অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রাধে মারা যেতে ঠাকুমার আর কোন বন্ধু রইল না। ফলত খুব একা হয়ে গেল ঠাকুমা। একদিন আমাকে ডেকে কয়েকজনের নাম বললে। হুকুম হল, তাদের খোঁজ আনার। সেই সব বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, দুই যুগ আগেই তারা সকলে দেহ রেখেছে। সেই শুনে ঠাকুমা উদাস গলায় বলল, ‘সকলেই পরকালের টিকিট কেটে ফেলল, কেবল আমিই বাদ? পালেদের বাড়ি গেছিলি? পাল বাড়িতে একটা বুড়ি আছে, লালমোহন পালের বউ; ওর এক ছেলে ত রাত্রায় গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেল। সে অমনি পেছন ঘসে ঘসে চলে। শরবিন্দু পালের এক ছেলে থাকে ওর কাছে, বুড়ির দেখাশোনা করে—গিয়ে দেখ, সেই বুড়ি নিশ্চয় বেঁচে আছে। যা, গিয়ে দেখে আয়। তার সাথে এবার আমি অচিত্যার ভ্যানে চেপে ইস্কুলমাঠে পুজো দেখতে যাব।’  


না, কেউ নেই। ঠাকুমার এখন বিরানব্বই, এই বয়সের কেউ নেই। নিজেরই কেমন যেন ধন্দ লাগে। গ্রামের সমস্ত পাড়া ঘুরে দেখি। হাজরা পাড়া-কাঁড়ার পাড়া-মুদি পাড়া—কোথাও কেউ কোন অতি বয়স্ক বেঁচে নেই? আশ্চর্য!


ঠাকুমা যে ঘরে থাকে সেটা এখন কোটা ঘর। রাধে এসে সে ঘরে বসত। নানা গল্প গাছা হোত। অনেক ঘুরেছে রাধে। তার শখই ছিল নানা দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর। সেই সব গল্প এলেই সে করত আর ঠাকুমা নিত্য সেই সব কথা হাঁ করে শুনত। রাধে তার মামাবাড়ি পুরীর গল্প করে যেত পরপর। মানুষের মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে সাদা পাখির ঝাঁক—এই কথা শুনতে ঠাকুমা বড় ভালবাসত।


বাঁ হাতের পাতায় একটা ছোট্ট ফুসকুড়ি হয়েছিল রাধের। সেটা চুলকে ইনফেকশন হয়ে যায়। ক্রমে সেটা এমনি ছড়িয়ে যায় যে গোটা হাতের চামড়াই উঠে যায়। মাংশ বেরিয়ে দগদগে লাল ঘা হয়ে যায়।  ঘরেই পড়েছিল সে। কুড়ি দিন পর রাধে মারা গেল। রাধে মারা যেতে ঠাকুমা শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ কাঁদল। তারপর আমাকে ডেকে বললে, ‘তুই পুরী চলে যা খোকন। দেখে আয় সাদা পাখির ঝাঁকের সাথে রাধে উড়ে যাচ্ছে কিনা।’


চুপ করে থাকি। শ্রাবণ মাসের বত্রিশ তারিখ রাধে মারা গেল।  সেই কবে বর্ষা শুরু হয়েছে, থামার নামটি নেই। মালদা ভাসছে, লোকের বাড়িঘর সব জলের নিচে তলিয়ে দাচ্ছে। কাঁসাই নদীও ঘর খেয়ে নিচ্ছে—এই হল সেদিনের খবর। ত্রাণ নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে, চলছে লুটপাট, মারধোর। এরই মাঝে জল এসে দাঁড়িয়ে পড়ল আমাদের দুয়ারে।


আমি রোজই গ্রাম ঘুরে যাচ্ছি। গ্রামে দু একজন মানুষ আছে, যাদের বয়স আশির আশেপাশে, কিন্তু তারা দিব্যি ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, অনেকে টুকটাক ঘরের কাজও করে দেয়।


ক্লাবের ছেলেরাও ব্যাপারটা তলিয়ে দেখে অবাক। সুব্রত, খচু, বুড়ো, জাম্বু, বাবুলাল প্রগতি সংঘ ক্লাবের নিয়িমিত আড্ডাধারী। তারা কেরাম খেলা থামিয়ে বলে, ‘সত্যি, ব্যাপারটা আমরাও ভেবে দেখিনি। চিকিৎসা- বিঞ্জান এখন কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে! মুদি পাড়ার ললিতদা’র মা হল গিয়ে বিরাশি। এখনও দিব্যি মোড়ের মাথায় সনতের ভ্যান থেকে বেছে বেছে তাজা ও বড় সবজিটা তুলে নেয়। এমনকি তোর ছোট দাদুর বয়স সাতাশি, দিব্যি খালি চোখে অসদ্রে বসে বসে কাগজ পড়ে। মণিশংকরের মাও আশি ছুঁয়ে গেল, এখনও দোক্তা পাতা মুলতে মুলতে এপাড়া ও পাড়া ঘুরে বেড়ায়। এরা বয়সে বুড়ো হলেও আসলে বুড়ো নয়। একমাত্র ‘বুড়ি’ যদি বলতে হয়, সে হল তোর ঠাকুমা।’ ‘চাঁদুদার মা মারা যেতে তোর ঠাকুমা সত্যি একা হয়ে পড়ল রে খোকন। মনের কথা কইবার কোন লোক নেই। চল দেখি, যাই তোর বাড়ি। যেয়ে বড়মার সঙ্গে চাট্টি কথা কয়ে আসি।’


তারা বাড়ি এসে বলে, ‘আমরা তোমার সঙ্গে গল্প করতে এলুম বড়মা। আমরা তোমার বন্ধু হতে চাই।’


ঠাকুমা বললে, ‘আমার কোন বন্ধু নেই। সব চলে গেছে। আমি এখনও ডাক পাইনি। তার কোন আভাষও পাচ্ছি নে।’


‘তুমি আমাদের সাথে গল্প কর না। আমরা তোমার কথা শুনব।’


‘আমি ত গল্প বলি না। গল্প শুনি।’


শুনে ওরা একটু থমকে গেল। বললে, ‘কিসের গল্প শুনতে চাও বল।’


‘সমুদ্দুর পাখির গল্প। এক ঝাঁক সাদা পাখি আকশের মাঝখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, সেই কথা।’


‘কোন সমুদ্রের কথা বলছ, বড়মা?’


‘পুরীর সমুদ্দুর। চৈতন্যদেবের সমুদ্দুর।’


খচু বললে, ‘দূর, সেখেনে সাদা পাখি কোথা? কিছু কিছু বাজ পাখি দেখেছি।’


বাবুলাল বললে, ‘সেখানে আমরা তো প্রতি বছরই দলবেঁধে  যাই, কই কোন পাখির ঝাঁক দেখিনি তো।’


‘আহলে তরা কি করে আমার বন্ধু হবি বল। আমাকে সমুদ্দের গল্প শোনাত রাধে। সেখেনে ও গিয়ে মাসের পর মাস থাকত। ফলে রোজ রোজ নতুন নতুন গল্প শোনাত আমায়। সেই রাধে এখন সাদা পাখির ঝাঁকের ভেতর মহানন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। তোরা আদিত্যবর্ণকে চিনিস?’


‘না।’


‘রৈক্যকে?’


‘না তো!’


‘দৌ-কে তা জানা আছে?’


‘না, এরা কারা?’


‘এরা সকলে পাখি। সমুদ্রের উপর দিয়ে বিশাল সাদা ডানা মেলে উড়ে যায়।’


‘পাখিদের এমন নাম?’


‘না।’


‘তবে?’


‘এরা সকলেই দেবতা।’


‘দেবতাদের এমন নাম? কই, আগে তো শুনিনি।’


‘এরা সব প্রাচীন দেবতা। এই তিন দেবতা মিলে আমাদের তিনটি গ্রাম তৈরি করেন। ছোটচৌঘরা, বড়চৌঘরা আর মুকুন্দপুর। তিন গ্রামের মাঝে বিরাট তিনখানা মাঠ। কিন্তু কথা হল, দেবতারা তিনটি গ্রাম যে গড়লেন—তবে সেগুলি এত দূরে দূরে কেন?’


‘কেন?’


‘গিয়ে জেনে আয় পাখিদের কাছে।’


‘কিন্তু সে পাখি তুমি নিজেও কোনদিন চোখে দেখনি। সাতবার পুরী গেছ, তবুও না। তাহলে হাতে কি রইল? তোমার রাধের ওসব পাখি আসলে বানানো, গল্পকথা। ওর মামাবাড়ির উঠোনের বালিতে নেমে আসত পাখিরা। ‘সেই রাধে এখন পাখি হয়ে উড়ে যায়। সেই পাখিদের গান—’


‘বল না, শুনি।’


‘গানের কথা আমি জানি না।’


‘উড়ন্ত সব পাখিরা—কি চায়?’


‘নৌকাকে জলের উপর রেখে তারা উড়ে যায়। পাখিরা উড়ে যায়, পাখিরাই ফেরে। আসলে কিছুই হয় না জানিস! রাধে শেষ এক বছর একটা নৌকা দেখেছে শুধু।’


‘নৌকা! এখানে আবার নৌকা এল কেন?’


‘ওদের মুদি পুকুরে ভেসে যায়। গোটা মুদি পুকুর সেটা পরিক্রমা করে।’


আমরা সকলে মিলে তখন রাধের বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকি। রাধে মারা যেতে কার কিছু এসে যায়নি। পক্ককেশ চাঁদু মুদি বলল, ‘ না, আমাদের বাড়িতে কখনও সাদা পাখি এসে বসেনি।’


‘তুমি নিশ্চিন্তি হচ্ছ কি করে।’


‘কারণ আমি জানি।’


‘বড়মাই আমাদের গ্রামের একমাত্র বুড়ি মানুষ।’


‘আমার মাও কম বুড়ি ছিল না।’


‘হতে পারে। কিন্তু তোমার মা পড়ে ছিল ওই শেষ কটা দিন। বাকি সময় পাড়া বেড়াত।’


আমরা মাঠের দিকে হাঁটতে থাকি। ওদিকে পাখিরা নামে। ফকির আমাদের পিছু নিল। গ্রামের শেষ সীমানায় এসে আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম। মাঠ। পেরুলেন বড়চৌঘরা। সেটা পেরিয়ে আমারও মাঠ। তারপর মুকুন্দপুর। সত্যি, এই ব্যবধান কেন?


মাঠের ধারে থাকা কিছু লোক বলল, ‘আমরা কোনদিন শুনিনি তিনজন দেবতা মিলে আমাদের এই তিনটি গ্রাম বানিয়েছে। সেই দেবতাদের নিয়েও কোনদিন শুনিনি কিছু। গ্রামের ভেতর চলে এল মাঠ। সেই মাঠেই আমরা চাষ করে ভাত খাই। কিন্তু না দেখেছি সেই তিন দেবতা না দেখেছি তাঁদের পাখিরূপ। এখন ত শুনি তাঁরা পাখি হয়ে উড়ে বেড়ান মঙ্গলা মুদির জলভরা আকশে।’


তখন দেখি বান ধেয়ে আসছে। দূরের নদী বাঁধ ভেঙ্গেছে। এবার জল আসছে। কিন্তু ঘটনা হল আমাদের এদিকে কহকনও বন্যা হয়নি। কিন্তু এবারের বিষয় আলাদা। চারিদিক যখন ডুবে যাচ্ছে, শূন্যে ঝুলে যাচ্ছে রেললাইন, তখন এদিকই বা বাকি থাকে কেন?


আমাদের কথায় গ্রামবাসী সর্তক হয়ে গেল। বান আসছে, তাকে আটকানোর কায়দা আমার জানা নেই। সারা রাজ্যবাসীকে এই বান নাজেহাল করে তুলেছে। তখন সকলে মিলে ঠাকুমার কাছে ছুটল। কিছু একটা উপায় করতে হবে। নইলে যে গ্রাম ভেসে যায়। ঠকুমা বললে সেই তিন দেবতার পুজা করার কথা। তাহলে দেবতারা নিজেরাই ধরাধামে নেমে এসে জলের গতি আটকে দেবেন। তাঁরা পুজা চান। আর এই যে বন্যা আসছে, তা দেবতাদের ভুলে থাকার ফল। যারা গ্রাম বানাল, রাস্তাঘাট বানাল, বন কেটে কৃষিজমি উর্বর করে রাখল, গ্রামে প্রতিষ্ঠা করল সাম্যবাদ—তাদের ভুলে মেরে দিলে চলবে?  


কিন্তু দেবতার মূর্তি? তার কি হবে? গ্রামবাসীরা আকুল হয়ে প্রশ্ন করল। দেবতাদের ঠাকুমাও দেখেনি কোনদিন।  


ফলে কিরকম তাঁদের দেখতে সে নিয়ে কোন ধারণা দেওয়া গেল না। তখন সর্বসম্মতিক্রমে সিধান্ত হল, বহুদিন আগে গত হওয়া মানুষদের অনুকরণে তিন দেবতার মূর্তি গড়া হবে।


নাম ঠিক হয়ে গেল। তিরিশ বছর আগে মারা যাওয়া চাঁদু মুদির বাবা, ওপাড়ার ধরণী মুদি আর নোদো বাগা—এই তিনজন। কিন্তু মুসকিল হল মূর্তি গড়তে গিয়ে। এদের বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া ছেলেরা কেউ তাদের বাবাদের কেমন দেখতে ছিল, ঠিকঠাক বলতে পারল না। তখনকার দিনের ব্যাপার, ফলে ফোটো তোলারও ব্যাপার ছিল না। কেবল পায়ের ছাপই বাঁধান আছে। সুতরাং অন্য উপায় ভাবতে বসল সকলে। শেষে ঠিক হল, তিনটি পাখির মূর্তি বানানো হবে। পূজা করা হবে তাদের।


হিসেব মত সব হল। নানা উপাচারে পূজাপাঠ হল। আমাদের মনে হল দেবতারা প্রীত হয়েছেন। কেননা পূজার পর মাটির তিনটি পাখি পূজা প্রাঙ্গন থেকে ডানা মেলে  উড়ে গেল। তখন আমরা বুঝলুম, উদ্দেশ্য সফল। এখন বানের গতি কোথায়, তা দেখা যেতে পারে।


কিন্তু আমাদের অবাক হওয়ার তখনো বাকি ছিল। মাঠের ধারে সকলে গিয়ে দেখি বান সেখানেই আটকে আছে। দেখে গ্রামবাসী খুশি হল। এবার একটু বান দেখা যাক—এই ভেবে গ্রামবাসীরা যত এগোয় তত অবাক। যে স্রোতটা আতকে আছে জমির কিনারে সেটা ঠিক স্রোত নয়, জেলির মত জমাট। সকলে আবার নতুন করে ভয় পেল। বাবুলাল ছুটল আমাদের বাড়ির দিকে। নিতাইয়ের ছেলের ভ্যানে ঠাকুমাকে চাপিয়ে আনা হল। জলের স্রোত কিসের জেলিতে রূপান্তরিত হল, তা দেখার জন্য।


হল কি, ভ্যানে চেপে যত এগোয় ঠাকুমা, চিৎকার করতে থাকে। আমরা কেউই কিছু বুঝতে পারছি না। কিন্তু চিৎকার শুনে বুঝছে সবাই, এ হল খুশির চিৎকার। থকথকে জমাট বাঁধা জলরঙ্গের জেলি দেখে এত চিৎকারের আছে কি?


ঠাকুমা বললে, ‘বুঝলি না? ওটা আসলে বান নয়, জেলিও নয়। এ হল ভুলে যাওয়া  মানুষদের প্রবাহ। আসলে তোরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের মুখ মনে রাখিস নি বলেই কাউকে চিনতে পারিসনি।’


বড়চৌঘরার একদল বলে, ‘ওরা কি চায়?’ মুকুন্দপুর গ্রামের লোক বলে, ‘ওরা আবার বাস করতে চায় কি?’ ঠাকুমা বলে, ‘সেটা ওরাই বলতে পারবে। আমি জানবে কি করে?’


চাঁদু মুদি বলে, ‘ওর মধ্যে কি আমার মা আছে? মায়ের মুখ তো ভুলিনি। এই সেদিন গত হয়েছে।’ ঠাকুমা বলে, ‘রাধের কথা আর কি বলি বল! সেদিন গত হলেও তাকে তোরা অনেক আগেই ভুলে ছিলি, নইলে হাসপাতালে দিতিস, ঘরে ফেলে রেখে বিনা চিকিতসায় মারতিস না।’


চাঁদু মুদি কোন উত্তর করে না। সুব্রত বলে, ‘বড় মা, কিছু একটা কর। ওই জেলিওলা মানুষের দল, ওদের দেখে খুব অস্বস্তি হচ্ছে।’


খচু বলে, ‘হ্যাঁ বড়মা। গা টা যেন ঘিন ঘিন করে উঠছে। ওরা কি অন্যভাবে আসতে পারত না?’


ঠাকুমা চিৎকার করে বলে, ‘ওদের ভেতর কারা কারা আছে, আমি বলে দিচ্ছি। ঘাটের ধারের দিদি, রোবের মা, ছবির মা, গৌরের ঠাকুমা, বাসন্তী, চাঁদুর ছোট ভাই—যে বহুদিন আগে জমিতে সাপের কামড়ে মারা যায়, মণিশংকরের দাদা—যে চৌদ্দ বছর বয়সে পুকুর কাটতে গিয়ে পা কেটে সেপটিক হয়ে মারা যায়। ওঃ, কত সব গল্প করেছি রে ঘাটের ধারের দিদির সংগে—কিরে ফেলু, ঐ যে দূরে তোর মা, চোখের মাথা খেয়ে তাকে চিনতে পারিস? না। ওই দেখ—যাকে তোরা, প্রগতি সংঘের কেলাবের ছেলেরা ফুলুরি বলে খ্যাপাতিস, সকলে যখন চলে গেল, ওই ছিল আমার গল্প করার সাথী। সেও আজ জেলি হয়ে গেছে। সকলে তাদের বংশধরদের দেখতে এসেছে।’


বাবুলাল বলল, ‘তুমি ওদের সকলেই চলে যেতে বল বড়মা।’


মুকুন্দপুরের লোক বলল, ‘কিন্তু এখান থেকে বললে কি ওরা শুনতে পাবে?’


বড়চৌঘরার লোক বলল, ‘তবে কাছে যাও। গিয়ে জিঞ্জাসা কর, তিনটি গ্রামের ভেতর এই তিন মাঠের ব্যবধান কেন।’


এই শুনে ঠাকুমা ভ্যান থেকে নেমে পড়ে লাফ দিয়ে। নেমে গটগট করে চলে যেতে থাকে মাঠের ওই জেলির দিকে। সকলে অবাক হতে ভুলে যায়। কারণ এক বছর হল ঠাকুমা বিছানায় প্রায় শয্যাশায়ী। ধরে ধরে কেবল বাথরুম টুকু যেতে পারে। কতদিন পর যে ঠাকুমা হাঁটাচলা করছে!


আমরা কেউ এগোই না। একাকী হেঁটে গিয়ে ঠাকুমা দূর দিগন্তের কোণের কাছে পৌঁছে পাখি হয়ে যায়। তারপর উড়তে থাকে। সেই উড়ন্ত সাদা পাখি ওই জেলিদের তাড়িয়ে মাঠ ফাঁকা করে দেবে কখন—সেই প্রতীক্ষাতেই আমরা সকলে দন্ডায়মান।


আরও পড়ুন- অসমাপ্ত গল্প