আমফানের সঙ্গে লড়তে পারবে শতাব্দী প্রাচীন টালা ট্যাঙ্ক? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
মূলত টালা ট্যাংকের সংস্করণের জন্যই ফ্রান্স থেকে বরাদ পাওয়া সংস্থা ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ক্রেন নিয়ে আসে
নিজস্ব প্রতিবেদন: আরও জোরে এক্সেলেটরে চাপ। স্টিয়ারিং একদম বাংলার অভিমুখে। শক্তি বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে আমফান। সবরকম ভাবে রাজ্যও প্রস্তুত। বুলবুলের মতো আমফানকে রুখে দিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। মাথা তুলে দাঁড়ানো বিশ্বের বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার টালা ট্যাঙ্কেরও চলছে কড়া নজরদারি।
টালা ট্যাঙ্কের সংস্করণের জন্য ফ্রান্স থেকে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ক্রেন নিয়ে আসে বরাদ পাওয়া সংস্থা ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি। ১৩০ ফিট লম্বা ক্রেনটি ট্যাঙ্কের ৪০ ফুট গভীর পর্যন্ত গিয়ে কাজ করতে পারে। আমফান ঝড়ের কাছে ওই ক্রেনটি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কিনা প্রশ্ন উঠছে। পুরসভার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ক্রেনটিকে ফ্লেক্সিবল করে দেওয়া হয়েছে যাতে ঝড়ের সঙ্গে নিজেকে যুঝতে পারবে অনায়াসে। ক্রেনের প্রস্থের অংশটিকে আলগা করে ট্যাংকের ছাদে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঝড়ে টালা ট্যাঙ্কের ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। তবে, পুরসভার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ইস্পাতের কাঠামোর কাজ অধিকাংশই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। অতীতে বহু ঝড়ঝাপটা সহ্য করেছে এই ট্যাঙ্ক। বিশেষত ১৯৩৫ সালে বড় ভূমিকম্প সহ্য করে একইভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থেকেছে কলকাতার ঐতিহ্য এই টালা ট্যাঙ্ক। আমফানের হুঙ্কারকেও ফুত্কারে উড়িয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন পুরসভার আধিকারিকরা।
এক নজরে জেনে নেওয়া যাক শতাব্দী প্রাচীন টালা ট্যাঙ্কের ইতিহাস:
** ১৯০১ সালে কলকাতার জল সরবরাহের জন্য পুরসভাকে একটি ট্যাঙ্ক তৈরি করার প্রস্তাব দেন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার ডেভেরাল।
** পরবর্তীকালে একটি খসড়া তৈরি করা হয় ট্যাঙ্কের। যেটি ডিজাইন করেন ডেভেরালের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার পিয়ার্স।
** ১৯০২ সালে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। পরের বছর, ডব্লিউ বি ম্যাকক্যাবে আধুনিক টালা ট্যাঙ্কের ডিজিাইন তৈরি করেন। প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়।
** ১৯০৯ সালে ১৮ নভেম্বর বাংলার লেফ্টান্যান্ট গভর্নর এডওয়ার্ড বেকার টালা ট্যাঙ্কের শিলান্যাস করেন। ৪৮২ একর জমির উপর শুরু হয় কাজ।
** নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯১১ সালে ১২ জানুয়ারি। প্রায় ২২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ওই বছরই ১৬ মে চালু করে দেওয়া হয় টালা ট্যাঙ্কটি।
টালা ট্যাঙ্ক নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য:
** ১১০ ফিট উচ্চতার ট্যাঙ্কটি জল ধারণ ক্ষমতা ৯০ লক্ষ গ্যালন।
** চারটি রিজার্ভার রয়েছে ট্যাঙ্কটির। কাঠের উপরে ইস্পাত দিয়ে তৈরি এই জলাধার
** টাইটানিক জাহাজ যে ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয়েছে, সেই ইস্পাতে তৈরি টালা ট্যাঙ্কটি।
** ২০১৩ সালে প্রথম খড়গপুর আইআইটি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, এই ট্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। তারপরই সংস্করণের কাজ শুরু হয় টালা ট্যাঙ্কটির। ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
** উত্তর কলকাতা থেকে শুরু করে ভবানীপুর কালীঘাট এলাকা পর্যন্ত জল সরবরাহ করে আসছে এই এশিয়ার বৃহত্তম এবং পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম জলাধারটি।