Bangabda Row: বাংলা সনের প্রবর্তক গৌড়রাজ শশাঙ্ক? যে যাই বলুক, বঙ্গাব্দ আকবরেরই দান...
Bangabda Row: হিন্দুত্ববাদী নেতারা ইদানীং বলছেন, আকবর বাংলা সাল গণনার রীতি শুরু করেছিলেন এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু নানা কারণে আকবরের পক্ষে বঙ্গাব্দ চালু করা সম্ভব নয়। তাঁরা এর কৃতিত্ব দিচ্ছেন শশাঙ্ককে। কিন্তু প্রকৃত সত্য কী? ইতিহাস কী বলছে?
সৌমিত্র সেন: মুঘল বাদশা আকবর নন, গৌড়রাজ শশাঙ্কই বাংলা সন বা 'বঙ্গাব্দ' প্রবর্তন করেছিলেন-- এই মর্মে গত কয়েক বছর ধরেই জোরালো প্রচার ও 'সচেতনতা অভিযান' শুরু করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ফলে এ নিয়ে একটা ধন্দ তৈরি হয়েছে অনেকের মনে। একদল ভাবছেন, তাঁরা কি তবে এতদিন ভুল জেনে এলেন? অন্য দল আবার বিষয়টি নিয়ে একটু তর্ক-আলোচনার পন্থী। এবারেও বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে এই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। শনিবার, ১৫ এপ্রিল নববর্ষ।
আরও পড়ুন: Charak: চড়ক পুজো কী? নববর্ষের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এই পুজো কোন বিপ্লব ঘটাল?
সংঘের তাত্ত্বিক নেতারা বলে থাকেন, আকবরই বাংলা সাল গণনার রীতি শুরু করেছিলেন এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু নানা কারণে আকবরের পক্ষে বঙ্গাব্দ চালু করা সম্ভব নয়। কারণ, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরীতে বহু সালতামামি থাকলেও সেখানেও বঙ্গাব্দের কোনও উল্লেখ নেই। এই গোষ্ঠীটি আরও বলে থাকে যে, আকবরের জীবদ্দশায় তিনি বাংলার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাননি, ফলে তাঁর পক্ষে বাংলায় একটা নতুন সন চালু করাটা বেশ অস্বাভাবিক।
তা হলে? শশাঙ্কই কি শুরু করেছিলেন বঙ্গাব্দ?
আরও পড়ুন: Gajan Festival: কেন চৈত্র জুড়ে গাজন উৎসব পালিত হয়? কোন রীতিটি গাজনে মানতেই হয়...
বঙ্গাব্দ'র প্রবর্তক হিসেবে হিন্দুত্ববাদীরা অনেকদিন ধরেই গৌড়ের প্রাচীন রাজা শশাঙ্কের কথা বলে আসছেন বটে। যুক্তি হিসেবে তাঁরা ইতিহাসের তথ্যকেই তুলে ধরছেন। তাঁরা বলছেন-- শশাঙ্কের রাজধানী ছিল এখনকার বহরমপুর শহরের কাছে কর্ণসুবর্ণতে। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিকে শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে একজন সামন্ত রাজা। পরে তিনি স্বাধীন ও সার্বভৌম গৌড়ভূমির শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। শশাঙ্ক মারা গিয়েছিলেন ৬৩৭ বা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। এর মোটামুটি ৪৫ বছর আগে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন এবং তখন থেকেই (৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু হয়। এটা ধরে নিলে সাল-তত্ত্বের কচকচিটা অবশ্য অনেকটাই মেটে। কারণ বঙ্গাব্দের সঙ্গে খ্রিস্টীয় অব্দের ব্যবধানও ওই ৫৯৩ বছরই!
না, বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হিসেবে আকবর-শশাঙ্কের বিতর্কের এত সহজ সমাধান হবে না। কেননা, মত, পাল্টা মতের জোয়ার থাকছেই। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন তাঁর একাধিক নিবন্ধে, বক্তৃতায় ও গ্রন্থে মুঘল সম্রাট আকবরকেই বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অমর্ত্য সেনের আগেও, ষাটের দশক নাগাদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ আকবরকেই বঙ্গাব্দের সূচক হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের জন্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-কে সভাপতি করে কমিটি গঠন করেছিল সরকার। সেই কমিটি স্পষ্ট রায় দিয়েছিল, সম্রাট আকবরই খ্রিস্টীয় ১৫৮৫ সালে বঙ্গাব্দের সূচনা করেন।