তন্ময় প্রামাণিক: করোনা আবহে নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকতে চলেছে গোটা দেশ। এই দুঃসাহিক কাজটা করে দেখাচ্ছে কলকাতা। এক সঙ্গে লিভার, দুই কিডনি, হৃদযন্ত্র যুদ্ধকালীন তত্পরতায় প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করেছে কলকাতার ৩ হাসপাতাল। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভাটপাড়ার বাসিন্দা বছর একত্রিশের সংগ্রাম ভট্টাচার্য পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে গত ১৫ অগস্ট ভর্তি হন অ্যাপোলো হাসপাতালে। ব্রেন ডেথ পর্যায়ে পৌঁছে যায় ওই তরুণ। গত রবিবার স্বাস্থ্য ভবনের ব্রেন ডেথ কমিটি অ্যাপনিয়া টেস্ট করে জানিয়ে দেয়, ব্রেন ডেথ হয়ে গিয়েছে সংগ্রামের। নিয়ম অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যা পৌনে আটটা নাগাদ চূড়ান্তভাবে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরপরই অঙ্গ দানে সম্মতি জানায় সংগ্রামের পরিবার।


পরিবারের সম্মতি মিলতেই করোনা আবহের মধ্যে কার্যত যুদ্ধকালীন তত্পরতায় শুরু হয়ে যায় অঙ্গ-গ্রহীতাদের খোঁজ। সন্ধ্যার মধ্যেই যোগাযোগ করা হয় আগরতলার ৫৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর লিভারের প্রয়োজন ছিল। দ্রুত রাতের ফ্লাইটে তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। লিলুয়ার ২৯ বছর বয়সী এক যুবককে রাতেই নিয়ে আসা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। তাঁর কিডনির সঙ্গে ম্যাচ করেছে সংগ্রামের কিডনি। অন্য একটি কিডনি যাচ্ছে এসএসকেএম-এ। সেখানে এক ব্যক্তিকে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনে হচ্ছে আর এন টেগর হাসপাতালে এক ব্যক্তির শরীরে। চোখ ইতিমধ্যেই দান করা হয়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালে স্কিন ব্যাংকে সংগ্রামের শরীরের ত্বক দান করার সম্মতি দিয়েছে পরিবার। 


এর মধ্যে আতঙ্ক ছিল গ্রহীতা এবং নার্স ও চিকিত্সকদের কোনও করোনা সংক্রমণ রয়েছে কিনা! রাতারাতি তা পরীক্ষা করে জানা যায় সবারই রিপোর্ট নেগেটিভ। অ্যাপোলো হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও), চিকিৎসক জয় বসু বলেন, "এই করোনা আতঙ্কের পর্বে এটা একটা যুদ্ধের মতো। আমরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে এই কাজটা করছি। সংগ্রামের পরিবারকে ধন্যবাদ জানানোর কোনো ভাষা নেই। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি তাঁর পরিবারকে এই ধরনের অঙ্গ দানে সম্মতি দেওয়ার জন্য।"


আরও পড়ুন- প্রয়াত বিমান বসুর দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী, ভেঙে পড়েছেন কমরেড


এই কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্যভবন যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজ শুরু করে দিয়েছে। উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে আঞ্চলিক অঙ্গদান নিয়ামক সংস্থা রোটোও। করোনা পরিস্থিতিতে রাতের মধ্যে গ্রহীতাদের খুঁজে বার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা যথেষ্ট কঠিন ছিল বলে মনে করছে চিকিত্সক মহল।  অ্যাপোলো হাসপাতালের একটি কিডনি এবং লিভার প্রতিস্থাপন এর কাজ শুরু হচ্ছে। একটি কিডনি এসএসকেএম হাসপাতালে একজনের শরীরে প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই একজনের শরীরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে আর এন টেগর হাসপাতালে। 


চিকিত্সক জয় বসু আরও বলেন, "অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমাদের এই কাজ করতে হচ্ছে। কারণ অস্ত্রোপচারের আগে যুক্ত চিকিৎসক-নার্স টেকনিশিয়ান এবং যে কর্মীরা রয়েছেন প্রত্যেকের রাতের মধ্যেই কোভিড পরীক্ষা করানো হয়েছে। কারণ করোনা পরীক্ষা না করিয়ে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। সেই কারণে রাতভর হাসপাতালে তাঁদেরকে এনে করোনা পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকের নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর অস্ত্রোপচারের কাজ শুরু হয়।" জানা যাচ্ছে সাড়ে এগারোটা নাগাদ প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। করোনা পর্বে পূর্ব ভারতে প্রথম কলকাতা শহরেই এই ধরনের ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কাজ হচ্ছে। গত ছয় মাসে এ রাজ্যে নয় গোটা দেশের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি হতে চলেছে। তবে সবই সম্ভব হচ্ছে মৃত্য়ুর পরেও তরুণের সংগ্রাম জারি থাকায়!