তনুজিৎ দাস: 'পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে, স্যাটেলাইট আর কেবিলের হাতে, ড্রয়িংরুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দি...' 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

........... বাংলা ব্যান্ড 'মহীনের ঘোড়াগুলি'র এই গান আজ অনেক বেশি করে প্রাসঙ্গিক। পৃথিবীটা আজ সত্যিই স্যাটেলাইট, স্মার্টফোন এবং ভিডিও কলে বন্দি। বন্দি দশার যেমন খারাপ, তেমন নাকি ভাল দিকও রয়েছে। কলকাতার এন্টালির বাসিন্দা অশিতিপর  বিমলকুমার নন্দী অন্তত তেমনটাই বলেন। কারণ, স্যাটেলাইট এবং স্মার্টফোনের সাহায্যেই ৫৫ বছর পর তিনি কথা বললেন প্রিয়জনদের সঙ্গে। একাকী বিমলবাবুকে প্রিয়জনদের খোঁজ পেতে সাহায্য করল WEST BENGAL RADIO CLUB (HAM Radio)। ভিডিও কলের সাহায্যে কলকাতা থেকে অসমে বসবাসকারী প্রিয় 'ঝুনু'র পরিবারের সঙ্গে কথা বললেন বিমলবাবু।


বর্তমানে এন্টালির বাড়িতে একাই থাকেন বিমল নন্দী। ২০২০-তে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ৮৮ বছরের বিমলবাবুর এখন নিজের বলতে কেউ নেই। কেউ কেউ আবার থেকেও নেই। তাঁর ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর আগে অন্তত একবার প্রিয় 'ঝুনু'র সঙ্গে কথা বলবেন। আজ থেকে  ৫৫ বছর আগে যাঁর সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল। তারপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। 


'ঝুনু' কে?


ঝুনু, বিমলবাবুর মাসতুতো ভাই। আসল নাম জীবনকুমার বসু। অসমের বাসিন্দা। কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় বিমলবাবুদের এন্টালির বাড়িতে আসাতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে খুব মিলমিশ ছিল, হৃদ্যতা ছিল। কাঁপা কাঁপা গলায় Zee ২৪ ঘণ্টাকে বিমল নন্দী বলেন, "১৯৬৪-র পর থেকে ঝুনুর সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। এদিক থেকে অনেক চিঠি লিখেছিলাম, উত্তর আসেনি। পায়নি বোধ হয়।"   


সেপ্টেম্বরের শুরুর দিক। প্রিয় ভাইয়ের সঙ্গে একবার কথা বলার ইচ্ছে নিয়ে WEST BENGAL RADIO CLUB (HAM Radio)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন একাকী বৃদ্ধ। অল্প যেটুকু কথা মনে ছিল তা জানান। সেই বিন্দু থেকেই সিন্ধু উদ্ধার করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস (Ambarish Nag Biswas) এবং তাঁর দলবল। অসমের রেডিও ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।


তিন দিন পর সেখান থেকে খবর আসে, 'খোঁজ মিলেছে'। কিন্তু বিমলবাবুর প্রিয় 'ঝুনু' আর নেই! তবে তাঁর পরিবারের খোঁজ মিলেছে। তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা দেবী এবং এক মেয়ে রয়েছেন। এরপর, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন  ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্যরা। বিমল নন্দীর সঙ্গে ভিডিও কলে তাঁর ভাইয়ের পরিবারের কথা বলিয়ে দেন রেডিও ক্লাবের সদস্য সোমনাথ স্বর্ণকার। 



৫৫ বছর যোগাযোগ না থাকার দুঃখ মিটে গেল এক লহমায়। প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলে বেজায় খুশি অশিতিপর বিমল নন্দী। ফোনে তিনি বলেন, "খুব ভাল লাগছে। আজ আমি খুব খুশি। শুধু দুঃখ একটাই ঝুনুর সঙ্গে কথা বলা হল না। ও যে নেই আমি জানতামই না।" 



বৃদ্ধের ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে খুশি ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসও (Ambarish Nag Biswas)। বলেন, "জীবনের অন্তিম লগ্নে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রবীণ নাগরিকের ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আগামি দিনেও ওঁর পাশে থাকব।"