`কথা না বলে মন দিয়ে সার্জারি করো`, অপারেশন থিয়েটারে রোগীর ধমক প্রখ্যাত চিকিৎসককে
শুরুটা সেই ২০১২, পূর্ব ভারতে তিনিই প্রথম করলেন Awake Barin Surgery, এরপর বহু জল গড়িয়েছে ২০২৪-এ ১০০তম সফল অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি। অভিনব পদ্ধতিতে রোগীকে জাগিয়ে রেখে ব্রেন টিউমারের সফল অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি সুপরিচিত।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: 'লিফট থেকে পরে চুরমার শিরদাঁড়া। অসংখ্য ইনজুরি শরীরে। সবাই ভাবল আর বোধহয় বাঁচল না। কোমায় চলে যাওয়া ৭ বছরের ছেলেটির অপারেশন করি। তার দু-মাস পর চোখ খুলে ছেলেটি প্রথম বলেছিল 'আমার ডাক্তার', চোখে জল চলে এসেছিল।' এমনই বহুল অভিজ্ঞতায় ভরা তাঁর ঝুলি। মৃত্যুর মুখ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারাটাই তাঁর পেশা, তাও আবার অনন্য কায়দায়। ব্রেনের জটিল থেকে জটিলতম রোগ তিনি সারিয়ে তোলেন, এমনকী অজ্ঞান না করে রোগীর অস্ত্রোপচার করে নজির তৈরি করেছেন তিনিই নিউরোসার্জন ডা. অমিতাভ চন্দ।
শুরুটা সেই ২০১২, পূর্ব ভারতে তিনিই প্রথম করলেন Awake Barin Surgery, এরপর বহু জল গড়িয়েছে ২০২৪-এ ১০০তম সফল অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি। অভিনব পদ্ধতিতে রোগীকে জাগিয়ে রেখে ব্রেন টিউমারের সফল অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি সুপরিচিত। ৩৫ বছরের কর্মজীবনের এমনই ২১টি অত্যাশ্চর্য ঘটনার বিবরণ রয়েছে তাঁর লেখা ‘নিউরোসার্জনের ডায়েরি’ বইতে। এই বইতে শুধু কেস স্টাডি নয়, রয়েছে ব্রেন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি যাবতীয় তথ্য।
নিজের বাবারও অস্ত্রোপচার করেছিলেন চিকিৎসক নিজেই। কিন্তু তাই বলে অপারেশন থিয়েটারে ধমক খেতে হল তাঁকে? অমিতাভ বাবুর কথায়, 'এক ১২ বছরের মেয়ের টিউমারের অপারেশন করছিলেন তিনি। স্পিচ এরিয়াতে টিউমাপ ছিল তাঁর। আর সেই বছরই অ্যাওয়েক ব্রেন সার্জারি শুরু করি। এটা ছিল আমার দ্বিতীয় সার্জারি। দোলাচল রেখেই অপারেশন শুরু হয়। ব্যথা লাগবে বলে ভয় পেয়ে গিয়েছিল মেয়েটি। অনেক বোঝানোর পর রাজি করিয়েছি। অপারেশনের সময় ওকে ১ থেকে ১০০ গুনতে বলা হয়। যাতে কোনওরকম সমস্যা হলে বুঝতে পারি।'
অদ্ভুত বিস্ময়ে ডাক্তারবাবু বলে চললেন, 'অনর্গল কথা বলছি মেয়েটির সঙ্গে। হঠাৎ ৪১-এর পর ও চুপ। কোনও কথা বলছে না। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাথায় এল, ১২ বছরের মেয়ে, তারপর স্পিচ এরিয়াতেই কাজ করছি। স্পিচটাই চলে গেল মেয়েটার। এসবের মধ্যে অ্যানাথেসিস্ট বারবার বলে চলেছে, কী রে বল? ৪১-এর পর কী? কিন্তু মেয়েটি স্পিকটি নট।'
মরিয়া চেষ্টা করলেন ডা. অমিতাভ চন্দ। বললেন, 'আসলে ও তো জানেই না। ৪১-এর পর কী জানলে বলবে তো? এরপরই মেয়েটি অত্যন্ত রেগে চিৎকার করে বলে উঠল, সব জানি, ৪১-এর পর ৪২-৪৩। তুমি বেশি কথা না বলে মন দিয়ে অপারেশনটা করো তো।' চিকিৎসকের এই বইটি এমনই বিভিন্ন রোগীর কেস স্টাডি, জটিলতম ব্রেন অপারেশনের নানা পদ্ধতি, বিভিন্ন রোগের কারণ ও তার প্রতিকারের উপায় লেখা।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)