Samarendra Kumar Mitra: সমরেন্দ্র মিত্রকে চেনেন? এঁকে ছাড়া আধুনিক ভারত এক পা-ও চলতে পারে না, অথচ...
Samarendra Kumar Mitra Father of Computer in India: তাঁকে বলা হয় ভারতের কম্পিউটারের জনক। সারা পৃথিবী তাঁকে মনে রেখেছে অথচ, বাঙালি তাঁকে সম্পূর্ণ ভুলেছে। এতে অবশ্য আশ্চর্যের কিছু নেই! বাঙালি সততই বিস্মরণপ্রবণ। আজ তাঁর মৃত্যুদিন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিদেশে কাজ করার সময়ে তাঁর সঙ্গে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, ভোলফগাং পাউলি, জন ভন নিউম্যানের মতো বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ যেখানে গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বের তাবড় তাবড় টেক-জায়ান্টদের প্রধান কার্যালয়, সেখানেই রয়েছে 'কম্পিউটার হিস্ট্রি মিউজিয়াম'। সেই মিউজিয়ামে রয়েছে তাঁর নামে স্মৃতিফলক। দুনিয়া এই ভারতীয় তথা বাঙালিকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু খোদ বাঙালিই তাঁকে ভুলেছে! বাঙালির পক্ষে অবশ্য এটা তত আশ্চর্যের ঘটনা নয়, কেননা সে আত্মবিস্মৃত জাতি। অথচ, তাঁকে মনে রাখার কারণটিও খুব জোরদার। তাঁর একটি পরিচয় আছে-- ভারতে কম্পিউটারের জনক তিনি! তিনি ভারতের প্রথম কম্পিউটারনির্মাতা বাঙালি বৈজ্ঞানিক। জ তাঁর মৃত্যুদিন।
আরও পড়ুন: Great Teachers: ভারতে জন্ম, কিন্তু এঁরা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের অন্যতম...
কে তিনি তাঁর নাম সমরেন্দ্রকুমার মিত্র। বিরল প্রতিভা ও কৃতিত্বের অধিকারী বাঙালি বৈজ্ঞানিক সমরেন্দ্রের জন্ম কলকাতায়, ১৬ সালের ১৪ মার্চে। বৌবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু। ১৯৩১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন। ১৯৩৩ সালে (তৎকালীন) প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট-ইন-সায়েন্স। ১৯৩৫ সালে প্রেসিডেন্সি থেকেই রসায়নে স্নাতক। ১৯৩৭ সালে স্নাতকোত্তর। ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজ থেকে ফলিত গণিতে মাস্টার্স। পরবর্তী বছরগুলিতে মেঘনাদ সাহার অধীন পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি। যদিও মেঘনাদ সাহার মৃত্যু ঘটলে তাঁর এই গবেষণা অসম্পূর্ণই রয়ে যায়। যদিও তিনি নিজে থেমে থাকেন না।
১৯৫০ সালে সমরেন্দ্রকুমার কলকাতার 'ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে' যোগ দেন। সেখানেই ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত পড়ানো, গবেষণা, পরিচালনার মতো নানান দায়িত্ব সামলান। এই পর্বেই তিনি এক বিরল কাজ করেন। 'আইএসআই'-তে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'কম্পিউটিং মেশিন ও ইলেক্ট্রনিক্স' বিভাগ। এদেশের বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণায় যুগান্তকারী প্রভাব ও অবদান এই বিভাগের।
সমরেন্দ্রকুমারই ১৯৫৪ সালে ভারতের প্রথম দেশীয় 'ইলেক্ট্রনিক অ্যানালগ কম্পিউটারে'র নকশা তৈরি ও সেই অনুযায়ী কম্পিউটার যন্ত্র নির্মাণও করেছিলেন। তাঁর তৈরি সেই কম্পিউটার ১০টি চলরাশিযুক্ত সরল সমীকরণ ও তৎসংক্রান্ত গণনার কাজ অনায়াসেই করতে পারত। এতে গাউস-সেইডেল পুনরাবৃত্তি প্রক্রিয়ার একটি পরিবর্তিত সংস্করণের প্রয়োগও করা হয়েছিল।
জীবদ্দশায় অবশ্য তাঁর বিরল প্রতিভা ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেশ-বিদেশ মিলিয়ে কিছুটা হলেও পেয়েছিলেন সমরেন্দ্রকুমার। আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে 'হাই স্পিড কম্পিউটিং মেশিন' নিয়ে গবেষণার জন্য সমরেন্দ্রকে বিশেষ ফেলোশিপ দিয়েছিল 'ইউনেসকো'।
সমরেন্দ্রকুমার ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে উপদেষ্টা হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। 'ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চে'রও সদস্য ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: এই ছবিগুলি না-দেখলে আপনার উত্তম-জার্নি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে...
১৯৯৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতাতেই প্রয়াত হন বিরল প্রতিভার অধিকারী এই সমরেন্দ্রকুমার। পরবর্তী কালে তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্র নব নব রূপে বিকশিত হয়ে ওঠে বটে, তবে তিনি স্বয়ং চলে যান বিস্মৃতির অতলে। আজও সেই অবস্থার কোনও পরিবর্তন ঘটেনি! ক'জন বাঙালি এক ডাকে চেনে সমরেন্দ্রকুমারকে?