁজর ভেঙ্গে গিয়েছে। ওর পরিবারের লোকজন এসে বলল ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছেন তারা থানায় অভিযোগ করবেন, জিরো টলারেন্স? এনিয়ে মদন মিত্র বলেন, ভালো তো। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন। তাইতো ব্যাগ নিয়েই বেরিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকার জন্য ২৩ মাস জেলে ছিলাম। রাত একটায় অরূপ বিশ্বাস বলে, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ওকে দেখেছে। হাসপাতালে জায়গা নেই। তুমি ওকে নিয়ে চলে যাও। তখন আমি বলি, অরূপ তোকে ওরা মিথ্যে বলেছে। রোগীকে দেখেইনি। পেশেন্ট পার্টিকে জিজ্ঞাসা করলেই বুঝতে পারবে। যদি রোগী দেখা হলে তার একটা কাগজ তো থাকবে।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মদন মিত্রের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার ব্যাপারে যে জিরো টলারেন্স নিয়ে চলার নীতি নিয়েছেন তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে স্বাস্থ্যকর্মীরা ওখানে ছিলেন ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন তাদের কাছেও সরকারের অবস্থান পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ওখানে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন তা দায়িত্বের সঙ্গে তাদের কর্তব্য পালন করেছেন। তার পরেও যে খারাপ পরিস্থিতির সঙ্গে পড়তে হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ করছি। কোনওমতেই এসএসকেএম হাসপাতালে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা বরদাস্ত করব না। এরকম হুলিগানিজমের প্রতিবাদ করছি।
গতকাল মধ্যরাতে পিজি হাসপাতালে এসেও রোগী ভর্তি করতে পারেননি মদন মিত্র। তার পরেই তৃণমূলনেতার অভিযোগ করেন, এখানে টাকার বিনিময়ে রোগী ভর্তি করা হয়। এখানে দালালরাজ চলছে। রোগী ভর্তি করতে না পেরে সরব তৃণমূল বিধায়ক। তুললেন SAY NO TO PG স্লোগান-ও! মদন মিত্র বলেন, SSKM আর জনগণের হাসপাতাল নয়, এখানে গরিব মানুষ আর চিকিত্সা পাচ্ছেন না। বাম আমলে এখানে অনায়াসেই রোগী ভর্তি করা যেত। তিনি স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন।
বাইক দুর্ঘটনায় শুভদীপ পাল নামে এক যুবক জখম হন। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালের ল্যাব টেকনিশিয়ান। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে যান খোদ মদন মিত্র। এসএসকেএম-এর ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে নাকি তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। গত ১৮ মে রাতে বাইপাসে বাইক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা হয় পরে বেসরকারি হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসা ব্যায়বহুল। তাই পরিবারের লোক মদন মিত্রের দ্বারস্থ হন।
তার পরেই তাঁকে এসএসকেএমে ট্রান্সফার করার চেষ্টা করে তাঁর পরিবার। কিন্তু সেখানে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও রোগীর ভর্তি তো দূরের কথা, প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। এর পরেই সেখানে বিস্ফোরক মদন মিত্র। তিনি বলে দেন--'বাম আমলে অনায়াসে ভর্তি করতে পারতাম ১ মিনিটে। দালালচক্র সক্রিয়। ৫০-২০ হাজার টাকা দিলে চিকিৎসা হয়। সে নো টু পিজি। এটা আর জনগণের হাসপাতাল নয়। আমাদের এরকম অবস্থা তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা।' মদন মিত্রের আরও অভিযোগ, 'জরুরি অবস্থায় চিকিৎসককে স্টেথোস্কোপ নিয়ে বাইরে এসে প্রাথমিক চিকিৎসাটা করতে হয়। এখন সেটা হচ্ছে না। তারা এসি রুমে থেকে চা সিগারেট খাচ্ছে। সব ফুর্তি করছে। আর পরিবারে কাছে সেখানে রাইফেল নিয়ে পুলিস আসছে। এই হসপিটালে গরিব মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। ভিখারির মতন পড়ে রয়েছে। এটা হসপিটাল না অডিটোরিয়াম?'