ব্যুরো: একই দিনে দেশের দুই প্রান্তে ভিন্ন সুরে কথা বলল বিজেপি আর আরএসএস! কেরালাতে যখন জোর করে ধর্মান্তরণ বিরোধী আইন আনার পক্ষে সওয়াল করলেন বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ, তখন কলকাতায় ভিএইচিপি-এর সভামঞ্চ থেকে সারা দেশে সঙ্ঘের ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানালেন মোহন ভগবত, ডাক দিলেন 'ঘর ছাড়াদের ঘরে ফিরিয়ে আনার'। একই সঙ্গে জানালেন যাদের ধর্মান্তরণে আপত্তি আছে তারা এর বিরোধী আইন নিয়ে আসুন।   


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সঙ্ঘ পরিবার আর বিজেপির অন্তরঙ্গতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও অধিকারই বোধহয় দেয় না বিজেপির জন্ম ইতিহাস। তাই, দেশের ভিন্ন প্রান্তে, এই দুই নেতার মুখে বিপরীত সুরের কারণটা কী? প্রশ্ন এখন এটাই।


সংগঠনের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে শহিদ মিনারে সভা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। আমরা হিন্দু স্লোগান দিয়ে সভার আয়োজন করা হয়। ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং ভিএইচপি সভাপতি প্রবীণ তোগাড়িয়া। আমন্ত্রণ জানানো হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে। সভায় ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহাও।    


আজকের সভায় ভিএইচপি-কার্যকরী প্রেসিডেন্ট প্রবীণ তোগাড়িয়া এ 'হিন্দুত্ব', 'ভারত হিন্দু রাষ্ট্র', 'হিন্দুদের উপর অত্যাচার', 'অনুপ্রবেশ ', 'হিন্দু ঐতিহ্য', 'গো হত্যা' নিয়ে সংগঠনের ঘোষিত মতবাদের স্বপক্ষে গলা ফাটাবেন সেটা খানিক আঁচ করাই গিয়েছিল। সাংগঠনিক লাইনে সোজা হেঁটে কিছুটা ঘুরিয়ে এই বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্যের প্রতিটা ছত্রে ছত্রে ইসলাম বিরোধীতাও ছিল।


ধর্মান্তরণ ইস্যুতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমাবেশে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত্‍। আগ্রার ঘটনা প্রসঙ্গে আজ তিনি বলেন, 'যারা ভুল পথে গেছেন,তাদের  ঘরে ফেরানো হবে...আমাদের মাল আমরা ফেরাবো তাতে কার কী বলার আছে...?  শুধু তাই নয়, সঙ্ঘ প্রধানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, যত বিতর্কই হোক না কেন আরএসএস-এর 'ধর্ম জাগরণ মঞ্চ' ধর্মান্তরণের  পথ থেকে মোটেও সরছে না।  


কেরালাতে আবার মোহন ভগবতের বক্তব্যের উল্টো সুর শোনা গেল বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের মুখে। শনিবার আলিভায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহ দাবি করলেন বিজেপি নাকি জোর করে ধর্মান্তরণের ঘোর বিরোধী।


বিতর্কের শুরুটা হয়েছিল আগ্রার বস্তি এলাকায় গরিব মুসলিমদের জোর করে ধর্মান্তরণ নিয়ে। এই ধর্মান্ত্রণের মূল হোতা 'ধর্ম জাগরণ মঞ্চ' সঙ্ঘ পরিবারের ঘোষিত উইং। স্বাভাবিক ভাবেই এই বিতর্কে সংসদের বিরোধীদের সব অভিযোগ জমা হয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, এই ধরণের ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।


বিজেপি শুরু থেকেই বলে আসছে, আগ্রার ঘটনায় তারা জড়িত নয়। যা হয়েছে তা হিন্দু জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে হয়েছে। শনিবার, কেরলের আলুভায় অমিত শাহও  সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন।


বিজেপি সভাপতি যখন এ কথা বলছেন, তখন শহিদ মিনারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভায় সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের মুখে শোনা গেল উল্টো কথা।


বিরোধীদের চাপের পাল্টা কৌশল হিসাবে জোর করে ধর্মান্তরকরণ রুখতে আইন চালুর কথা আগেই বলেছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু। শহিদ মিনারের সভায় বিষয়টি ছুঁয়ে গেছেন মোহন ভাগবতও। তবে, আগরার ঘটনাকে তিনি খোলাখুলি সমর্থন করলেন। এতদিন যা করছিলেন সঙ্ঘ পরিবারের ছোট ও মাঝারি মাপের নেতারা।


অর্থাৎ একদিকে বিজেপির উঁচু তলার নেতারা উগ্র হিন্দুত্ব নিয়ে 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' লাইন নিচ্ছেন, অন্যদিকে সঙ্ঘপরিবার হিন্দুত্ববাদের স্বপক্ষে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।


পরিকল্পিতভাবেই কি এই দ্বিমুখী কৌশল? জল্পনার কেন্দ্রে এখন এই প্রশ্নই।