সুতপা সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রথযাত্রা নিয়ে শাসক-বিজেপির বিবাদ মিটতে চলেছে। শর্তসাপেক্ষে রাজ্য সরকার রথযাত্রার অনুমতি দিতে চলেছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। প্রায় দেড় মাস ধরে বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে আপত্তি রাজ্য সরকারের। নবান্ন সূত্রে খবর, দেড় মাস ধরে রথযাত্রার অনুমোদন দেওয়া হবে না। বরং গোটা কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে ১৪ দিনের মধ্যে। শনিবার সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে বিজেপিকে। 


হাইকোর্টের নির্দেশে রথযাত্রার সমাধানসূত্র খুঁজতে বৃহস্পতিবার লালবাজারে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রশাসনিক কর্তারা। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, রথযাত্রার দিনক্ষণ বদল হলেও পূর্বনির্ধারিত পথেই চলবে রথ। ৪২টি কেন্দ্রেই পৌঁছবে বিজেপির 'গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা'র যান।  


নবান্ন সূত্রে খবর, হাইকোর্টের নির্দেশ মতোই শনিবার প্রশাসনের মতামত জানিয়ে দেওয়া হবে বিজেপিকে। ৪২ দিনের অনুমতি দেওয়া যাবে না। তার বদলে ১৪ দিনের মধ্যেই রথযাত্রা সম্পন্ন করতে হবে। এর পাশাপাশি ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে থাকবে উত্সবের আবহ। ওই দিনগুলিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। 


গঙ্গাসাগর থেকে রথযাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। এনিয়েও আপত্তি রাজ্য সরকারের। গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে রথযাত্রা করা যাবে না বলে মত প্রশাসনিক কর্তাদের। শুধু তাই নয়, স্পর্শকাতর ও সংখ্যালঘু এলাকা দিয়ে রথযাত্রা করা যাবে না। কর্মসূচির নাম 'রথ যাত্রা' দেওয়া যাবে না। যদিও বিজেপিকে এই কর্মসূচিকে 'গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা' বলছে। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সভা নিয়েও কোন আপত্তি নেই নবান্নের। সূত্রের খবর, বিজেপিকে রাজ্য সরকারের আপত্তিগুলি জানিয়ে দেওয়া হবে।       


বৃহস্পতিবার লালবাজারে বিজেপি নেতাদের কাছে প্রশাসনিক কর্তারা জানতে চান, রথযাত্রার মাঝে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান আছে? বিজেপি নেতারা জানিয়ে দেন, সবটাই রাজনৈতিক। কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত নেই। ক্রিসমাস ও নব বর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকে। সেই সময় রথযাত্রা হলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই বিষয়টি কি বিজেপি মাথায় রেখেছে? দিলীপ ঘোষরা জানান, এসব বিবেচনা করেই রথযাত্রার সূচি তৈরি করা হয়েছে। 


সভায় কত লোক থাকতে পারে বলে অনুমান? প্রশাসনিক কর্তাদের এহেন প্রশ্নে বিজেপি জবাবে দেয়, কত লোক হবে তা বলা সম্ভব নয়। নরেন্দ্র মোদীর সভায় যে লোক আসেন, তা নিশ্চিতভাবেই দিলীপ ঘোষের সভায় আসবেন না। ফলে একেক সভায় একেক রকম ভিড় হতে পারে। 


সভার নির্ঘণ্ট জানতে চান প্রশাসনিক কর্তারা। তখন বিজেপি নেতৃত্ব জানান, দিল্লি থেকে সর্বভারতীয় নেতারা আসবেন। আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। প্রশাসন রথযাত্রা ও সভার অনুমতি দিলে নেতাদের থেকে সময় নিয়ে জানানো হবে।  


বৈঠক শেষে দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন,''লিখিত আকারে রথের যাত্রাপথ জমা দিয়েছিলাম। ওই রাস্তা দিয়েই যাব। খালি দিন পরিবর্তন করতে হবে। সেভাবেই অনুমতি দিতে হবে। প্রশাসনের অনুমতি দিলেই ২-৩ দিনের মধ্যেই শুরু হবে রথযাত্রা। আমরা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে সময় নেব, সে জন্য সময় চেয়েছি''।


উল্লেখ্য,  হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে ধাক্কা খায় বিজেপি। এরপর ডিভিশন বেঞ্চের শরণাপন্ন হয় তারা। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ স্বস্তি দেয় বিজেপিকে। শুক্রবার বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, রথযাত্রার দিনক্ষণ নির্ধারণে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজির সঙ্গে বৈঠক করতে হবে বিজেপিকে। বিজেপির তরফে যে তিন জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে দুজন অর্থাত্ মুকুল রায় ও জয়প্রকাশ মজুমদারকে নিয়ে আপত্তি ছিল রাজ্যের। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, মুকুল রায় ও জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কীভাবে বৈঠকে বসবেন রাজ্যের ডিজি, মুখ্যসচিব। সেই যুক্তি উড়িয়ে দেয় আদালত। স্পষ্ট জানায়, অপরাধ প্রমাণ না হলে অপরাধী নয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৈঠকে বসার সময় দেওয়া হয়। 


আরও পড়ুন- অসমের পঞ্চায়েত ভোটে দাগ কাটতে পারল না তৃণমূল