নিজস্ব প্রতিবেদন: গত বেশ কয়েকদিন ধরেই চারটি সংখ্যা এবং একগুচ্ছ শব্দ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভাইরাল। ঝড়ের গতিতে প্রোফাইলে প্রোফাইলে ছড়িয়ে পড়ছে সংখ্যাগুলি। হাজারে হাজারে মিমও তৈরি হয়ে গিয়েছে সেই সংখ্যা ও শব্দবন্ধনী নিয়ে। জানেন কি সেই সংখ্যা? কেনই বা তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল? 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই পর্যন্ত পড়ে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন, ঠিক কোন সংখ্যার কথা বলা হয়েছে এখানে? হ্যাঁ! ঠিকই ধরেছেন-- "১১৭৬ হরেকৃষ্ণ" নিয়েই এখানে কথা বলা হচ্ছে। সংখ্যাটি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে মিমও বেরিয়েছে। নেটিজেনরা সেসব শেয়ারও করে ফেলেছেন নিজেদের প্রোফাইলে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেনও মানুষ পাগলের মতো এই নম্বরের পিছনে দৌড়চ্ছেন?


কেউ কেউ বলছেন, এই নম্বরই নাকি বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। আবার অনেকের মতে, কোভিড পরিস্থিতিতে এই নম্বর আপনার জীবনে নিয়ে আসতে পারে পজিটিভিটি। এমনই নানা মিথ ছড়িয়ে পড়েছে ১১৭৬ সংখ্যাটিকে ঘিরে। অনেকেই নেহাত মজার ছলে মিম বানিয়ে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে পোস্টও করছেন সংখ্যাটি। 


অনেকের মতে এই ১১৭৬ একটি 'অ্যাঞ্জেল' নম্বর। আধুনিক জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, অ্যাঞ্জেল নম্বর সেই তালিকায় পড়ে, যা আওড়ালে মনের কোণে থাকা কোনও ইচ্ছে পূরণ হয়। যদিও, এই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভাবে মানতে নারাজ পুরাণ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, পুরাণে এই ধরনের কোনও সংখ্যাতত্ত্বের কোনও অস্তিত্বই নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোনও নামকে ঘিরে এই ধরনের কিছু বিষয় প্রচলিত থাকলেও, সংখ্যাতত্ত্বের কোনও নিদর্শন পাওয়া যায়নি।


কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে কী এই 'অ্যাঞ্জেল নম্বর'? আমাদের জীবনে তাদের ভূমিকাই বা কী?


জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে বলা হয়, আমাদের জীবনে দু'ধরনের অ্যাঞ্জেলের প্রভাব আছে-- 'আর্চ অ্যাঞ্জেল' এবং 'গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল'। অ্যাঞ্জেলদের পুরুষ বা নারী বলে গণ্য করা হয় না। এরা স্বর্গীয় সত্তা। এদের শরীর জ্যোতি দিয়ে তৈরি। উজ্জ্বল আলোর মতো এরা। দিব্য নিয়মে এরা আমাদের সঙ্গে আমাদের প্রয়োজনে বা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে যোগাযোগ করে থাকে। আমরা ইচ্ছা করলেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। স্বপ্নে বা ধ্যানের মাধ্যমে এদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। তাদের কাছে মন থেকে কিছু প্রার্থনা করলে তা পাওয়া যায়-- এমনটাই জ্যোতিষশাস্ত্রে মনে করা হয়।


সাধারণ ভাবে বলা হয়, পরপর একই নম্বর বসিয়ে এই অ্যাঞ্জেল নম্বর পাওয়া যায়। যেমন ১১, ২২, ৪৪, ৭৭, ১১১, ৩৩৩ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে, যাদের নাম বা জন্মের তারিখ ইংরেজি মাসের ১১, ২২ হয়, তাদের সঙ্গে নাকি অ্যাঞ্জেলের যোগ থাকে! 


সে না হয় হল। কিন্তু এই ১১৭৬ কী? বিষয়টি নিয়ে কী বলছে ইসকন? ইসকন-এর তরফে প্রভু শান্ত গৌরাঙ্গ জানান, তাঁদের কাছে 'হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে'-এর ১৬ অক্ষরের ৩২ (দু'বার) নামই সর্বাগ্রে শ্রদ্ধেয়। ১১৭৬ হরেকৃষ্ণ-র কোনও শাস্ত্রীয় বা পুরাণগত ব্যাখ্যা তাঁদের কাছে নেই। বিষয়টিকে তাঁরা তাই আদৌ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। 


পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী বিষয়টি শুনে প্রাথমিক ভাবে একটু বিরক্তিই প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ''এই '১১৭৬ হরেকৃষ্ণ' অধ্য়ায়টি পুরোটাই মূর্খামিময়। এটা যাঁরা করেছেন, যাঁরা এটা নিয়ে কথা বলছেন, যাঁরা এটা নিয়ে সামান্য সময়ও ব্য়য় করছেন- সকলেই ঘোর মূর্খ। শ্রীচৈতন্যদেব বলেছিলেন, 'খাইতে শুইতে যথা তথা নাম লয়'। ফলে, নামের সঙ্গে ১১৭৬-এর কী সম্পর্ক?''


এ তো গেল বিশেষজ্ঞের বয়ান। এ নিয়ে কী বলছেন সাধারণ মানুষ? তাঁদের একটা অংশে যেমন বেশ একটা বিশ্বাস-বিশ্বাস ভাব রয়েছে, তাঁদের অন্য একটা অংশ রসিকতা করে বলছেন, এই '১১৭৬' সংখ্যাটা অনেকটা ওই অঞ্জন দত্তের 'চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ'-খ্যাত '২৪৪১১৬৯' নম্বরের মতোই রহস্যময়।


তা হলে, আর কী? এবার পাঠক, আপনিই ঠিক করুন, আপনি এক অজানা সংখ্যার রহস্য-রোমাঞ্চে অভিসিঞ্চিত হবেন নাকি, পুরাণ-শাস্ত্রমতে নামসুধার স্বাদ আস্বাদন করেই ক্ষান্ত থাকবেন! ১১৭৬ করে নিজেকে ট্রেন্ডি প্রমাণ করবেন, নাকি ১৬/৩২-এর শাশ্বতেই মজে থাকবেন। এটা সম্পূর্ণ ভাবে আপনার উপরই নির্ভর করছে!


Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 


আরও পড়ুন: #মকরসংক্রান্তি: স্নানের পুণ্যমুহূর্ত আর পার্বণের দীপ্ত উদযাপনে স্মরণীয় এই দিন