ওয়েব ডেস্ক: ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার। কার্যত এমনই অবস্থা এরাজ্যে দমকলের। লোকের প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। কিন্তু হাতে অস্ত্রই নেই। যেটুকু আছে, তাও মান্ধাতা আমলের। তাতে নিজেরই প্রাণ বাঁচে কিনা সন্দেহ! বড়বাজারের অগ্নিকাণ্ড আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, নন্দরাম মার্কেট-স্টিফেন কোর্ট থেকেও কোনও শিক্ষাই নেয়নি রাজ্য।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দোতলার কার্নিশের উচ্চতা ১৪-১৫ ফুট। কার্নিশ থেকে এভাবেই উদ্ধার বাসিন্দাদের। হাইড্রলিক ল্যাডারের বালাই নেই। কার্নিশে পা দিয়ে এগিয়ে চলা। প্রাণ হাতে আগুন পার। এককথায় ভয়ঙ্কর। বড়বাজারে আগুনে আটক বাসিন্দাদের উদ্ধার-অভিযান চলল এভাবেই। কাজ করতে গিয়ে কার্যত নাকানিচোবানি দশা দমকলের।


বড়বাজার চত্বরে সরু গলিতে ঢুকতে পারেনি হাইড্রলিক ল্যাডার। ফলে কার্যত হাতে ধরে সরাতে হয় বাসিন্দাদের। গোটা বাড়ি তখন জ্বলছে। জানালা দিয়ে বেরিয়ে, বাইরে কার্নিশে পা রেখে এক পা এক পা করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আটকে পড়া মানুষদের। একটু এধার-ওধার মানেই বিপদ।


মৃত্যু মাথায় নিয়ে, এভাবে চলে বিপজ্জনক পারাপার। এমনকি এরই মধ্যে LPG সিলিন্ডার পর্যন্ত পার করানো হয়। কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা?  দমকলের হাত ততই শক্ত, যত আধুনিক ব্যবস্থা। স্কাই লিফটের মাধ্যমে যেমন উঁচু বাড়ির আগুন নেভানো সহজ, তেমনি আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধারেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এরপরই আসে জাম্পিং শ্যুটের কথা। এর মাধ্যমেও বহুতল থেকে আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার একেবারেই সেফ অ্যান্ড সাউন্ড।


এর বাইরে রয়েছে, জাম্পিং কুশনও। আগুন লাগলে নিচে নামার উপায় নেই? সব পথ বন্ধ? ওপর থেকে সটান লাফ জাম্পিং কুশনে। এত সব উপায় রয়েছে হাতে। কিন্তু রাজ্যে দমকলের নিজের হালই বেহাল। হাতেগরম প্রমাণ, বড়বাজার অগ্নিকাণ্ড। দমকল বিভাগের হাতে হাইড্রলিক ল্যাডার রয়েছে ছটি। বড়বাজারে পৌছেও ঢুকতে পারেনি সেই ল্যাডার। কারণ, সরু রাস্তায় ল্যাডার ঢোকা-রাখার কোনও উপায়ই নেই। ল্যাডারের অভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করা হয় স্থানীয়দের। হাইড্রলিক ল্যাডার ছাড়া আগুন নেভাতেও সমস্যা হয়।


জাম্পিং শ্যুটের তো দেখাই নেই। স্টিফেন কোর্ট কাণ্ডের পরই জাম্পিং শ্যুট কেনার কথা ওঠে। কিন্তু এতবছরেও তা কেনা হয়ে ওঠেনি। এছাড়াও রয়েছে ফায়ার ফাইটিং স্যুট। দমকলের হেডকোয়ার্টার্সে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফায়ার ফাইটিং স্যুট। কিন্তু অভিযোগ, ফায়ার ফাইটিং স্যুটগুলি সবই মান্ধাতা আমলের। তা পড়ে কাজ করাও মুশকিল।


দমকল কর্মীদের জন্য ফায়ার মাস্ক? নাহ, তাও অমিল। দমবন্ধ পরিস্থিতিতে, ধোঁয়ায় শ্বাস আটকে গেলেও, চালিয়ে যেতে হল লড়াই। মান্ধাতা আমলের পরিকাঠামো নিয়ে এভাবে আর কতদিন? প্রাণ নিয়ে যেখানে টানাটানি, সেখানে কেন এত অবহেলা?