একুশের চ্যালেঞ্জ জিতে আজ ২৮-র একুশে ২৪-র লক্ষ্যে Mamata
১৯৯৩-র ২১ শে জুলাই। নো-কার্ড-নো ভোটের দাবি নিয়ে মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তত্কালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী।
নিজস্ব প্রতিবেদন: কারও মতে, পরিবর্তনের ২১ শে জুলাই। কারও কাছে আবার ২১ শে জুলাই একটা ইতিহাস। নো কার্ড-নো ভোট অর্থাত্ সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া ভোট নয়, এই দাবিকে সামনে রেখেই ১৯৯৩-র ২১ শে জুলাই মহাকরণ অভিযান করে যুব কংগ্রেস। সেই অভিযান ঘিরে রক্তাক্ত হয় কলকাতা। সেই স্মৃতি বুকে নিয়েই ২৮ বছর। এর মধ্যে বদলে গিয়েছে বাংলার রাজনীতির চালচিত্র। তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী আজ মুখ্যমন্ত্রী। একুশে বিজেপিকে মাত দিয়ে তাঁর লক্ষ্য এবার ২০২৪। আর সেই লক্ষ্যেই একুশ হতে চলেছে অনুঘটক।
১৯৯৩-র ২১ শে জুলাই। নো-কার্ড-নো ভোটের দাবি নিয়ে মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তত্কালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী। যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানে গুলি চালায় পুলিস। গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। সবকিছু যদি ঠিকঠাক চলত, ২১ শে জুলাইয়ের ইতিহাসটা বোধহয় অন্যরকম হত। মহাকরণ অভিযানকে সামনে রেখে আন্দোলন পরিকল্পনা তৈরি করেছিল যুব কংগ্রেস নেতৃত্ব। শহরের ৬টি জায়গায় মঞ্চ বাঁধার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয় - মেয়ো রোড, ব্রেবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, বউবাজার, ধর্মতলা ও ফিয়ার্স লেন। তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী মেয়ো রোড দিয়ে যাতায়াত করতেন। তাই ওখানে মঞ্চ বাঁধার অনুমতি দেয়নি পুলিস। সেই মেয়ো রোডে জমায়েত নিয়েই পুলিসের সঙ্গে যুব কংগ্রেস কর্মীদের গণ্ডগোল শুরু। ব্রাবোর্ন রোডে যাওয়ার পথেই সৌগত রায়ের সঙ্গে দেখা। 'পুলিস যুব কংগ্রেসের মঞ্চ ভেঙে দিচ্ছে'। সৌগত রায়ের থেকে সেই কথা শুনে ব্রেবোর্ন রোডের দিকে হাঁটা শুরু করেন মমতা। আজকের তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গীরা জানান, লালবাজার যাওয়ার পথে গাড়িতে জ্ঞান ফেরে তত্কালীন যুব কংগ্রেস নেত্রীর। উত্তেজিত মমতা জোর করে গাড়ি থেকে নেমে মেয়ো রোডে যাচ্ছিলেন। যুব নেত্রীর শারীরিক অবস্থার দিকে তাকিয়ে খবরের কাগজের গাড়িতে পাঠানো হয় এসএসকেএমে। তার আগেই মেয়ো রোড ও ব্রেবোর্ন রোডে গুলি চলেছে। সেই গুলিতে প্রাণ গিয়েছে ১৩ জনের। ইতিহাসে ঢুকে পড়েছে ২১ জুলাই।
আরও একটা একুশ। এবার একুশের বিধানসভা ভোট। সাম্প্রতিককালে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাজ্য জয়ে মরিয়া বিজেপি (BJP)। ঘনঘন এসেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভোটের ফলে ঐতিহাসিক জয়। তৃতীয় বারের জন্য মসনদে নেত্রী। করোনা আবহে জমায়েতের বদলে একুশে জুলাই ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। ২৮ বছরে পা দেওয়া একুশে জুলাইয়ের লক্ষ্য ২০২৪। লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করেই জাতীয় স্তরে একুশের শহিদ স্মরণের উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল (TMC)।
আরও পড়ুন- সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম শিশুরা, আগে প্রাথমিক স্কুল খোলার পক্ষে সওয়াল ICMR-র
একুশের বিধানসভায় দুশো পার হবে। ভোটপ্রচারে রাজ্যে এসে লাগাতার এমন দাবি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। তৃণমূলের পতন হবেই, বাংলায় এসে এমন হুঙ্কারও দিয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথরা। এবার ২৪-র লক্ষ্যে মোদী-শাহ-আদিত্যনাথের গড়ে একুশে জুলাই পালন করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চাইছে তৃণমূল (TMC)। দিল্লির পাশাপাশি গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরা, অসম, পঞ্জাব, তামিলনাড়ুতেও একুশের ভার্চুয়াল সভা হতে চলেছে। দিল্লির ঐতিহাসিক কনস্টিটিউশন হলের জায়েন্ট স্ক্রিনে মমতার বক্তব্য শোনানো হবে। সাউথ অ্যাভিনিউতে দলের পার্টি অফিসের বাইরে তৃণমূলের শহিদ দিবস পালন করা হবে। গুজরাতের ৩২ জেলায় পালিত হবে ২১ জুলাই। গুজরাতের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের লখনউতে একুশের প্রস্তুতি তুঙ্গে। দলীয় অফিসে ভার্চুয়াল ভাষণ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- 'আমার ফোনও বহুদিন ধরে ট্যাপ হচ্ছে,' সুদীপদের সতর্ক থাকার পরামর্শ Mamata-র
ইতিমধ্যেই বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই হ্যাশট্যাগে মমতার সমর্থনে সোশ্যাল সাইটে ক্যাম্পেন করেছে তৃণমূল। মূল্যবৃদ্ধি হোক বা ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ইস্যু। জাতীয় স্তরে মোদী বিরোধিতার সুর সপ্তমে করার কোনও কসুর রাখছে না ঘাসফুল শিবির। রাজধানীর একুশে পালনে বিরোধীদের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ডেরেক ও ব্রায়েন। মমতার দিল্লির ভার্চুয়াল সভা নিয়ে পাল্টা দিগ্বিজয় সিংরাও সদর্থক ইঙ্গিত দিয়েছেন সোশ্যাল সাইটে। সব মিলিয়ে ২০২৪-র লক্ষ্যে জাতীয় স্তরে মোদী বিরোধীতার প্রধান মুখ হিসেবে মমতাকে তুলে ধরতে সক্রিয় টিম তৃণমূল। আর তা একুশে জুলাইকে সামনে রেখেই।
আরও পড়ুন- ডিসেম্বরের মধ্যে কত টিকা? উত্তর না মেলায় ওয়াকআউট TMC-র, মমতার থেকে শেখার পরামর্শ