অঞ্জন রায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সালটা ২০১৫। নভেম্বর মাসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হলে রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা দিলীপ ঘোষ। অভিষেকের দিন সভাপতির জন্য বরাদ্দ ঘর বন্ধ থাকায় বসার চেয়ার পর্যন্ত পাননি। ৪ বছরে সেই দিলীপ ঘোষই হয়ে উঠেছেন রাজ্য বিজেপির মুখ। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ৬, মুরলিধর সেন লেন থেকে দিলীপ পদ্মপতাকাকে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলার প্রতিটি প্রান্তে। ঘনঘন ছুটে গিয়েছেন জেলায়। আর তার সাক্ষ্য দিচ্ছে দিলীপের গাড়ির পথচলা।                            


বাংলায় একটা সময়ে বিজেপি মানে ছিল বড়বাজারে দল। অবাঙালিদের একটা সংগঠন। তৃণমূল নেত্রীর এনডিএর সঙ্গে জোটের পর রাজ্যে হালে পানে পেয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু সেভাবে কল্কে পায়নি গেরুয়া শিবির। সভা তো দূর, পতাকা, ফেস্টুন টাঙানোর লোক ছিল না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ থাকত সাংবাদিক বৈঠকেই। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপ ঘোষের নামে শিলমোহর দেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপির অন্দরেই তাঁকে নিয়ে ছিল একটা কিন্তু কিন্তু! সভাপতি হওয়ার বছরখানেক আগেও তো আন্দামানে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কাজ করতেন। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ব্যক্তি কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজনৈতিক-সচেতন রাজ্যে এঁটে উঠতে পারবেন? প্রশ্ন উঠেছিল দলের অন্দরেই। 



দিলীপ ঘোষ এসব ব্যাপারে একেবারে সপাট জবাব দেওয়ায় বিশ্বাসী। নিজেই বহুবার জানিয়েছেন, রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু সেই দিলীপের ছোঁয়াতেই বড়বাজারের গণ্ডির বাইরে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে লাগল বিজেপি। মাঠে-ময়দানে নেমে জেলায় জেলায় সংগঠনকে পৌঁছে দিয়েছেন দিলীপ। তার জ্বলন্ত প্রমাণ দিলীপের গাড়িটি। সভাপতি হওয়ার পর দলের তরফে মেলে একটি সাদা গাড়ি। ওই গাড়িটির পথচলা যেন রাজ্য বিজেপির উত্থানের সঙ্গে বেশ প্রতীকী। গত সাড়ে ৩ বছরে গাড়িটি চলেছে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার কিলোমিটার। এর মাঝে দিলীপ দিল্লিতেও উড়ে গিয়েছেন বহুবার। তখন সেটি পড়ে থেকেছে গ্যারেজে। দিলীপবাবুর গাড়ির চালক গোড়া বারিক জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালকে জানালেন, গাড়িটির উপরে কম অত্যাচার হয়নি! পাঁচবার হামলার মুখেও পড়তে হয়েছে।  



রাজনীতিতে নবাগত দিলীপের নির্বাচনী সাফল্যও বেশ চমকপ্রদ। খড়্গপুরে বিধানসভা ভোটে প্রথমবার দাঁড়িয়েই হেভিওয়েট কংগ্রেস প্রার্থী জ্ঞান সিং সোহন পালকে মাত দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। লোকসভাতেও অভিষেকেই মেদিনীপুরে পোড়খাওয়া রাজনীতিক মানস ভুঁইয়াকে মাত দিয়েছেন। 



তবে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি দিলীপকে। কখনও বলেছেন, মারব এখানে লাশ পড়বে যেখানে-সেখানে। কখনও বলেছেন, পিঠের চামড়া তুলে নেব। বাংলার রাজনীতিতে দিলীপের এমন 'ভাষাচর্চা' নিয়ে হয়েছে প্রবল সমালোচনা। কিন্তু দিলীপ বদলাননি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি প্রায়শই ঘনিষ্ঠমহলে বলে থাকেন, এটা তাঁর রাজনৈতিক কৌশলেরই অঙ্গ। এমন গরম গরম কথা বলেন বলেই তো মিডিয়া দেখায়। এতে তো দলেরই লাভ। শহুরে পরিশীলিত পরিবেশে থেকে দিলীপের কৌশল উপলব্ধি করা দুঃসাধ্য। তাঁর মেঠো ভাষা কিন্তু গ্রামগঞ্জে 'ভোকাল টনিকের' মতো কাজ করে। ক'বছরেই ফ্যান-ফলোয়ার তৈরি করে ফেলেছেন দিলীপ ঘোষ। সে সমালোচনা হোক বা প্রশংসা, দিলীপ পেরেছেন টিভি চ্যানেলের সান্ধ্য বিতর্কে বিজেপিকে আনতে। ক্রিকেট লিখিয়েদের গুরু নেভিল কার্ডাস বলতেন, 'পরিসংখ্যান একটা গাধা।' কিন্তু রাজনীতিতে সংখ্যাটাই যে সব। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ১৮টি আসন বলে দিচ্ছে সভাপতি হিসেবে দিলীপ ও তাঁর গাড়ির পথচলা গন্তব্যে কত দূর পৌঁছতে পেরেছে!


 আরও পড়ুন- ছুটিতে কোথায় গিয়েছেন রাজীব কুমার? ডিজি-কে দেওয়া চিঠিতে জানতে চাইল সিবিআই