নিজস্ব প্রতিবেদন: রাত পোহালেই হাই ভোল্টেজ উপ-নির্বাচন ভবানীপুর কেন্দ্রে। কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হচ্ছে সম্পূর্ণ বিধানসভা অঞ্চলকে। ৩৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সহ লালবাজারের আধিকারিকদের নজর ভবানীপুরের প্রতিটি কোনায়। সাধারণ মানুষের ভোটদানকে নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছেন আধিকারিকরা। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন শহর। উপ-নির্বাচনের আগেরদিন জলে ডুবে ভবানীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল। এই অবস্থায় কতটা বুথ-মুখি হবে জনতা সেটাই এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সব রাজনৈতিক দলের কপালে।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পশ্চিমবঙ্গের ভোটদানের হার সাধারণত অন্যান্য অনেক রাজ্যের তুলনায় প্রতিবারই বেশি থাকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুরে ভোটদানের চিত্রটা অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় একটু আলাদা। প্রতি নির্বাচনেই শহরের অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় ভবানীপুরে ভোটদানের হার তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ২০১১ সালে বাম (Left Front) সরকারের পতন ঘটিয়ে যখন তৃণমূল (TMC) ক্ষমতা দখল করে, সেই বছর এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সী। ২০১১ সালে ভবানীপুরে ভোটদানের হার ছিল ৬৩.৭৮ শতাংশ এবং এর মধ্যে সুব্রত বক্সী পেয়েছিলেন ৮৭,৯০৩টি ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাম প্রার্থীর সঙ্গে তার ভোটের ফারাক ছিল ৩৬.৮ শতাংশ। সরকার গঠনের পরে ভবানীপুরে উপ-নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু উপ-নির্বাচনে ভবানীপুরের আরও কম মানুষ বুথ-মুখি হন। উপনির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল মাত্র ৪৪.৭৩ শতাংশ। কয়েকমাস আগে হয়ে যাওয়া নির্বাচনের তুলনায় ১৯% কম মানুষ ভোট দেন ভবানীপুরের উপ-নির্বাচনে। যদিও এই ৪৪.৭৩ শতাংশ ভোটের সিংহভাগ অর্থাৎ প্রায় ৭৭.৪৬ শতাংশ ভোট পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী CPI(M)-এর নন্দিনী মুখার্জি পেয়েছিলেন ২০.৪৩ শতাংশ ভোট। কম সংখ্যক মানুষ ভোট দিলেও প্রায় ১২.৬৯ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি পায় তৃণমূলের (TMC)। 


২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালের তুলনায় এই কেন্দ্রে ভোট দানের হার ৩.০৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় তা খুবই কম ছিল। ২০১৬ সালে ভবানীপুরে ভোটদানের হার ছিল ৬৬.৮৩ শতাংশ। এই নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬৫,৫২০ যা মোট ভোটের ৪৮.৫ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের (Congress) দীপা দাশমুন্সি পেয়েছিলেন ৪০,২১৯টি ভোট যা মোট ভোটের ২৯.৮ শতাংশ। এই নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দীর প্রাপ্ত ভোটের পার্থক্য ছিল প্রায় ১৮.৭ শতাংশ।             


২০২১ সালের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্রের পরিবর্তে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হন। ভবানীপুরে তৃণমূলের (TMC) প্রার্থী ছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এই নির্বাচনেও ভোটদানের হার আশানুরূপ ছিলনা। এই নির্বাচনে ভোটদানের হার ২০১১ সালের নির্বাচনের তুলনায় কমে দাঁড়ায় ৬১.৭২ শতাংশতে। এর মধ্যে ৫৮.৪ শতাংশ ভোট তৃণমূল (TMC) পেলেও তৃণমূলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী BJP-র রুদ্রনীল ঘোষ পান ৩৫.৬ শতাংশ ভোট। ২২.৮ শতাংশ ভোটার ব্যবধানে জয়ী হয় তৃণমূল (TMC)।


আরও পড়ুন: By-poll: ভবানীপুরে তুঙ্গে নিরাপত্তা, সতর্ক লালবাজার 


ভবানীপুর কেন্দ্রে কলকাতা পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ড আছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ভোটের ফল অনুযায়ী ৭৪ এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের (TMC) তুলনায় এগিয়ে রয়েছে BJP। ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩১ ভোট এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ২০৯২ ভোটে এগিয়ে রয়েছে তারা। অন্যদিকে BJP-র সঙ্গে তৃণমূলের ২৮,৭১৯ ভোটের যে ব্যবধানের তার মধ্যে প্রায় ২১,৭৭৯ ভোটে তারা এগিয়ে রয়েছে শুধু মাত্র ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে। অর্থাৎ বাকি ৫টি ওয়ার্ড মিলিয়ে মাত্র ৬,৯৪০ ভোট এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল (TMC)।


ভবানীপুরে মোট ভোটার ২,০৬,৩৮৯ জন। এর মধ্যে ৯৫,১৪৩ জন মহিলা ভোটার। অর্থাৎ, মোট ভোটারের প্রায় ৪৬ শতাংশ মহিলা। ২০২১-এর নির্বাচনের হিসাবে মহিলারা বেশিমাত্রায় ভরসা রেখেছেন তৃণমূলের (TMC) উপরে। এছাড়া তৃণমূলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভোটব্যাঙ্ক সংখ্যালঘুরা। ভবানীপুর কেন্দ্রের প্রায় ২০ শতাংশ ভোটার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। এছাড়াও শিখ এবং অবাঙালি হিন্দু ভোটার মোট ভোটারের প্রায় ৩৪ শতাংশ।         


১০ বছর পরে বৃহস্পতিবার আবার হতে চলেছে ভবানীপুরের উপ-নির্বাচন। উপ-নির্বাচনে আবার প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালের বিধানসভায় তৃণমূলের (TMC) ২১৩ জন বিধায়ক নির্বাচিত হলেও ভবানীপুরের উপ-নির্বাচন এবং এই নির্বাচনী ক্ষেত্রে কম ভোটদানের হার চিন্তায় রেখেছে শাসক দলকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রচারে বার বার করে বেশি মাত্রায় মানুষকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।  প্রচারের ক্ষেত্রে মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম এবং অন্যান্য নেতৃত্বকে প্রচারের জন্য এলাকা ভাগ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ, একবালপুর-খিদিরপুর অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। এবারের উপনির্বাচনে এই অঞ্চলের ভোট, মহিলাদের ভোট এবং সার্বিকভাবে বেশিমাত্রায় মানুষের ভোটদানের উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্য।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)