৩ বছর ধরে মৃত মায়ের দেহ ফ্রিজারে রেখেছিল ছেলে, কাটা ছিল দেহের বুক থেকে পেট!
ছুদিন আগে বাড়িতে ফ্রিজার দেখে প্রথম সন্দেহটা তাঁদের দানা বাঁধে প্রতিবেশীদের। তবে প্রতিবেশীদের প্রশ্নের উত্তরে গোপালবাবু জানান, ছেলে লেদারের ব্যবসা করেন বলে এই ফ্রিজার কেনা হয়েছে। স
নিজস্ব প্রতিবেদন: সন্দেহটা প্রথম হয় এক প্রতিবেশীর। জানলার পর্দার ফাঁক দিয়ে তিনি দেখেছিলেন, বাড়ির ছেলেকে ফ্রিজ খুলে কিছুতে রাসায়নিক প্রয়োগ করতে। সন্দেহ আরও গাঢ় হয় বাড়িতে ফ্রিজার আসার পর। ওই একটা সূত্রেই ফাঁস হল বেহালার জেমস লং সরণির ভয়াবহ ঘটনা। ফ্রিজার থেকে উদ্ধার বৃদ্ধার অবিকৃত দেহ। অভিযোগ বৃদ্ধার স্বামী-ছেলের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: অফিসের নাম করে ডাক্তারের বাড়ি ভাড়া নিয়েই চলত আসল কাজ
বেহালার জেমস লং সরণিতে ভয়াবহ ঘটনা। দুবছর ধরে ফ্রিজারে বৃদ্ধার অবিকৃত দেহ। রাসায়নিক প্রয়োগ করে দেহ সংরক্ষণ করে রাখার অভিযোগ বৃদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে। পচন এবং গন্ধ ঠেকাতে বুক থেকে পেট পর্যন্ত চিড়ে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হতো বলে অনুমান। গতকাল বাড়ির ভাঙা জানলা দিয়ে রাসায়নিক প্রয়োগ করতে দেখা যায় ছেলেকে। সন্দেহ হওয়ায় এক প্রতিবেশীই খবর দেন বেহালা থানায়। পুলিস গিয়ে তল্লাসিতে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে। বাড়ি থেকে উদ্ধার করে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক। অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করেছে পুলিস।
২৫ এস এন রায় রোডের বাসিন্দা শুভব্রত মজুমদারের মা বীণা মজুমদার ও বাবা গোপাল মজুমদার দুজনই FCI-তে চাকরি করতেন। শুভব্রত লেদার টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর বানতলার একটি বহুজাতিক কারখানায় সিনিয়র অ্যাডভাইজার পদে চাকরি করতেন। কিন্তু পাঁচ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেন। তার অনেক আগে থেকেই অবশ্য পাড়ায় মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: চরমে রাজ্য - রাজ্যপাল সংঘাত, সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে পালটা পার্থ
মৃতার স্বামী গোপাল কয়েকজন প্রতিবেশীকে জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রীয়ের মৃত্যুর কথা। তবে তিনি আরও জানিয়েছিলেন, যেহেতু বীণার মৃত্যু ছেলে মেনে নিতে পারেননি, তাই তাঁর দেহ পিস হাভেনে রাখা রয়েছে।
কিছুদিন আগে বাড়িতে ফ্রিজার দেখে প্রথম সন্দেহটা তাঁদের দানা বাঁধে প্রতিবেশীদের। তবে প্রতিবেশীদের প্রশ্নের উত্তরে গোপালবাবু জানান, ছেলে লেদারের ব্যবসা করেন বলে এই ফ্রিজার কেনা হয়েছে। সন্দেহটা আরও তীব্র হয় কয়েক মাস আগে এক তলায় এসি লাগানোর পর। ভাড়াটে নেই। তবুও এসি কেন লাগল? প্রশ্নটা করতে এবারও বৃদ্ধ একই যুক্তি দেন। তবে সব কিছুই পরিষ্কার হয়ে যায়, ফ্রিজার থেকে দেহ উদ্ধারের পর।
আরও পড়ুন: একই সঙ্গে বিষ খেলেন মা ও দুই ছেলে, যাদবপুরের ঘটনায় সূত্র খুঁজছে পুলিস
জানা যায়, বীণা মজুমদারের মৃত্যু হয় ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে। কিন্তু মায়ের দেহ এত বছর কেন সংরক্ষণ করে রাখলেন শুভব্রত? উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিস সূত্রে খবর, মায়ের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে দীর্ঘ দিন ধরে মায়ের পেনশনের টাকা তুলতেন শুভব্রত। এরপরই প্রশ্নটা জোরালো হচ্ছে, দেহ সংরক্ষণের বিষয়ে কি কিছুই জানতেন না বৃদ্ধার স্বামী? যদি জানতেন, কেন তিনি চুপ করে থাকলেন? তিনিও কি চেয়েছিলেন এভাবেই স্ত্রীর পেনশনের টাকা তুলুক ছেলে? বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে দুটি ফ্রিজার। মাস ছয়েক আগেই আরেকটি ফ্রিজার কেনা হয়। এ ঘটনা সামনে আসতে প্রশ্ন উঠছে, বাবার মৃত্যুর পরও কি তার দেহও সংরক্ষণের কথা ভেবেছিলেন শুভব্রত?