`বরফঢাকা তিলোত্তমা` ভাবের ঘরে চুরি? ফেকের ঠেকে তা হলে আসল ছবি কোনটি?
Candid Photography: ব্রেসোঁর বক্তব্যকে ভাঙলে বোঝা যাবে, ছবি তাঁর কাছে আদ্যন্ত খাঁটি ও নিখাদ ব্যাপার, যার মধ্যে সংযোজিত কারিকুরির কোনও জায়গা নেই। গতি ও স্বতঃস্ফূর্ততার নীরব নন্দনই তাঁর শিল্পকর্মের মনের কথা। সেই কথা কি শুনতে পান আজকের ফোটোগ্রাফার?
কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: ক্যানডিড ফোটোগ্রাফির বিশ্ববিশ্রুত শিল্পী হলেন হেনরি কার্তিয়ে ব্রেসোঁ। ছবিতে পেইন্টিংয়ের আমেজ বিছিয়ে দেওয়া বা ফ্রেমে সাররিয়্যালিজমের আলো-আঁধারি নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে সম্ভবত তাঁর চেয়ে উচ্চমার্গের শিল্পী আর আসেনি এই গ্রহে। এহেন ব্রেসোঁর ছবির মূলসুরই ছিল অবজেক্টের বহিরঙ্গকে পেরিয়ে অন্তরঙ্গের নিটোল ছবিটি তুলে ধরা। কিন্তু তাতে ছবিটিতে আপাতস্বচ্ছতার কোনও হানি ঘটবে না। অর্থাৎ, ব্রেসোঁর বক্তব্যকে আর একটু ভাঙলে বোঝা যাবে, ছবি তাঁর কাছে আদ্যন্ত খাঁটি ও নিখাদ এক ব্যাপার, যার মধ্যে সংযোজিত কারিকুরির কোনও জায়গাই নেই। একটা গতি, একটা স্বতঃস্ফূর্ততার নীরব নন্দনই তাঁর শিল্পকর্মের মনের কথা।
আরও পড়ুন: Laketown Accident: লেকটাউনে পরপর দুটি গাড়িকে ধাক্কা BSF-র গাড়ি....
কিন্তু ব্রেসোঁর কাল থেকে ওয়ার্ল্ড ফোটোগ্রাফি অনেক সরে এসেছে। ফলে, তার তত্ত্বে অদল-বদল এসেছে, অভিমুখ অন্য দিকে ঘুরে গিয়েছে। যেমন, কিছুদিন আগে গোটা শহরে কিছু ছবি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। খবরটা ছিল কলকাতায় বরফ পড়েছে। সঙ্গে ছিল ছবি-- বরফে ঢাকা হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বরফে ঢাকা ট্রাম। যাঁরা জানেন, তাঁরা যাচাই করে দেখেছেন, ছবিগুলি এআই টেকনোলজিতে করা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কেউ কেউ 'ইমাজিনারি' বলে বিষয়টি লঘু করতে চাইছেন বটে। কিন্তু বিষয়টা হয়তো তত সহজ নয়। যা নয় তা যদি করা হয়, সেটা তো ফেক-ই!
কেন হঠাৎ ফোটোগ্রাফি নিয়ে এত কথা?
গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় চলছে প্রদীপ সাহার ফোটো এগজিবিশন। সেখানে ওরিজিনাল ফোটোগ্রাফি এবং ফোটোশপ করা ছবি পাশাপাশি রাখা। যাতে দর্শক আসল-নকলের তফাতটা বুঝতে পারেন।
তা হলে ধান ভাঙতে এত শিবের গীত'ই-বা কীসের?
কারণ, প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন খ্যাতনামা চিত্রসাংবাদিক তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে এসে তিনিও প্রকারান্তরে এই ক্যানডিড ফোটোগ্রাফি ও নন-ক্যানডিড ফোটোগ্রাফির প্রসঙ্গ তোলেন। বরফঢাকা শহর-কলকাতার ছবির সূত্রে তিনি বলেন-- 'ভাবের ঘরে চুরি। যেটা সত্য নয়, সেটা যেভাবেই করা হোক না কেন, সেটা সত্য নয়, তা মেকি। এতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকে। তাই, ফোটোগ্রাফারদের দায়িত্ব ও দায় প্রকৃত ছবি প্রচার করা। এরপরই তারাপদ বলেন, প্রদীপ এই কাজটি করছেন বলে তাঁকে সাধুবাদ জানাই। প্রদীপ যা করেছেন সেটা ক্যানডিড ছবি। মানে, সুপার-ইমপোজ করা নয়। ছবির উপর যা ইচ্ছে তাই করা হয় এখন। একটা ছবির সঙ্গে একটা ছবি মিলিয়ে দেওয়া হয়। প্রদীপ সেটা করেননি। আমরা চিরকাল যেটা করে এসেছি, সেটাই করেছেন তিনি।
কেন গোটা প্রদর্শনীতে একটি মাত্র ফোটোশপ করা ছবি?
প্রদীপ সাহা জানান, ওই একটি মাত্র ছবিকে রেফারেন্স হিসেবে ভাবা হয়েছে। ওই ছবিটিকেই রেফারেন্স করে দর্শককে বোঝানোর চেষ্টা করছি, কোনও এফেক্ট না দিয়ে যে ছবি, সেটাই আসল এবং সেটাতেই বিশ্বাস করা উচিত।