নিজস্ব প্রতিবেদন: ইদে ঘরে ফেরা হল না ইসমাইল, নুর, রহমান দের। কর্মসূত্রে কেউ স্বর্ণশিল্পের কাজ করেন কেউবা রাজমিস্ত্রি কেউ আবার জরির কাজ। দু পয়সা রোজগারের স্বপ্ন নিয়ে  পাড়ি দিয়েছিলেন হাওড়া, ডোমজুড়, রাঘবপুর, মাকড়দহ থেকে আড়াই হাজার জন শ্রমিক। কাজ করতেন মহারাষ্ট্রের বসাইতে।  যা রোজগার করতেন তাতে মোটামুটিভাবে সচ্ছল ছিল অরিন্দম, প্রদীপ, রহমানের সংসার। হঠাৎ করোনা যুদ্ধে যেন অন্ধকার নেমে আসল ওঁদের সংসারে।
 কারও স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, কারোর বাড়িতে ক্যান্সারের মতন মারণ রোগের থাবা। প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যোগাবে কে? নিজেদের পেট চালানোই তো অন্যের হাতে। তাঁদের মধ্যে লাল্টু হারান মাকে। শেষ দেখা হল না মায়ের সঙ্গে। যোগান ছিল না পর্যাপ্ত ডাল চালও। বর্ণ ধর্মকে ভুলে দিলীপ রহমানরা খাবার জোগাড় করছিল মন্দির মসজিদ গির্জা ঘুরে ঘুরে। হিসাব রাখছিল এই বুঝি আর মাত্র ৭ দিন তারপর শেষ হয়ে যাবে হয়ত লকডাউন। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
 বন্ধ বেতন ।মালিকরা খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা ফোনের ওপার থেকে শুধু রিং এর আওয়াজ।  আবেদন জানিয়েছিলেন রংবেরং ভুলে সমস্ত নেতাদের কাছে।   দুবেলার  খাবার খেতে হত একবারে। মিলতো শুধুই নেতাদের আশ্বাস।  পরিচিতি কারোর মধ্যে ফোন এলে শুধু কেমন আছো জিজ্ঞাসা করলে উত্তর ভাঙ্গা গলার স্বর বেঁচে থাকার আর আশা নেই। লাল্টুর করা হয়নি মায়ের শ্রাদ্ধের কাজ। পেটের অন্ন জোগাড় করতেই তো হিমশিম শ্রাদ্ধের খরচা যোগাবে কে?


করোনা তো ছিল, দোসর বিরল কাওয়াসাকি রোগ! অসম লড়াইয়ে জিতে বাড়ি ফিরল তারকেশ্বরের চার মাসের শিশু
 অবশেষে শনিবার মহারাষ্ট্র থেকে বাড়ি ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। সোনিয়া গান্ধীর অনুপ্রেরণায় আইএনটিইউসি পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি পান্ডের উদ্যোগে শনিবার সন্ধে সাতটায়   পরিযায়ী শ্রমিকদের  নিয়ে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন রওনা দিয়েছে ডানকুনির উদ্দেশ্যে।  খুশিতে মুখে হাসি ফুটেছে  ওদের।  সুরজিৎ বাড়ি গিয়ে দেখবে  প্রথম কন্যা সন্তানের মুখ। কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় জানা ছিল না ।
 প্রমোদ বাবুর কাজটা করা নেহাৎ সহজ ছিল না। পুরোটাই প্রমোদ বাবু  অনলাইনে করেছেন। প্রত্যেকবার সুরজিৎ, প্রদীপ, দিলীপরা   পরিবারের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসতেন হাতে করে এবার হাত ফাঁকা। ফোনের ওপার থেকে আসেনি শিশুদের আবদার। আবদার শুধু বাবা বাড়ি ফিরে এসো। প্রমোদ পান্ডের কথায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে পেরে আমিও খুশি কারণ প্রথম ফোনটা ওরা কেঁদেই বলেছিল যে হয়তো আর বাঁচবো না।
তিনি আরও জানিয়েছেন,  আরও ৪০০ জন শ্রমিক আটকে আছে তারা আজকে  রওনা দেবেন। এখন রাজনীতি করার সময় না রাজনীতি ভুলে সরকারের সহযোগিতায়  ১৪ দিন তাদের কোয়ারেন্টিনে রেখে  তাঁদের গ্রামে ফেরানো হবে।