নিজস্ব প্রতিবেদন: বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের বাণী দিয়েই বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশ্বভারতীর স্তুতি ঝরে পড়ে তাঁর গলায়। তিনি বলেন, বিশ্বভারতীর দেখানো পথেই ভারত বিশ্বমঞ্চে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বক্তব্যের শেষের দিকে এসে মোদী গুজরাটের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিবিড় যোগাযোগের কথা বলেন। বলেন রবীন্দ্রনাথের দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (যাঁকে মোদী 'বড়দা' বলে উল্লেখ করেন, যদিও প্রকৃতপক্ষে তিনি রবীন্দ্রনাথের 'মেজদা') গুজরাট-যোগের কথাও। তাঁর কথায় আসে 'ক্ষুধিত পাষাণ' গল্পটির প্রসঙ্গ। রবীন্দ্রনাথকে পাথেয় করে আগামীদিনে বিশ্বভারতী থেকে শিক্ষা নিয়েই চলবে দেশ, এই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই সমাপ্ত হয় তাঁর বক্তব্য।


প্রসঙ্গত, 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' প্রসঙ্গেই মোদী রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের পরিবারের গুজরাট-যোগের কথা বলেন। গুজরাট-যোগের কথা বলতে গিয়ে মোদী শাড়ি পরার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনীদেবীর কথা বলেন তিনি। বলেন, জ্ঞানদানন্দিনী গুজরাটি মহিলাদের থেকেই নতুন ধাঁচের শাড়ি পড়া শিখে তা প্রথমে তাঁর পরিবারে প্রচলন করেন। এবং ক্রমে তা বাঙালির নিজস্ব শাড়ি পড়ার ধাঁচে পরিণত হয়। 


Also Read: এটা ট্র্যাডিশন ছিল না; কিন্তু অশিষ্ট কোন্দলই এখন বাংলার রাজনৈতিক বিতণ্ডার ট্যাগমার্ক


কিন্তু গুজরাটি মহিলাদের থেকে শাড়ি পড়ার ধরন ধার করা বিষয়ে যে তথ্য মোদী দিয়েছেন তা নিয়ে  বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ব্রাত্য বসু এক সাংবাদিক বৈঠকে বাঙালি মহিলার শাড়ি-পরার স্টাইল প্রসঙ্গে মোদীর তথ্যকে ভ্রান্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি পরিষ্কার বলেন, মোদী এ ক্ষেত্রে আংশিক সত্য বলেছেন। শাড়ির নতুন ধরন জ্ঞানদানন্দিনী গুজরাটি ধাঁচ থেকেও যেমন অনুকরণ করেছিলেন, তেমনই আবার পার্সি মহিলাদের থেকেও শিখেছিলেন। এ ক্ষেত্রে শুধু গুজরাটের কথা বললে ঠিক বলা হয় না। 


এ তো গেল রাজনৈতিক মঞ্চের যুক্তি-তর্ক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কী বলছেন গবেষকেরা? চিত্রা দেব তাঁর 'ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল' বইতে লিখছেন, ''জ্ঞানদানন্দিনী বাঙালি মেয়েদের দিলেন একটি রুচিশোভন সাজ। অবশ্য দেশী ধাঁচে পরা যে খারাপ ছিল তা নয়, তবে তাতে সৌষ্ঠব ছিল না। বোম্বাইয়ে গিয়ে  তিনি প্রথমেই জবরজং ওরিয়েন্টাল ড্রেস বর্জন করে পার্শী মেয়েদের শাড়ি পরার মিষ্টি ছিমছাম ধরনটি গ্রহণ করেন। নিজের পছন্দমতো  একটু অদল-বদল করে জ্ঞানদানন্দিনী এই পদ্ধতিটাকেই বজায় রাখলেন।.....বোম্বাই থেকে আনা বলে ঠাকুরবাড়িতে এই শাড়ি পরার ঢংয়ের নাম ছিল 'বোম্বাই দস্তুর' কিন্তু বাংলাদেশে তার নাম হল 'ঠাকুরবাড়ির শাড়ি'।''


দেখা যাচ্ছে চিত্রার বর্ণনায় গুজরাটের কোনও প্রসঙ্গই নেই। 


কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কী বলছেন শহরের রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ, রবীন্দ্রপ্রেমী, পোশাকবিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী মহল?  


'শ্রাবস্তী'র কর্ণধার চৈতালি দাশগুপ্ত বলছেন, ''আসলে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন গুজরাটে ছিলেন। সেই সময়টাতেই জ্ঞানদানন্দিনী এই শাড়ির ধরন নিয়ে ভাবেন। তিনি পার্শি মহিলাদের থেকেই নতুন ধাঁচের শাড়ি পরার ধরনটি ধার করেন। পরে অবশ্য সেটি কলকাতার ব্রাহ্মমহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। এবং নতুন এই ধাঁচটি 'ব্রাহ্মিকা ধরনের শাড়ি' হিসাবেও পরিচিতি পায়।''


বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিকও। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সরবরাহ করা তথ্যকে 'অর্ধসত্য' উল্লেখ করে বলেন, ''সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বম্বে প্রেসিডেন্সিতে আইসিএস। জ্ঞানদানন্দিনীও সেখানে। তিনি সেখানকার মহিলাদের থেকেই শাড়ি পরার ধরনটি নিয়েছিলেন। সেখানে তখন পার্শি মহিলাদেরই বসবাস। তিনি শাড়ি পরার যে ধাঁচ চালু করেন, তার সঙ্গে গুজরাটি মহিলাদের শাড়ি পরার খুব একটা মিল আছে, তা বলতে পারব না। বম্বে প্রেসিডেন্সিতে গুজরাটি মহিলারাও ছিলেন। সে দিক থেকে দেখতে গেলে প্রধানমন্ত্রী যা বুঝেছেন সেটাই বলেছেন। কথাটা হয়তো পুরোপুরি মিথ্যে নয়, তবে শাড়ি পরার স্টাইলটা ঠিক গুজরাটি স্টাইল বলব না।''   


Also Read: জনগণমন-প্রশ্নে সুব্রহ্মণ্যমকে ধিক্কার জয়ের, কমলেশ্বর তুললেন সংস্কৃতির রাজনীতির কথা