Subhash Chandra: `আত্মবিশ্বাস এবং ব্র্যান্ড Zee-র উপর ভরসা রেখেই এগোতে হবে!` কলকাতা অফিসে পরামর্শ এসেল গ্রুপের চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্রের
চ্যানেল এডিটর মনে করিয়ে দেন, এরকম দিন রোজ রোজ আসে না, এটা zee ২৪ ঘণ্টা কর্মীদের কাছে বিশিষ্ট একটি দিন, তাঁরা সুভাষ চন্দ্রের মতো এক ব্যক্তিত্ব, যিনি ভারতীয় টেলিভিশন মিডিয়ায় প্রায় বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন এবং তাঁর কথা শোনার সৌভাগ্য হচ্ছে তাঁদের।
নিজস্ব প্রতিবেদন: চার বছর পরে তিনি কলকাতায়। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যম-জগতের অন্যতম বিশিষ্ট এক চরিত্র, প্রখ্যাত মুখ, বর্ণময় ব্যক্তিত্ব। তিনি 'দ্য জি ফ্যাক্টর: মাই জার্নি অ্যাজ দ্য রং ম্যান অ্যাট দ্য রাইট টাইম'-এর লেখক সুভাষ চন্দ্র। 'জি মিডিয়া' এবং 'এসেল গ্রুপে'র চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র গোয়েঙ্কা।
সল্টলেক সেক্টর ফাইভে মিডিয়াসিটি বিল্ডিংয়ে 'জি ২৪ ঘণ্টা'র অফিসে এই প্রথমবার এলেন সুভাষ চন্দ্র। সোমবার কাঁটায় কাঁটায় সকাল ১০টায় বিল্ডিংয়ের ১১ তলার অফিসে পৌঁছন তিনি। ফ্লোরে ঢুকেই তিনি সমস্ত কর্মীকে একটা জায়গায় ডেকে নেন। তাঁদের সঙ্গে কথা-বার্তা শুরু করেন। আগাগোড়া তাঁর মুখে লেগেছিল স্মিত এক হাসি।
পোশাকি ভাবে হয়তো ঠিক উদ্বোধনী ভাষণ বলা চলে না, তবে, নবনিযুক্ত 'চ্যানেল এডিটর' গৌতম ভট্টাচার্য প্রথমেই ছোট্ট কিন্তু আবেগমথিত এক ভাষণের সূত্রে এ দিনের এই বিগ ইভেন্টের মূলসুরটি বেঁধে দেন। সমবেত কর্মীদের উদ্দেশ্যে গৌতম বলেন, এরকম দিন রোজ রোজ আসে না, এটা জি ২৪ ঘণ্টা কর্মীদের কাছে খুবই বিশিষ্ট এক দিন, তাঁরা সুভাষ চন্দ্রের মতো এক ব্যক্তিত্ব, যিনি ভারতীয় টেলিভিশন মিডিয়ায় প্রায় বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন এবং তাঁর কথা শোনার সৌভাগ্য তাঁদের হবে।
এর পরই সুভাষ চন্দ্রের দিকে মাউথপিস এগিয়ে দেওয়া হয়। তিনি অবশ্য মাউথপিস নেন না। খুব আন্তরিক ও ঘরোয়া ভঙ্গিতে কথা বলতে শুরু করেন। প্রথমেই নিজে কিছু না বলে, কর্মীদের থেকে চ্যানেল সম্বন্ধে জানতে চান। মাউথপিস এগিয়ে দেওয়া হয় কর্মীদের দিকে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কিছু কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। গত কয়েকবছর ধরে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সকলেই চলেছেন, তার প্রভাব কিছুটা কাজেও পড়েছে। ফলে চ্যানেলের কর্মীদের মনোবল কিছুটা হলেও নীচের দিকে। এদিন অনেকের কথাতেই সেই প্রসঙ্গ উঠে আসে বারবার।
এই প্রসঙ্গকেই সূত্র হিসেবে ধরে নিয়ে এরপর নিজের বক্তব্যে ঢোকেন সুভাষ চন্দ্র। তিনি জানতে চান, কেন 'মরাল লো' হয়ে পড়ছে, মনোবল কমছে? ফের কিছু কিছু উত্তর আসে। এর পর আবার তিনি শুরু করেন। তবে তখনও তিনি বলেন, তিনি আর একটি প্রশ্ন করতে চান। সেটি হল, কেন কর্মীরা সকলে গলায় তাঁদের আইডেন্টিটি কার্ডটি ঝুলিয়ে রেখেছেন? গুঞ্জনের মধ্যে দিয়েই উত্তর উঠে আসে, এটা তাঁদের কাছে একটা 'প্রাইড', এটা 'আইডেন্টিটি'। তিনি সেই মন্তব্য সমর্থন করে বলেন, আপনারা যে এটা পরে আছেন, তার কারণ, এটা একটা আইডেন্টিটি, এটা একটা ব্র্যান্ড। যে ব্র্যান্ডটি আপনারা ভালোবাসেন, যার মর্যাদা দেন। তিনি জানান, জি মিডিয়া তার প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে, এবং জি'র কর্মীদের সবার আগে সেটা বিশ্বাস করতে হবে। জি যদি কিছু বলে সেটা দেশবাসীর মনে প্রভাব ফেলে। জির উপর এই যে মানুষের বিশ্বাস, সেটার জন্য একটি অতিরিক্ত দায়িত্বও এসে পড়ে। খবরের সত্যতা রক্ষার উপর তিনি সব চেয়ে বেশি জোর দিতে বলেন। অন্য়কে নকল না করে, আত্মসম্মানের সঙ্গে, সাহস ও শক্তির সঙ্গে নিজের কাজটা শুধু মন দিয়ে করে যাওয়াটাই আসল। নিজস্ব কন্টেন্ট তৈরি করার উপরই আগাগোড়া জোর দেন তিনি।
এর পর তিনি নিজের অতুল অভিজ্ঞতার কথা বলার সূত্রে শুধু এটুকু বলেন যে, ভাল সময় ও খারাপ সময় আসবেই। তিনি নিজেও অনেক ভাল-মন্দ দেখেছেন। সব চেয়ে খারাপ সময় দেখেছেন কোভিড-পর্বে। তিনি মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না যে, এই সঙ্কট থেকেও তিনি যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি বলেন, বাইরে কী ঘটছে তা না দেখে বরং নিজের দিকে তাকান, নিজেকে দেখুন। তিনি কর্মীদের ফ্রাসট্রেটেড হতে নিষেধ করেন। বলেন, বরং বাজারের প্রতিযোগীদের ফ্রাসট্রেটেড করে দিন।
তিনি কর্মীদের পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক পেশাদারি সম্পর্কের উপরও জোর দিতে বলেন। বলেন, 'এইটুকু আমার কাজের এরিয়া, আমি এইটুকুর মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখব'-- এভাবে ভাববেন না। আর কখনও কোনও সহকর্মীর দোষত্রুটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানাবেন না। তার চেয়ে নিজেরাই ওই সহকর্মীকে সতর্ক করে দিন বা তাঁর ভুল শুধরে তাঁকে সুপরামর্শ দিন। সকলে একত্রিত এক সত্তা, এক অস্তিত্ব। সকলে মিলে এক লক্ষ্যে কাজ করাটাই অগ্রাধিকার।
বক্তব্যের একেবারে শেষে এসে তিনি এই অফিসের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অফিসের জন্য, ভালো কাজকর্মের জন্য, অফিসের সার্বিক মঙ্গলকামনায় একটি 'শুভ চিজ' তিনি নিয়ে এসেছেন বলে উল্লেখ করেন। বলেন, সেটি অফিসে কোথাও রেখে দেওয়া হবে। পরে একটি লাল বাক্সের মধ্যে তাঁর উল্লেখ করা সেই শুভ বস্তুটি দেখা যায়; লাল রঙের স্বস্তিক চিহ্ন, সেখানে একদিকে লেখা 'সিদ্ধি লাভ' অন্যদিকে 'সিদ্ধি শুভ'। সেটি অফিসের সমস্ত কর্মীরা দর্শন ও প্রণাম করেন।
ততক্ষণে তিনি অবশ্য গোটা অফিস ঘুরে দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। আসেন ডিজিটালেও। সেখানে এসে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন, তাঁদের কাজকর্মের খোঁজ নেন, পরামর্শও দেন।
আরও পড়ুন: Kolkata Summer: বৃষ্টি ছাড়াই ৫৫ দিন, জ্বালাপোড়া ধরবে গায়ে, কলকাতার গরম নিয়ে অশনিসংকেত!