নার্সিংহোমে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় মৃত্যু রোগীর, পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
ভুল গ্রুপের রক্ত শরীরে ঢোকার ৩ দিনের মাথাতেই শুরু হয় প্রতিক্রিয়া। বমি ও মলের সঙ্গে লাগাতার রক্তক্ষরণ হতে থাকে সুশান্তবাবুর। রক্তক্ষরণ সামাল দিতে নতুন করে ছয় ৬ ইউনিট `O` পজিটিভ রক্ত তাঁকে দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
নিজস্ব প্রতিবেদন : কলকাতার নামি নার্সিংহোমে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় মৃত্যু হল রোগীর। অভিযোগ, 'O' পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের রোগীকে দেওয়া হয় 'B' পজিটিভ রক্ত। আর এরফলেই মৃত্যু হয় কলকাতা দক্ষিণ শহরতলির আক্রা সন্তোষপুরের বাসিন্দা ৬৬ বছরের সুশান্ত কুমার নাগের। শেক্সপিয়র সরণি থানার নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে চায়নি বলে দাবি নিহতের পরিবারের।
মাথা ঘোরা আর খাবারে অনীহার উপসর্গ নিয়ে ২২ মার্চ থিয়েটার রোডের নার্সিংহোমে ভর্তি হন ৬৬ বছরের সুশান্ত কুমার নাগ। পরীক্ষায় ধরা পড়ে তাঁর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়েছে। হিমোগ্লোবিন বাড়াতে দুই ইউনিট রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকরা। বাড়ির লোকেদের দাবি, তাঁরা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন সুশান্ত বাবুর রক্তের গ্রুপ 'O' পজিটিভ। কিন্তু তারপরেও প্রোটোকল মেনে নিজেদের ল্যাবে সুশান্তবাবুর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
সুশান্ত কুমার নাগের ছেলে সৌত্রিক নাগের অভিযোগ, দ্বিতীয় দিন সকালে নার্সিংহোমে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান রোগীকে B পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়েছে। এই কথা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানালে প্রথমে রোগীর ব্লাডগ্রুপ 'O' পজিটিভ হওয়ার কথা অস্বীকার করে তারা। একইসঙ্গে রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর, সেদিন বিকালেই কলকাতার নামি ল্যাবের পরীক্ষায় জানা যায় সুশান্ত কুমার নাগের রক্তের গ্রুপ আসলে 'O' পজিটিভ। এদিকে ততক্ষণে এক ইউনিট রক্ত রোগীকে দেওয়া হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন, সঙ্গে আধার নেই, হাসপাতালে বিনা চিকিত্সায় মৃত্যু কার্গিল শহিদের স্ত্রীর
ভুল গ্রুপের রক্ত শরীরে ঢোকার ৩ দিনের মাথাতেই শুরু হয় প্রতিক্রিয়া। বমি ও মলের সঙ্গে লাগাতার রক্তক্ষরণ হতে থাকে সুশান্তবাবুর। তাঁকে আইসিইউ-তে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিত্সক। শুরু হয় হিমোডায়ালিসিস। রক্তক্ষরণ সামাল দিতে নতুন করে ছয় ৬ ইউনিট 'O' পজিটিভ রক্ত তাঁকে দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১০ এপ্রিল মৃত্যু হয় সুশান্ত কুমার নাগের।
এদিকে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার মতো মারাত্মক ভুল করলেও নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। ভুল রিপোর্ট আসার পরদিনই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে শেক্সপিয়র সরণি থানায় প্রথম অভিযোগ জানাতে যান সুশান্তবাবুর ছেলে সৌত্রিক। অভিযোগ, নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে FIR নেওয়া দূরের কথা, ছেলের অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে জেনারেল ডায়েরিটুকুও গ্রহণ করেনি থানার আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন, কম খরচে কলকাতায় লিভার ক্যানসারের চিকিত্সা করালেন বাংলাদেশি নাগরিক
এরপর সুশান্তবাবুর মৃত্যুর পর আরও একবার থানায় যান সৌত্রিক নাগ। কিন্তু এবারও একই অভিজ্ঞতা হয়। প্রভাবশালী নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কোনও ডায়েরি নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন পুলিস। অভিযোগপত্রে 'কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড' স্ট্যাম্প মেরেই দায় সারে পুলিস। বর্তমানে সুবিচারের আশায় প্রশাসনের দরজায় ঘুরছে নাগ পরিবার। থিয়েটার রোডের নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্যভবনে। অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেও।