অয়ন ঘোষাল: বঙ্গে এল বর্ষা। প্রতিবছরই বর্ষা এলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলে। মৃত্যুতেও হুঁশ নেই কর্তৃপক্ষের। এখনও বর্ষার মুখে বিপদ বাতিস্তম্ভের খোলা তার।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বর্ষা এলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে শহরে। মৃত্যুর কারণ জানা যায়, কিন্তু কার গাফিলতিতে সেই মৃত্যু হল, তা কখনওই সামনে আসে না বলে অভিযোগ। কড়া শাস্তি হওয়ার নিদর্শন তো নেই। কিছু দিন দায় ঠেলাঠেলি চলে প্রশাসনিক স্তরে। পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও মৃতের পরিবারের পাশে গিয়ে সান্তনা দেয় রাজনৈতিক দলের নেতারা। তার পরে আবার একই ঘটনা।


পুলিসের হিসাবেই, গত পাঁচ বছরে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বৃষ্টির মধ্যে পথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি শোরগোল পড়েছিল গত বছর হরিদেবপুরে একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায়। যদি আরও একটু অতীতের দিকে তাকানো হয় তাহলে রাজভবনের কাছে বাতিস্তম্ভের খোলা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু তাতেও কি পরিস্থিতি বদলেছে? নাগরিকদের অভিজ্ঞতা, চলতি বছরেও বর্ষার মুখে শহরের বিপদ বাতিস্তম্ভের সেই খোলা তারই!


আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023: ডিজি পাঠানোর নির্দেশ খারিজ, ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন


দেখা যাচ্ছে, গড়াক সান লেন কোলকাতা ৭০০০১৭। কলকাতা কর্পোরেশন বোরো নম্বর ৭, ওয়ার্ড নম্বর ৬৪। এই ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের পৌর মাতা সিম্মি জাহান।


এলাকার মানুষের অভিযোগ এলাকা থেকে ভোটে জেতার পর কোনও দিনই তাকে এলাকার দেখা পাওয়া যায় না। ফোন করলেও ফোন তিনি তোলেন না। এর পাশাপাশি একজন PA-কে দিয়ে ফোন তুলিয়ে বলা হয় তিনি বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন এমনটাই অভিযোগ এলাকবাসীর।


বেনিয়াপুকুর থানার সংলগ্ন রাস্তার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার বিভিন্ন অলি গলিতেও রয়েছে বাতিস্তম্ভের খোলা তার। এমন বিপজ্জনক বাতিস্তম্ভ সব থেকে বেশি চোখে পড়ছে শহরের বস্তি এলাকাগুলিতে।


শুধু এখানেই শেষ নয় কলকাতা পৌর কর্পোরেশনে বর্ষার মরসুমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরাদ হাকিম ডেঙ্গু সচেতন বার্তা দিচ্ছেন এবং বাড়ির নোংরা আবর্জনা ফেলার জন্য নিল এবং সবুজ রঙের দুটি ডাস্টবিন বালতিও দিচ্ছেন। তার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন বার্তা দিচ্ছেন কলকাতা পৌর কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।


কিন্তু কলকাতা কর্পোরেশনের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর মাতা সিম্মি জাহান ভোটে জেতার পর থেকেই বাড়িতে বসে ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করছেন এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর।


তারই পাশাপাশি এলাকায় ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে নেই ডাস্টবিনের ড্রাম। যেখানে সেখানে রাস্তার উপরেই পড়ে আছে আবর্জনা। দীর্ঘদিন অভিযোগ করার পরও ঘুম ভাঙছে না তৃণমূল কংগ্রেসের কাউনসিলরের।


আরও পড়ুন: Chief Secretary of West Bengal: এক্সটেনশন পাবেন হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদি? নতুন নাম নিয়ে তৈরি রাজ্য


এই বিষয় নিয়ে সংবাদ মাধ্যম যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও বার বার ফোন কেটে দেওয়া হয়েছে। কোনও উত্তরই পাওয়া যায়নি এখনো। তাহলে কোন কারণে বিপদ ঘটলে এর দায় কে নেবে?


কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি উন্নয়ন) স্বপন সমাদ্দার সোমবার বললেন, ‘শহরে নথিভুক্ত, অনথিভুক্ত মিলিয়ে প্রায় ৩৩৩৪টি বস্তি রয়েছে। গত বছরই পুরসভার বস্তি উন্নয়ন বিভাগের তরফে প্রতিটি বস্তির জন্য এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাতিস্তম্ভে নজরদারি করতে বলার পাশাপাশি ফাইবার দিয়ে মুড়ে ফেলতেও বলা হয়েছে। তার পরেও গাফিলতি হলে পুরসভার আলো বিভাগ বলতে পারবে’।


গত বছরই হরিদেবপুরে খেলতে খেলতে জমা জলে বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে নিশীথ যাদব নামে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় এমনই দায় ঠেলাঠেলি সামনে আসে। জানা যায়, জমা জলে ওই কিশোর যেখানে পড়ে গিয়েছিল, তার পাশেই ছিল বিএসএনএলের একটি টেলিফোনের স্তম্ভ। তাতে আলো ঝুলিয়েছিল পুরসভা। বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ বলে দেন, টেলিফোনের স্তম্ভ ছুঁলে মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। তবে, ওই খুঁটিতে তাঁদের অনুমতি না নিয়েই বিদ্যুতের সংযোগ টানা হয়েছিল।


স্থানীয় ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিনিধি দাবি করেন, জায়গাটা অন্ধকার ছিল বলে টেলিফোনের ওই স্তম্ভে পুরসভা অস্থায়ী ভাবে আলো লাগিয়েছিল। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ অবশ্য সেই সময়ে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, পুরসভার নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থেই ওই স্তম্ভে আলো লাগানো হয়েছিল।


কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও কার গাফিলতিতে সেই ঘটনা ঘটেছিল তা জানা যায়নি। একই ব্যাপার হয়েছিল রাজভবনের সামনে জমা জলে ঋষভ মণ্ডল নামে এক যুবকের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায়। সেখানে পুরসভার একটি খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ টানা হয়েছিল। পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে পুরসভা ও সিইএসসি-র কাছে জবাব তলব করে। কিন্তু দু’বছর পরেও রহস্য কাটেনি।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)