নিজস্ব প্রতিবেদন: বুড়ো হারে ভেলকি দেখালো টালা ট্যাঙ্ক। যে ক্রেন নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলো, সোমবার ইঞ্জিনিয়াররা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানালেন, সব অবিকৃত রয়েছে। অর্থাত্ এক ফোঁটা আঁচড়ও কাটতে পারেনি আমফান।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তবে, ট্যাঙ্ক বাঁচানো সম্ভব হলো কিভাবে? প্রায় ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে আসা আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো শতাব্দী প্রাচীন টালা ট্যাঙ্ক। এই ভয় কাজ করেছিল পুর আধিকারিকদের মনে। কারণ, মেরামতির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। বিগত ১০০ বছরে এত বড় রকমের ঝড়ের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই কারোর। প্রাক্তন জল বিভাগের বেশ কিছু আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, কিন্তু সাহায্য করতে পারেননি কেউ।  দুপুরের পর থেকে আবহাওয়ার পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে শুধুমাত্র মেয়রকে জানিয়েই টালা ট্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। আর সেই সিদ্ধান্তেই কেল্লা ফতে হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।


এমনিতে হাইড্রোলিক সিস্টেম এ টালা ট্যাঙ্ক থেকে অবিরাম পদ্ধতিতে অনবরত জল ওঠানামা করে। কখনোই ট্যাঙ্কে জল দাঁড়িয়ে থাকে না। কিন্তু দুপুরের পর পরিস্থিতি দেখে আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত্রি পর্যন্ত কোন জল নামতে দেওয়া যাবে না। দ্রুত চাবি বন্ধ করে জল নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। টালার ট্যাঙ্কে জল ধরার ক্ষমতা ৯ মিলিয়ান গ্যালন। ৮ মিলিয়ন গ্যালন জল দ্রুত পূর্ণ করে ফেলা হয় ট্যাঙ্কেরর চারটি প্রকোষ্ঠে। জল-সহ গোটা ট্যাংকের ওজন দাঁড়ায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। যাকে এক চুলও নড়ানো ক্ষমতা আমফানের ছিলো না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।


আরও পড়ুন- নজিরবিহীন! এক সঙ্গে ৬০ জন করোনা আক্রান্তকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরাচ্ছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ


 সোমবার সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সাফল্যের হাসি হাসছেন টালার দায়িত্বে থাকা পুরো আধিকারিকরা। বলছেন, আমফান ক্ষতি করল অনেক, কিন্তু একটা পরীক্ষা হয়ে গেল এর মধ্যে দিয়েঅ। আগামী আরও ১00 বছরের জন্য সুরক্ষিত টালা ট্যাঙ্ক। আমফানই যেন সিলমোহর দিয়ে গেল!


এক নজরে জেনে নেওয়া যাক শতাব্দী প্রাচীন টালা ট্যাঙ্কের ইতিহাস:


 ** ১৯০১ সালে কলকাতার জল সরবরাহের জন্য পুরসভাকে একটি ট্যাঙ্ক তৈরি করার প্রস্তাব দেন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার ডেভেরাল।


** পরবর্তীকালে একটি খসড়া তৈরি করা হয় ট্যাঙ্কের। যেটি ডিজাইন করেন ডেভেরালের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার পিয়ার্স।


** ১৯০২ সালে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। পরের বছর, ডব্লিউ বি ম্যাকক্যাবে আধুনিক টালা ট্যাঙ্কের ডিজিাইন তৈরি করেন। প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়।  


** ১৯০৯ সালে ১৮ নভেম্বর বাংলার লেফ্টান্যান্ট গভর্নর এডওয়ার্ড বেকার টালা ট্যাঙ্কের শিলান্যাস করেন। ৪৮২ একর জমির উপর শুরু হয় কাজ।


** নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯১১ সালে ১২ জানুয়ারি। প্রায় ২২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ওই বছরই ১৬ মে চালু করে দেওয়া হয় টালা ট্যাঙ্কটি।


টালা ট্যাঙ্ক নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য:


** ১১০ ফিট উচ্চতার ট্যাঙ্কটি জল ধারণ ক্ষমতা ৯০ লক্ষ গ্যালন।


** চারটি রিজার্ভার রয়েছে ট্যাঙ্কটির।  কাঠের উপরে ইস্পাত দিয়ে তৈরি এই জলাধার


** টাইটানিক জাহাজ যে ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয়েছে, সেই ইস্পাতে তৈরি টালা ট্যাঙ্কটি।


** ২০১৩ সালে প্রথম খড়গপুর আইআইটি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, এই ট্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। তারপরই সংস্করণের কাজ শুরু হয় টালা ট্যাঙ্কটির। ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।


** উত্তর কলকাতা থেকে শুরু করে ভবানীপুর কালীঘাট এলাকা পর্যন্ত জল সরবরাহ করে আসছে এই এশিয়ার বৃহত্তম এবং পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম জলাধারটি।