কমলিকা সেনগুপ্ত ও সৌরভ পাল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ডিজিটাল কনক্লেভ, গোদা বাংলায় যাকে বলা যায় সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আলোচনা চক্র। ১০ সেপ্টেম্বর ‘ডিজিটাল দুনিয়া’ নিয়ে এমনই এক আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। যার প্রধান বক্তা  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই সভায় শ্রোতা হিসেবে আমন্ত্রিতরা হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দলের বর্ষীয়ান এবং প্রবীণ নেতারা। এটা নিশ্চয়ই আর আলাদা করে বুঝিয়ে দিতে দিতে হবে না, তৃণমূলের ডিজিটাল কনক্লেভ-এ নবীনের থেকেই শিখবে প্রবীণরা। বাংলায় রাজনৈতিক শিবিরে এমন উদ্যোগ প্রথম বার হতে চলেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।


ভারত এর আগে পেশাদার সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার দিয়ে ভোট পরিচালনা করার ছবি দেখেছে। এই কথা গেরুয়া শিবিরের ঘরের লোকেরাও অস্বীকার করবে না, ২০১৩ সালে বিজেপির ক্ষমতায় আসার নেপথ্যে ছিলেন প্রশান্ত কিশোর নামের এক মিডিয়া প্রফেশনাল।  সেই প্রশান্ত কিশোরই আবার বিহার বিধানসভা ভোটে লালু-নীতিশের নির্বাচনী প্রচার এবং মিডিয়া সেল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। ফলে যেটা হল, যে বিজেপি-কে দেশের ক্ষমতায় বসাতে জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর, সেই তিনিই বিজেপির হাত থেকে কেড়ে নিলেন বিহার। যদিও লালু-নীতিশের জোট সেখানে ছিল একটা বড় ফ্যাক্টর। মাঝে শোনা যাচ্ছিল এই প্রশান্ত কিশোরই না কি কাজ করবেন তৃণমূলের হয়েও।


তবে, এই সময়ে তৃণমূল যে লক্ষ্য নিয়ে ডিজিটাল কনক্লেভ করছে, তাকে নজিরবিহীন বলতেই হবে। আগামী দিনে দেশে নেতৃত্ব দিতে হলে যে প্রত্যেক জননেতাকেই  অতি আবশ্যিক ভাবে ‘ফেসবুক, টুইটারের অ-আ-ক-খ’ শিখে নিতে হবে তা আগেই বুঝেছে অভিষেক ব্রিগেড। রাজনৈতিক ময়দান ‘সোশ্যাল’ যে কেবল সামাজিক অর্থে নয় বরং আরও বেশি ‘ভার্চুয়াল অস্তিত্বকেও’ জাহির করা, সে কথাই বলতে চাইছে তৃণমূল যুবরা। অর্থাত্ আরও বেশি করে ফেসবুক, টুইটারে সক্রিয় থাকা, আরও বেশি করে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নিজের অস্তিত্ব প্রকট করা এবং সেটা অবশ্যই পেশাদার ভাবে- এই লক্ষ্য নিয়েই ১০ সেপ্টেম্বর মিডিয়া কনক্লেভ করছে তৃণমূল।


 



মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, অভিষেক ছাড়া দলের আর কেউ সে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় নন। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে, টুইটারে প্রোফাইল আছে অথচ কোনও অ্যাক্টিভিটি নেই নেতাদের।


যেমন আইনজীবী তথা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইটার ফোলো করলে বোঝা যায়, তাঁর শেষ টুইট ছিল ২০১৪  সালে। পাসওয়ার্ডটাও এখন আর মনে নেই তাঁর। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো বর্ষীয়ান নেতারা তো এখনও বুঝেই উঠতে পারেননি টুইটার কী? খায় না মাথায় দেয়! তবে তাঁরা আগ্রহী নতুনদের থেকে নতুন কিছু শিখতে চান রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী।



তাই এই মিডিয়া কনক্লেভ থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আয়ত্ত করতে আগ্রহী সুব্রত-পার্থরা। যুবদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাসের মতো হাই প্রোফাইল নেতামন্ত্রীরাও।


এবার প্রশ্ন কেন এই ডিজিটাল কনক্লেভ?


উত্তরে না গিয়ে কয়েকটা তথ্য দিলেই বিষয়টা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে হয়ে যাবে।  


এক- ২০১৫ সালে নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। ২০০৩, ২০০৭, ২০১১ সালে পরপর হার, অবশেষে মুহম্মদ বুহারি জয় পেয়েছিলেন ২০১৫ সালে। বলা হয়, আফ্রিকার সর্ববৃহত্ দেশ নাইজেরিয়ায় প্রাক্তন সেনা আধিকারিকের জয়ের নেপথ্য ছিল ভার্চুয়াল প্রচার।  


দুই- ২০১৭ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সোশ্যাল মাধ্যমকে হাতিয়ার করে মার্কিন মুলুকে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে তাঁর পক্ষেই রায় দেন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। বুথ ফেরত সমীক্ষায় এগিয়ে থাকলেও হার হয় হিলারির। পরবর্তীকালে অভিযোগ ওঠে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সোশ্যাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে রাশিয়া।


তিন- প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিশ্বের জনপ্রিয় টুইটার হ্যান্ডেলগুলোর একটি। ২০১২ সালের নির্বাচনে এই মার্কিন রাষ্ট্রপতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেছিলেন ৫০ কোটি টাকা। যার ফলও পেয়েছেন হাতে নাতে। দ্বিতীয়বার মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।


চার- ঘানার মতো দেশেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল সোশ্যাল মিডিয়া।  ইতিহাসে প্রথমবার, একনায়ক শাসককে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন নানা আকুফো আদো (২০০৮)। ২০১৬ সালে তাঁর সোশ্যাল প্রচার এতটাই নিবিড় ছিল যে, মোট ভোটের ৯৪.৩৫ শতাংশই গিয়েছিল তাঁর পক্ষে।


পাঁচ- জনসংযোগে  ডিজিটালের ব্যবহার এ দেশেও শীর্ষে পৌঁছয় ২০১৪-র লোকসভার নির্বাচনে। সৌজন্যে অবশ্যই নরেন্দ্র মোদীর নাম প্রথমে উঠে আসবে। শুধুই তাঁর রাজনৈতিক ভাষণ নয়, প্রধানমন্ত্রী পদে যখন অন্যতম দাবিদার হিসাবে তাঁর নাম উঠে আসে, তখন থেকেই সোশ্যাল মাধ্যমে ‘মোদী মুখ’ প্রকট হয়। জনসংযোগে তাঁর ডিজিটাল প্যাকেজ অনেকটাই পিছনে ফেলে দেয় বিরোধীদের। পাশাপাশি বিজেপির আইটি সেলর ভূমিকাও চোখে পড়ার মতো। 


সুতরাং, এই মাধ্যমকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে যে ফসল উঠবে তা ভাল করেই বুঝেছে তৃণমূল। আর সেই মতো, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে ‘সোশ্যাল অস্ত্রে’  শান দিতেই মরিয়া তৃণমূলের উত্তরসূরিরা।