কলকাতায় থিমের পুজোর সূচনা মান্না দে`র হাতে!
সিমলায় পুজো উদ্বোধন করতে এসে ছিঁড়ে গেল উত্তমকুমারের সিল্কের পাঞ্জাবি
অয়ন ঘোষাল
তিনি গোবর গোহ-র আখড়ায় কুস্তি শিখতেন। মুম্বইয়ে তিনি শচীনকর্তার সহকারী ছিলেন। তিনি বাংলা লঘুসঙ্গীতে নতুন ধারার জন্ম দিয়েছিলেন। রান্নার হাতও ছিল জবরদস্ত। কিন্তু তাঁর হাত দিয়ে যে শহরকলকাতায় থিমের পুজোরও শুরু-- এ তথ্যটা কেউ বোধ হয় জানত না!
তিনি এক এবং অদ্বিতীয় মান্না দে।
হ্যাঁ, নামটা ঠিকই পড়ছেন। ইনি সেই কৃষ্ণচন্দ্র দের ভাইপো, 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি', 'সন্ন্যাসী রাজা', 'ছোট বোন', 'কফি হাউস'-খ্যাত আমাদের সবার প্রিয় মান্না দে-ই।
সময়টা ১৯৭৩ সাল। মান্না দে তখন বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তিনি পুজো কমিটিকে সেবার পরামর্শ দিলেন, সাবেকিয়ানা ভেঙে থিমের পুজো করলে কেমন হয়! শুধু শুকনো পরামর্শ নয়, আইডিয়ার ভাবনাও জোগালেন। বললেন, গতানুগতিক প্যান্ডেলের বদলে দক্ষিণ ভারতের কোনো মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল করা হোক। মায়ের চিরাচরিত সাবেকি রূপ পাল্টে যদি মাদুরাইয়ের মীনাক্ষীদেবীর আদলে করা হয়, তা হলেই-বা কেমন হয়?
মান্নাবাবুর আইডিয়া লুফে নিলেন কর্মকর্তারা। কলকাতা শহরে থিমের পুজোর সূচনা সেটাই। উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিটের যে জোড়া শিবমন্দিরে ছোট্ট বিলে (বালক নরেন্দ্রনাথ দত্ত) একদা ধ্যান-ধ্যান খেলতেন, ঐতিহ্যমণ্ডিত সেই শিবমন্দিরের চাতালেই ভারতীয় সঙ্গীতের এক কিংবদন্তির হাত ধরে থিম পুজোর জন্ম দিল বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব। সেবার সেই পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়।
আরও দু'বছর পরে অন্যরকম চমকে সিমলার পুজো জমিয়ে দিলেন সেই মান্না দে-ই। সেলিব্রিটির হাত দিয়ে পুজো উদ্বোধনের তখনও সেরকম চল হয়নি শহরে। সময়ের চেয়ে এগিয়ে ভাবা মান্না দে সেবার মহানায়ক উত্তমকুমারকে নিয়ে এলেন পুজোর উদ্বোধনে। মান্না দে-র বিশেষ অনুরোধে তৃতীয়ায় পুজো উদ্বোধন করতে সিমলেপাড়ায় এলেন মহানায়ক। গোটা শহর যেন ভেঙে পড়েছিল। বাঁধভাঙা সেই ভিড়ে সে বার ছিঁড়ে গেল উত্তমবাবুর সিল্কের পাঞ্জাবি।
উত্তম-মান্নার সেই সোনার সময় তো কবেই অতীত। এখন তা হলে কী অবস্থা এই পুজোর? পুজো আছে পুজোতেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলেছে এ পুজোর আয়োজনও। এ বছরের পুজো প্রসঙ্গে ক্লাব সম্পাদক গৌতম বিশ্বাস জানান, এ বার এ শহরের অন্যতম প্রাচীন এই পুজোর বিষয়ভাবনা আমফান ও করোনা। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আসা আটজন শিল্পী, যাঁদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে আমফান, তাঁরাই এখানে গড়ে তুলছেন মাতৃমণ্ডপ। এরকম একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে খুবই ভাল লাগছে তাঁদের। আমপান-বিদ্ধস্ত শিল্পী অরুণ মিশ্র বিবেকানন্দ স্পোর্টিংয়ের এ বারের পুজো নিয়ে বলছেন, 'এখানে দেবী এ বার করোনাবিনাশিনী। আর অসুর করোনারূপী। গড়ছেন শিল্পী মিন্টু পাল।'
এ ছাড়াও এ বার এ পুজোর অন্য চমকও আছে। কোভিড-পরিস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে বাজেট। তাই এই পুজোর থিম সং এ বছর রচনা করেছেন এবং গেয়েছেন পাড়ার মেয়েরাই।
ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন এই পুজোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করছে। কোভিড-আবহের মধ্যেও যা দর্শনার্থীদের মন ভরিয়ে দেবে বলেই ধারণা পুজো উদ্যোক্তা থেকে থিমশিল্পীদের।
আরও পড়ুন: আগামিকাল BJP-র অভিযান,আচমকা নবান্নের ঝাঁপ বন্ধের নির্দেশ রাজ্যের