নিজস্ব প্রতিবেদন : টাকার লোভে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা। আর তাই পথভ্রষ্ট হচ্ছে ছাত্র রাজনীতি। কাজের মধ্যে নিষ্ঠা, শৃঙ্খলার অভাবই পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতিতে এমনটা হওয়ার কথা নয়। নাম কেনা নয়। কাজ-ই হওয়া উচিত ছাত্রছাত্রীদের প্রধান ও একমাত্র কর্তব্য। কাজই পরিচিতি গড়ে তুলবে। কাজের মাধ্যমেই লোকে চিনবে। কাজের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় একজন নেতা বা নেত্রী। মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জন্মদিনের সভামঞ্চে আজকের ছাত্রদলকে এ কথাই বললেন একদা ছাত্র পরিষদের দামাল মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় এদিন একদিকে যেমন ঝরে পড়েছে আক্ষেপ, অনুযোগ। তেমনই তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ছাত্র রাজনীতির মূলমন্ত্র।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ছাত্র-যুবদের এদিন সঠিক পথের দিশা দেখাতে গিয়ে বেশ খানিকটা স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন মমতা। সভামঞ্চ থেকে এদিন নিজের ছাত্র জীবনের বেশ কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁরা সম্পূর্ণ আড়ালে থেকেই ছাত্র রাজনীতি করতেন। প্রচারের আলোয় সেভাবে কখনও আসতেন না। এখন যেমন ছাত্র নেতারা দলের সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে ওঠাবসার সুযোগ পায়, তাঁদের সময় এমনটা ছিল না বলে জানান মমতা। তাঁর কথায়, "সামনের আয়নাটা-ই ছিল একমাত্র মাপকাঠি"। আর ধ্যানজ্ঞান বলতে ছিল কাজ।


আরও পড়ুন, "ভালো করে ফেসবুক-টুইটার করুন", ছাত্র-যুবদের নির্দেশ মমতার


এদিন নিজের ছাত্রজীবনের কথা বলতে গিয়ে বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মমতা। ছাত্র পরিষদ নেত্রী হিসেবে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। তারপর যুব কংগ্রেস নেত্রী হিসাবে পথ চলা শুরু। ছাত্র রাজনীতির হাত ধরেই বৃহত্তর রাজনীতির লড়াইয়ের ময়দানে প্রবেশ ঘটেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুরু হয়েছিল সংগ্রাম। রাজনৈতিক উত্তরণের একমাত্র পথ যে শুধু কাজ আর সংগ্রাম করে যাওয়া, এদিন সেকথাই বার বার বলেন মমতা। তিনি আরও বলেন, কাজের মধ্যে দিয়েই সিনিয়রদের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র তৈরি হয়েছিল। কাজের জন্যই প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।


এদিন স্মৃতির ঝাঁপি থেকে ছাত্র রাজনীতির দিনগুলির অনেক কথা-ই জনসমক্ষে তুলে ধরেন মমতা। বলেন, একদিন তিনি যগুবাবুর বাজার (দক্ষিণ কলকাতা) এলাকায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সেই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন 'মানুদা' (বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়)। সেদিন মমতাকে দেখে এগিয়ে গিয়েছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। এরপর মমতার কাছে এসে তিনি বলেন, "তোমার নাম শুনেছি। তুমি খুব দুষ্টু, কিন্তু ভালো বল।" শুধু 'মানুদা' নয়, এদিন মমতার স্মৃতিচারণায় উঠে আসে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নামও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, একদিন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি কলেজে এসে খোঁজ করেন, "তোদের মধ্যে মমতা কে আছে?" কলেজের সবাই তখন তাঁকে দেখিয়ে দেয়। এরপরই প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি বলেছিলন, "তুই ভালো কাজ করছিস"।


আরও পড়ুন, মেয়ো রোডের সভায় একমাত্র এই টিএমসিপি নেত্রীর নামই মুখে আনলেন মমতা


একদা ছাত্র পরিষদ নেত্রী পরবর্তীতে তৃণমূল সুপ্রিমো, বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ধাপ পেরনোর পরীক্ষায় তাঁরা শুধু মন দিয়ে কাজটাই করে গিয়েছেন। কখনও ঘন ঘন নেতা, মন্ত্রীদের বাড়ি যাননি। মনে করা হচ্ছে, এদিন বারবার 'বড় বড় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগে'র কথা বলে আসলে জয়া দত্তকেই (শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে মাঝে মাঝেই দরবার করতে দেখা গিয়েছে টিএমসিপি নেত্রী জয়া দত্তকে) সমঝে দিতে চেয়েছেন দলনেত্রী।


তিনি বলেন, সুব্রত মুখোপাধ্যায় মন্ত্রী থাকাকালীন (সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায়) একদিন তাঁদের বাড়িতে আমন্ত্রণ করেছিলেন। তাঁরা গিয়েওছিলেন। মমতা জানান, সেদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও একটাই কথা বলেছিলেন, "খুব ভালো কাজ করছ।" অর্থাত্, ভালো কাজ-ই জায়গা করে দেয়। ভালো কাজ করলে নেতারা এমননি-ই ডেকে নেবেন। সে জন্য নিজে থেকে বার বার নেতাদের কাছে দরবার করার প্রয়োজন নেই। এদিন ছাত্রপরিষদের সভামঞ্চ থেকে দলের ছাত্র-যুব নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে স্পষ্ট এই বার্তা-ই দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।