নিজস্ব প্রতিবেদন : কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। ডিএ মামলায় নির্দেশ দিল স্যাট। বড় জয় পেলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। গত ১৮ জুন স্যাটে শেষ হয় ডিএ মামলার শুনানি। শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিল স্যাট। আজ রায় ঘোষণা করে স্যাট জানিয়েছে, কীভাবে ডিএ দেওয়া হবে, তার আইন করা রাজ্যের দায়িত্ব। পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, বকেয়া মেটানো রাজ্যের কর্তব্য। হয় নগদে মেটাতে হবে বকেয়া টাকা, নইলে পিএফ অ্যাকাউন্টে তা ট্রান্সফার করে দিতে হবে। এক বছরের মধ্যে অথবা ষষ্ঠ পে কমিশনের রায়ের আগে তা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে স্যাট।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


রায় ঘোষণা করে বিচারপতি আর কে দাস ও সুরেশ বাগ বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জেরে ঘাটতি মেটাতে ডিএ দেওয়া হয়। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী ডিএ স্থির হয়। সেক্ষেত্রে রাজ্যে রোপা আইন থাকলেও, ডিএ-র হার নির্ধারক মূলত অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স। এখন রোপা আইন অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ডিএ দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু তারপর থেকেই তা অনিয়মিত হয়ে যায়। মানা হচ্ছে না কোনও হার। এখন রাজ্য কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার জন্য ৩ মাসের মধ্যে পলিসি বের করতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে সেই পলিসি কার্যকর করতে হবে। এক বছরের মধ্যে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে হবে।


এর পাশাপাশি রায়ে স্যাট সুস্পষ্টভাবে আরও জানিয়েছে, ভিন রাজ্যে (দিল্লি-চেন্নাইয়ে) নিযুক্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বৈষম্যমূলক। রাজ্য সরকারি কর্মী হিসেবে তাঁদের আলাদা কোনও স্তর নেই। তবে তাই বলে ডিএ বাবদ দেওয়া সেই বেশি টাকা ফেরত নেওয়াও যাবে না। ভবিষ্যতে তাঁদের ইনসেন্টিভ দেওয়ার ক্ষেত্রে হার নির্ধারণ করতে পারবে রাজ্য। রাজ্যে অথবা ভিন রাজ্যে নিযুক্ত রাজ্য সরকারি কর্মী, সকলের ক্ষেত্রেই ডিএ হতে হবে সমহারে। বছরে ২ বার ডিএ দিতে হবে।


ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনসঙ্গত অধিকার বলে গত বছর ৩১ অগাস্ট  রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।  রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট স্যাটকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র হার নির্ধারণ করতে বলে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সমহারেই ডিএ পাবেন কিনা? স্টেট অ্যডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালকে তা স্থির করতে বলা হয়। এরপর গত বছর ১৫ অক্টোবর ডিএ মামলার শুনানি শেষ হয়ে যায় স্যাটে। কিন্ত এর পর আবার রাজ্যের তরফে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে বিশেষ শুনানির আবেদন করা হয় হাইকোর্টে।


সেজন্য হাইকোর্ট বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও শেখর ববি শরাফের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করে। কিন্ত ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছরের ৮ মার্চ ডিএ মামলায় রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয়। স্যাটকেই আবার বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। সেটারই শুনানি শেষ হয়  ১৮ জুন। শুনানির সময় ১২ জুন রাজ্য সরকার স্যাটে জানিয়েছিল রাজ্যের তহবিল নেই তাই ডিএ  দিতে পারছে না। রাজ্যের তরফে আইনজীবী অপূর্ব লাল বসু জানান, "ডিএ দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে ডিএ দিতে পারছে না রাজ্য। কেন্দ্র সরকারও অসহযোগিতা করছে। কারণ সেন্ট্রাল ফিনান্সিয়াল রেসপন্সিবিলিটি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল অনুয়ায়ী রাজ্য ৩ শতাংশের  বেশি ধার নিতে পারবে না। ফলে কেন্দ্রের থেকে রাজ্য ধার নিতে পারছে না। সেই জন্য ডিএ দেওয়ার সমস্যা হচ্ছে। "


আরও পড়ুন, মনুয়াকাণ্ড: স্বামী অনুপমকে খুনে স্ত্রী মনুয়া ও প্রেমিক অজিতের যাবজ্জীবন


সেই যুক্তি খারিজ করে কর্মচারীদের তরফে আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি ও ফিরদৌস শামিম পাল্টা সওয়াল করেন," এর সাথে ডিএ-এর কোনও সম্পর্ক নেই। ডিএ সম্পূর্ণ মূল্যবৃদ্ধির সাথে যুক্ত। এই সব যুক্তি দেখিয়ে আসলে রাজ্য এড়িয়ে যেতে চাইছে। দিনের পর দিন মূল্যবৃদ্ধি হলেও রাজ্য সেই অনুপাতে মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি করেনি।" আজ স্যাটের রায়ে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে ন্যায্য দাবি আদায় করে নিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা।