সৌরভ পাল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

"তিতো করলা নিমের পাত
বিষ কুটুলি দিয়া তাত
হাঁড়ির হাড়েত খুটুং টুং
শিবের হাতের ঝাঁটা
এই কোন্দল লাগিয়া দিল নারদ মুনির বেটা..."


গণতন্ত্রের উৎসবের আগেই কলহের কলরব গাইছে কলকাতা, কোরাসে সঙ্গ দিচ্ছে গোটা দেশ। নারদ মুনির কাণ্ডে 'কাণ্ডারি হুঁশিয়ার' বিরোধীদের গলায়। শাসকের চোখে সর্ষে ফুল আর গণতন্ত্রের মাথা ঝিম ঝিম। করেছেন কি মশাই! ৫২ ঘণ্টার মাত্র ২৩ মিনিটেই ওলট-পালট, বাকিটা হিল্লে হলে হেলে যাবে গোটা গণতন্ত্রটাই, নারদ কেবলই মুচকি হাসে। কলহ সৃষ্টিকারী মন্ত্রের গুঞ্জন পাড়ার মোড়ে মোড়ে। বাসে, ট্রেনে, ট্রামে হর্নের থেকেও বেশি বার উচ্চারিত হচ্ছে নারদ-নারদ।  


তিতো করলা, নিমের পাতা, বিষ কুটুলি একত্রে মন্ত্রপুত করে যার যার মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি করার লক্ষ্য তার নাম নিয়ে তার বাড়ির উঠোনে রাখতে হবে। সকালে গৃহবধু উঠোন ঝাড় দিতে গেলে মন্ত্রপুত জিনিসের সাথে ঝাটার র্স্পশ লাগা মাত্রই ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে-কলহ মন্ত্রের বিধি এটাই, আর হলও তো এমনটাই। নারদ মন্ত্রে বাহাতি ব্যাগি গ্রীন 'দানব' ব্যাটসম্যান ম্যাথু হেডেন আর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদের বিস্ময় ক্রিকেটার মার্লন স্যামুয়েলস- এই দুই মিলে একসঙ্গে ব্যাট চালালে ছক্কাটা যত বড় হয়, বাংলার রাজনীতিতে হচ্ছেও এমনটাই। এমন তো আগে কখনও দেখিনি। ঠিক দেখছি? চিমটি কেটেও সেই একই ছবি। নচিকেতার 'চোর, চোর' গানের মতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঘুষকাণ্ডের স্টিং। নেপথ্যে নায়ক নারদ।


নারদ নিউজ পোর্টালের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলস, তহেলকার একদা 'হিরো' হঠাৎ যেন সুপারহিরো। পুরাণে ঠিক যেমনটা করতেন নারদ মুনি, নিউজ পোর্টাল নারদের নারদ মুনিও ঘটিয়ে ফেললেন তেমন এক বিস্ফোরক কাণ্ড। একেবারে ধর্মযুদ্ধ। খবরের কাগজ থেকে টেলিভিশন, রোজ নামচায় নারদ এখন ব্রেক ফাস্ট থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সবথেকে মুখোরিত হট কেক। দেবজনেও পূজিত আবার অসুর কুলেও সমাদ্রিত। পুরাণের নারদ কেমন ছিলেন?



নারদ শব্দের সংস্কৃতায়ন করলে দাঁড়ায়, 'নারা' = নারায়ণ যার অর্থ জ্ঞান যুক্ত 'দা' = দাতা, যিনি দান করেন। গোদা বাংলায় জ্ঞানদায়ক ব্যাক্তির নাম নারদ। এই নারদ আবার নিজে নারায়ণ অর্থাৎ জ্ঞানের পুজারি ছিলেন। করতাল আর বীণা হস্তে কৈলাস থেকে ইন্দ্রসভা, সমুদ্রমন্থন থেকে যমপুরী, যখন খুশি ফ্রি এন্ট্রি নারদের।  ভিভি ইম্পর্টেন্ট ক্যাটাগরিতেই সর্বদা রাজ করেছেন নারদ। পুরাণ বলে নারদের চরণ অঙ্কিত রয়েছে বিষ্ণুর বুকে। আবার এই নারদই স্বপ্ন দেখেছেন ভগবান নারায়ণের চরণে আশ্রিত তিনি। জ্ঞানের দেবতাই যেন জ্ঞান ছড়িয়ে দেবার জন্য আবিষ্কার করেছিলেন 'নারদ মাধ্যম'।



নারদের জন্ম ছিল অভিশপ্ত। ব্রহ্মার মানসপুত্রই হলেন দেব ঋষি তথা মহর্ষি নারদ। অভিশাপেই মানবযোনিতে জন্ম হয়েছিল নারদের। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে অভিশাপ না হলেও কলঙ্কের কালি ছিটিয়ে দিয়ে গেল নারদ'ই। যত্রতত্র যাতায়াতের ভূমিকা তখনও ছিল, এখনও তাই। নাহলে এমনসব  তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রীদের অন্দরমহলে সাধারণের মত ঢোকা এবং তাঁদের ক্যামেরাবন্দি করা (বাণ্ডিল বাণ্ডিল টাকা সমেত), এতটাও সহজ কাজ নয়।


নারদীয় পুরাণে ব্যাখ্যা পছন্দ, তা বিশ্বাস করা বা অবিশ্বাস করা একান্তই ব্যক্তিগত। তবে এটা মেনে নিতেই হবে নারদই হলেন ত্রি-ভূবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক। রইল কারণ-


* প্রথম ও আদি সাংবাদিক
ভারতীয় কৃষ্টিতে নারদ হলেন প্রথম সাংবাদিক। বিশ্বমিত্র ও বাল্মিকির থেকেও বড় তিনি।


* সৃষ্টি
সংসারের সৃষ্টি করেন যিনি (ব্রহ্মা), তাঁর মানসপুত্র হলেন নারদ।


* সাহস
একমাত্র নারদই হলেন সেই, যিনি তিন বিধাতার পালন হারক শ্রীবিষ্ণুর বুকে চরণ রাখেন। ভারতের হিন্দু পুরাণ, নারদ পুরাণে ব্যাখ্যা এমনটাই।


* চিন্তক
নারদ দূরদর্শি। সুচিন্তক। কূটনৈতিক। জীবনের চাহিদা, চাওয়া পাওয়ার ব্যাখ্যা নারদের থেকে শ্রেষ্ঠ কাটাছেড়া আর কেউ করতে পেরেছেন বলে জানা নেই। একই ঘটনার ব্যাখ্যা অসুরকুলে একরকম দেবকুলে অন্যরকম-এই চিন্তা শক্তি কেবল মিথ নয়, অনুভব করারও বিষয়ও।


* বুদ্ধিধর
নারদের শ্রেষ্ঠ শক্তি তাঁর বুদ্ধি। আর বুদ্ধি যার জগৎ তাঁর। সঙ্গে তাঁর ক্ষমতা ও অবস্থান।



নারদের দম আছে নাড়িয়ে দেওয়ার। মানবেন তো! বর্তমান ঘটনার সঙ্গে এক এক করে মিলিয়ে দেখুন, অনুভব করুন, ভাবুন, এই নারদে সেই নারদের দম আছে কিনা!