Gajan Festival: কেন চৈত্র জুড়ে গাজন উৎসব পালিত হয়? কোন রীতিটি গাজনে মানতেই হয়...
Gajan Festival: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পথের পাঁচালী'তে গ্রামবাংলায় গাজন উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামও তাঁর একটি কবিতায় 'গাজনের বাজনা'র কথা লিখেছিলেন। গাজন উৎসবের মধ্যে প্রতিফলিত বাংলার প্রাণ।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গাজন উৎসবের মধ্যে প্রতিফলিত বাংলার প্রাণ, বাংলার ধর্মীয় ও লৌকিক সংস্কৃতি। সাহিত্যেও গাজনের উল্লেখ মেলে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পথের পাঁচালী'তে গ্রামবাংলায় গাজন উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। তিনি লিখেছেন-- 'চড়কের আর বেশি দেরি নাই। বাড়ি বাড়ি গাজনের সন্ন্যাসী নাচিতে বাহির হইয়াছে। দুর্গা ও অপু আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসীদের পিছনে পিছনে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া বেড়াইল।' এবারেও চড়কের আর দেরি তো নেইই, বলতে গেলে এসেই গেল চড়ক। আর এই গোটা চৈত্র জুড়ে চলছে শিবের গাজন।
আরও পড়ুন: Nil Sasthi Festival: কেন নীলপুজো জানেন? এ পুজোয় ছোটখাটো এই নিয়ম না মানলে খুব অসন্তুষ্ট হন শিব...
এ সময়ে গ্রামবাংলার আকাশবাতাস ঢাকের বাজনা আর শিবের নামে সন্ন্যাসীদের গর্জন ও গাজনগীতিতে মুখরিত হয়। গ্রামীণ মানুষজন মেতে ওঠে গাজন উৎসবে। কোথা থেকে এল গাজন শব্দটি? কেউ বলেন, 'গর্জন' শব্দ থেকে 'গাজন' এসেছে। অন্য মত হল, গাঁয়ের মানুষের মানে গাঁয়ের জনের উৎসব, তাই গাঁজন বা গাজন।
আরও পড়ুন: Charak: চড়ক পুজো কী? নববর্ষের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এই পুজো কোন বিপ্লব ঘটাল?
হিন্দু ঐতিহ্য বলে, চৈত্র হল শিব-পার্বতীর বিয়ের মাস। তাই এই মাসেই গাজনের ধুম। গাজনের শেষ দিনের অনুষ্ঠান চড়ক। গ্রামের কৃষক, কারিগর, জেলে, মুচি, বাউরি ও বাগদি সমাজের বিরাট অংশ এ সময়ে শিবের পুজোর অধিকার পান। তাঁরাই গাজন আয়োজন করেন। গাজনকে অনেকে ধর্মঠাকুরের পুজো বলে থাকে।
কলকাতার দুজায়গায় চড়ক-গাজন খুব ভালো ভাবে হয়-- একটি হল উত্তরে ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাজারে, অন্যটি দক্ষিণে কালীঘাট অঞ্চলে। কলকাতার এ দুটি জায়গা ছাড়াও হাওড়ার বাইনান, নদিয়ার শান্তিপুরে এবং বর্ধমানের অম্বিকা কালনাতেও গাজন খুব বর্ণময়।
কলকাতার গাজন-চড়ক নিয়ে হুতোম প্যাঁচার নকশায় উল্লেখ হয়েছে। তারও আগে এর উল্লেখ রয়েছে দেওয়ান রামকমল সেনের লেখায়। এশিয়াটিক সোসাইটির সচিব রামকমল সেন লিখেছেন চড়ক শব্দটি এসেছে চক্র থেকে, যা চক্রাকারে ঘোরে। চড়কগাছে কিন্ত এই বৃত্তকার ঘোরার বিষয়টি রয়েছে।
গাজনের সং খুব বিখ্যাত একটি ব্যাপার। এটি গাজনের বিশেষ রীতি। গাজনে নানা গান গীত হয়। অনেকেই বহুরূপী সেজে নানা গান করেন। চড়কের অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই সব সং-এর গান জুড়ে গিয়ে একটা আলাদা সংস্কৃতি তৈরি করেছে। সব মিলে গাজনের গান-বাজনা বাঙালির লোকসংস্কৃতির সঙ্গে সমাজসংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে গিয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর একটি কবিতায় লিখেছিলেন-- 'গাজনের বাজনা বাজা/কে মালিক, কে সে রাজা/কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?' পরাধীন যুগে বীর যোদ্ধাদের কাছে এই গাজনের গান হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার প্রতীক। গাজনের গান তাই কবির কাছে মুক্তিরই দ্যোতক ছিল।